নারায়ণগঞ্জসহ দেশেরবিভিন্ন এলাকায় যে অপহরণ, গুম ও খুনের ঘটনা ঘটেছে তা অতীতের সব রেকর্ডছাড়িয়ে গেছে বললেও অত্যুক্তি হয় না। অন্যদিকে বিভিন্ন দলের রাজনীতিকরাবিষয়টি নিয়ে আবারো কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু করেছেন, যা দেশের বর্তমান আতঙ্কজনকঅবস্থাকে আরো অসহনীয় করে তুলেছে বলেই প্রতীয়মান হয়। বিএনপি চেয়ারপারসনখালেদা জিয়া দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেছেন, দেশ আজ মৃত্যুউপত্যকা। গত রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপি আয়োজিত গণঅনশন কর্মসূচির সমাপনীবক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সম্প্রতি দেশে অপহরণ, গুম ও খুনের ঘটনাবেড়ে যাওয়ায় এমন ভাবনারও যৌক্তিক কারণ যে রয়েছে তা অস্বীকারের সুযোগ নেই।রাষ্ট্র তথা সরকার জনমনে স্বস্তি ফেরাতে এসব ভয়াবহ অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোরঅবস্থান নেবে এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সরকার নির্বিকার।
নারায়ণগঞ্জে অপহরণ এবং হত্যাকাণ্ডেরঘটনায় দেশজুড়ে উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। অপহরণ, গুমকিংবা খুনের মতো জঘন্য ঘটনার প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে, যা মোটেও সরকারতথা রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলজনক নয়। একজন নাগরিক হঠাৎ উধাও, নিখোঁজ বা অপহৃতহলে রাষ্ট্র বা সরকারের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। এ বিষয়ে খোদ ক্ষমতাসীন দলেরউপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সরকারকে কঠোর হওয়ার পরামর্শদিয়েছেন। সম্প্রতি ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করে এ থেকে উত্তরণেআইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দেয়া উচিত বলেই আমরামনে করি।
পত্রিকার খবরে যতোটুকু জানা যায়, অপহরণের পেছনে নানা ধরনের উদ্দেশ্য কাজকরে। ব্যক্তিগত বা পারিবারিক শত্রুতা, মুক্তিপণ আদায়, ব্যবসায়িক বিরোধ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ইত্যাদি কারণ রয়েছে। অপহরণের ঘটনায় কারা জড়িত, তাউদঘাটন ও চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে তাদের আইনে সোপর্দ করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর। আমরা লক্ষ্য করেছি সম্প্রতি পুলিশ রাজধানীর কয়েকটিস্থানে অভিযান চালিয়ে অপহৃতকে উদ্ধারের পাশাপাশি অপহরণকারীদের আটক করেছে।সত্য যে, ক্ষেত্রবিশেষে দু-একটি ঘটনায় অপহৃতকে উদ্ধার করা গেলেও অধিকাংশঅপহরণের রহস্য ও নেপথ্যনায়করা রয়েছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে, যা আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারীদের ব্যর্থতারই পরিচায়ক। অপরাধী যারাই হোক তাদের বিচার হওয়াটাবাঞ্ছনীয়। মনে রাখতে হবে, বিচার না হলে সমাজে অপরাধ বাড়তেই থাকবে। একসময় তানিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে, যা রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের নাগরিকের জন্যকিছুতেই মঙ্গলজনক নয়।
সম্প্রতি দেশে যেসব জঘন্য অপরাধমূলক ঘটনা ঘটেছে তা কোনো সভ্য সমাজেরবাস্তবতা হতে পারে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে এতোদিন অপহরণহয়েছে বিধায় অভিযোগের আঙুল তাদের দিকেই। কিন্তু এ ব্যাপারে না সরকার, নাখোদ অভিযুক্ত বাহিনী কেউই বিশেষ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। দেশে দিনের পরদিন ভয়াবহ ঘটনা ঘটছে, অভিযোগ উঠছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে; আর সরকার অভিযুক্ত বাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেবে না তাসমর্থনযোগ্য হতে পারে না। এতে সরকারের উদাসীনতা ও অপহরণ-হত্যাকাণ্ডে তাদেরমদদ রয়েছে এমন অভিযোগের বিষয়টিই সামনে চলে আসে।
গতকাল পত্রপত্রিকায় প্রকাশিতআরেকটি ভয়াবহ সংবাদ ছিলো‘নারায়ণগঞ্জে ৬ কোটি টাকায় সাত খুন’! শিরোনামে। এপ্রতিবেদনে নিহত নজরুলের শ্বশুর নারায়ণগঞ্জ হত্যাকাণ্ডে র্যাবের বিরুদ্ধেসরাসরি অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। এছাড়া র্যাবসহ অন্যান্য সরকারি বাহিনীরবিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগও বেশ পুরোনো। এ অবস্থায়আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তে সরকারের দ্রুতপদক্ষেপ নেয়া জরুরি।
শুধু বিএনপি চেয়ারপারসনই নন, দেশের সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করেসর্বস্তরের মানুষই দেশকে মৃত্যুপুরীহিসেবে চিহ্নিত করছেন, এটা নিশ্চয়ইগৌরবের বিষয় হতে পারে না। বরং এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। অথচ রাষ্ট্র তথাসরকারের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে বর্তমানসরকার কতোটুকু সফল কিংবা ব্যর্থসে প্রশ্ন থেকেই যায়। আমরা মনে করি, সময়েরকাজ সময়েই করা উচিত। তাই সরকারকে অবিলম্বে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোরঅবস্থান নিতে হবে। মনে রাখা দরকার, জননিরাপত্তা রক্ষায় ব্যর্থতার দায়সরকারের ওপরই বর্তায়।