মেহেরপুর ও মহেশপুরে পৃথক বজ্রপাতে নিহত ৩:আহত৭

 

মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় স্বস্তির বৃষ্টি হলেও প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি মেঘ। যতোটা গর্জেছে ততোটা বৃষ্টি না ঝরিয়েই চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরের আকাশ থেকে সরে যায় মেঘ। এ সময় মেহেরপুরে পৃথক স্থানে বজ্রপাতে দুজন ও ঝিনাইদহ মহেশপুরে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতরাতেও এলাকায় বৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করে।

চুয়াডাঙ্গায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। দেশের সবার্ধিক বৃষ্টি হয়েছে বরিশালে ৫৪ মিলিমিটার। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গতকালও রাঙামাটিতে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। চুয়াডাঙ্গায় গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৪ দশকি ২ ও সর্বনিম্ন ২৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে,মেহেরপুরের পৃথক দুটি স্থানে বজ্রপাতে ২ জন নিহত ও ৭ জন আহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার সকালের দিকে মেহেরপুর শহরের উপকণ্ঠ ব্র্যাক অফিসের পাশে ও সদর উপজেলার ফতেপুর গ্রামের মাঠে ওই ঘটনা ঘটেছে। মেহেরপুর সদর উপজেলার বামনপাড়া গ্রামের নিহত ট্রাক লেবার মন্টু মিয়া ও ফতেপুর গ্রামের নিহত কৃষক শফিকুল ইসলামের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আহতদের মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে। এসময় হতাহতদের শোকার্ত স্বজনদের আহাজারিতে হাসপাতাল এলাকা ভারী হয়ে উঠে।

জানা যায়, মেহেরপুর সদর উপজেলার বামনপাড়া গ্রামের কাউছার আলীর ছেলে মন্টু মিয়া (২৫) ও একই গ্রামের মোসলেম আলীর ছেলে রেজাউল হক (৩২) মেহেরপুর শহরের উপকণ্ঠ ব্র্যাক অফিসের পাশের একটি ক্ষেত থেকে ট্রাকে কলা লোড করছিলেন। বেলা সাড়ে ১০টার দিকে বৃষ্টি ছাড়াই প্রচণ্ড জোরে তাদের ওপর বজ্রপাত হয়। এদিকে মেহেরপুর ফতেপুর গ্রামের সাবদেল আলীর ছেলে শফিকুল ইসলাম (৪৫) ও আনছারুল (৩৭), আবু বকরের ছেলে বানেছুর (৩৫), হেফাজউদ্দিনের ছেলে আসাদুল (৩৪) ও আব্দুল্লাহন ছেলে তানজেল (৩৩) এবং তেরঘোরিয়া গ্রামের শহিদুল (৩২) ক্ষেতে ধান কাটার সময় তাদের ওপর বজ্রপাত হয়। এতে তারা সবাই আহত হন। পথচারী ও মাঠের কৃষকরা ছুটে এসে দ্রুত উদ্ধার করে তাদেরকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নেন। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক ট্রাকলেবার মন্টু মিয়া ও কৃষক শফিকুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া হেদাত ও তানজেল আলীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসক আরো জানিয়েছেন। খবর পেয়ে নিহত ও আহতদের স্বজনরা মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ছুটে আসেন। এসময় স্বজনদের আহাজারিতে হাসপাতাল এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।

গত শুক্রবার সন্ধ্যের দিকে মেহেরপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবোশেখির ঝড়ে মেহেরপুরের বিভিন্ন এলাকার উঠতি ফসল, গাছ-পালা ও বাড়ি-ঘর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে। সন্ধ্যে সাড়ে সাতটার দিকে হঠাৎ উত্তর আকাশ থেকে নেমে আসা কালবোশেখি ঝড়ে উঠতি ফসল ধানসহ মাঠের বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়। গ্রাম-গঞ্জের অনেক ঘর-বাড়ির টিনের চাল উড়ে গেছে। কোনো কোনো এলাকার গাছপাড়া ভেঙে পড়েছে। মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা ইউনিয়নের আরআর (রাজাপুর-রাধাকান্তপুর) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ও আমদহ ইউনিয়নের চকম্যামনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের টিনের চাল উড়ে যায়। আরআর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুজ্জামান জানান, ঝড়ে তার বিদ্যালয়ের অর্ধলাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

উভয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক জানান, টিনের চাল উড়ে যাওয়ায় বিদ্যালয় দুটির শিক্ষার্থীদের পড়া-লেখার চরম ক্ষতি হচ্ছে। মাঠের মধ্যে বিদ্যালয় দু’টি তৈরি। সরকারি অনুদানে বিল্ডিং করা না গেলে প্রতিষ্ঠান দুটি প্রতিবছর এ ধরনের ক্ষতির সম্মুখিন হতে থাকবে বলে মনে করেন এলাকাবাসী।

মহেশপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গত শুক্রবার রাতে মহেশপুর উপজেলা শাহবাজপুর গ্রামে বজ্রপাতে স্কুলছাত্রী রিতু খাতুনের (১৪) মৃত্যু হয়েছে।তার পারিবারিকসূত্রে জানা গেছে,গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়ির সামনে তিন বোন আম কুড়াতে যায়। দুবোন ফিরে আসে কিন্তু রিতু আম কুড়াতে থাকে। এসময় বজ্রপাত তার মাথায় আঘাত আনলে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। সে খালিশপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণির ছাত্রী এবং শাহবাজপুর গ্রামের আব্দুর রহমানের মেয়ে। শনিবার সকালে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।