তথ্যটা চমকে ওঠার মতোই। বিপণিবিতানগুলোর নির্মাণ নকশা অনুমোদন ছাড়া নিশ্চয় নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি? নাকি চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রাণকেন্দ্র শহীদ হাসান চত্বরসহ শহীদ আবুল কাশেম সড়কের দু ধারের বড় বড় ভবন, বিপণিবিতানগুলোর নকশা অনুমোদন ছাড়াই নির্মাণ করা হয়েছে? সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন, অনুমোদন করা হলে নকশায় কেন অগ্নিনির্বাপনের ব্যবস্থা আছে কি-না তা দেখা হলো না?
শুধু চুয়াডাঙ্গা জেলা শহর নয়, জনসংখ্যা বিস্ফোরণে দেশটাই ঝুঁকির মধ্যে। মানুষ তার প্রয়োজনের তাগিদেই আবাদি জমি গ্রাস করে গড়ে তুলছে ঘরবাড়ি। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টিকে তেমন আমলে না নিয়ে বন-বাদাড় দেদারছে উজাড় করা হচ্ছে। আইন থাকলেও তার প্রয়োগের অভাবে বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির প্রাণী পিটিয়ে হত্যা করে উল্লাস করছে অসচেতন কিছু মানুষ। ফলে প্রকৃতি, আবহাওয়া অস্বাভাবিক হয়ে উঠছে। এ নিয়ে অবশ্য নানামুখি যুক্তি আছে। যেদিন থেকে সভ্যতার শুরু সেদিন থেকেই প্রকৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করেছে। যা বিবর্তনেরই অংশ। পক্ষান্তরে বলা যায়, মানুষ ভবিষ্যতের কথা না ভেবে সর্বগ্রাসী হয়ে ওঠার কারণেই প্রাকৃতিক এ বিপর্যয়। পরিবেশ বিপর্যয়, দুর্যোগ, দুর্ঘটনাকে যে যেভাবেই দেখি না কেন, দায়িত্বশীলদের কেউই দায় এড়াতে পারি না। পরিবেশ বিপর্যয়সমূহ স্পষ্ট। দুর্যোগ এখন পর্যন্ত প্রতিহত করতে না পারলেও আগাম সতর্কতা এবং দায়িত্বশীলতায় ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস করে। অগ্নিকাণ্ড থেকে শুরু করে প্রায় সকল ধরনের দুর্ঘটনা অসাবধানতারই খেসারত। অসাবধানতাই অগ্নিকাণ্ডের প্রধান কারণ। অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা অগ্নিনির্বাপনের চেয়ে উত্তম। তাহলে জনবহুল বড় বড় বিপণিবিতানগুলোতে কেন প্রতিরোধ ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে না। কেন নির্বাপনের ন্যূনতম ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া মহল্লার রাস্তাগুলোই বা কেন এতো সংকীর্ণ? মানুষ বসবাস করে অথচ বসতিপূর্ণ মহল্লায় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের গাড়ি ঢোকে না, ঢোকে না অ্যাম্বুলেন্স। সেই মহল্লাকে আর যাই হোক সচেতন মানুষের আবাসিক এলাকা বলা চলে না। অবাক হলেও সত্য যে, নগর পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার জন্যই নগর তথা টাউন কমিটি গঠন হয়, সেই কমিটি কালক্রমে এখন পৌরসভা। নিরাপদ ও পরিকল্পিত নগর গড়ে তোলার জন্য পৌর বিধি-বিধান থাকলেও প্রয়োগের অভাবে যা হওয়ার তাই হচ্ছে নাকি? তাছাড়া বিদ্যুত এখন অত্যাবশকীয়। অথচ সরবরাহ লাইনে এবং সটসার্কিটের কারণে তা ভয়ঙ্কর ঝুঁকি। এ ঝুঁকি এড়াতেও দরকার দায়িত্বশীলতা।
অবশ্যই শহর নিরাপদ করতে আইনের যথাযথ প্রয়োগ প্রয়োজন। একই সাথে দরকার সংশ্লিষ্ট সকলের দায়িত্বশীলতা। নিজের জীবনটা কোনোরকম পার করতে পারলেই হলো মানসিকতা পরিহার করে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য রাখা এবং করার তাগিদ থাকতে হবে। যে তাগিদ আবাসিক এলাকা থেকে শুরু করে বিপণিবিতানগুলোকে করবে নিরাপদ। তাগিদদাতা তথা পৌরকর্তাদের কঠোর হওয়া জরুরি।