ঘাতক স্বামী সুজন লাপাত্তা :বাবা-মা ও ভাই গ্রেফতার :খুনের আড়ালে আরো একটি বিয়েসহ মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য টাকা দাবি
দর্শনা অফিস:দর্শনা ইসলাম বাজারপাড়ায় নিজের বিউটি পার্লারে নৃশংসভাবে খুন হয়েছে বিউটিশিয়ান রুপা। স্বামীর চুরিকাঘাতে রুপা খুন হয়েছে।এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘাতক স্বামী সুজনকে খুঁজতে শুরু করেছে পুলিশ। সুজনকে না পেলেও পুলিশ স্থানীয়দের সহযোগিতায়তার বাবা-মা ও ছোট ভাইকে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ বলেছে, দামুড়হুদা থানায় ৪ জনের বিরুদ্ধেমামলা দায়ের করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে নেয়া হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশের কর্মকর্তারা।বিউটিশিয়ান রুপা হত্যা রহস্য উদঘাটনে পুলিশি তদন্ত শুরু হলেও স্বামী কেন বিউটিশিয়ান রুপাকে খুন করেছে তা স্পষ্ট করে জানাতে পারেনি পুলিশ।
পারিবারিকসূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার দর্শনা ঈশ্বরচন্দ্রপুর স্কুলপাড়ার খবির উদ্দিনের মেয়ে মরিয়ম খাতুন রুপার সাথে আনুমানিক ১০ বছর আগে একই মহল্লার মিস্টারের ছেলে বাবুর সাথে বিয়ে হয়। বছরখানেক আগে তাদের দাম্পত্য বিচ্ছেদ ঘটে।রুপার রয়েছে ৮ বছর বয়সী ছেলে আতিক। ছেলে রুপার কাছেই থাকতো। নিহত রুপার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্বামী-সন্তান নিয়ে ভালোয় ছিলো রুপা। সুখের সংসারে আগুন ধরিয়ে দেয় দর্শনা পৌর শহরের আজমপুরের নুরু শেখের ছেলে দর্শনা হিরা সিনেমা হলের সামনের সুজন ফুলঘরের সত্বাধিকারী সুজন শেখ। রুপাকে ফুঁসলিয়ে ওই সংসার ভাঙে সুজন। বিয়ে বিচ্ছেদের ৬ মাস পরে রুপাকে গোপনে বিয়ে করে সুজন। এদিকে সুজন জীবিকার সন্ধানে মালোশিয়ায় যাওয়ার পথ খুঁজতে থাকে। এ নিয়ে রুপার সাথে সৃষ্টি হয় মতোবিরোধ। রুপাকে না জানিয়ে টাকার জন্য সুজন মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলা এলাকায় ২য় বিয়ে করে। ২য় বিয়ের কারণে রুপার সাথে দাম্পত্য কলহ তীব্রতর হয়ে ওঠে। একই সাথে সুজন মালোশিয়ায় যাওয়ার জন্য রুপার কাছে মোটা অঙ্কের টাকার দাবি করে রুপাকে বিষিয়ে তোলে। রুপা মাসখানেক আগে দর্শনা ইসলাম বাজারপাড়ার জনৈক বাবুর বাড়ির একটি ঘর ভাড়া নিয়ে টাচমেকওভার বিউটি স্যালুন অ্যান্ড পার্লার নামে বিউটি পার্লার খোলে। গতকাল রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে বিউটিপার্লারে রুপা ও সুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এর একপর্যায়ে বিকেলে সুজনের চিৎকারে বাড়ির মালিকসহ প্রতিবেশীরা ছুটে আসে। ধারালো চুরিকাঘাতের কারণে রুপার গলা থেকে গলগল করে রক্তক্ষরণ দেখে স্থানীয়দের সহযোগিতায় হাসপাতালে নেয়ার নেয়ার চেষ্টা করছিলো সুজন। হাসপাতালে নেয়ার পথেই মারা যায় রুপা। রুপার মৃত্যুর পর কৌশলে সটকে পড়েছে সুজন। এ দিকে রুপা খুন ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে শ শ নারী-পুরুষ লাশ দেখতে ভিড় জমায় রুপার বাড়িতে। অনেকের মতো সুজনের বাবা-মা ও ছোটভাই রিপন লাশ দেখতে যায়। এ সময় নিহতের পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়ে সুজনের বাবা-মা ও ছোটভাই রিপনকে মারধর করে আটকে রাখে। খবর পেয়ে দর্শনা আইসি পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পুলিশি হেফাজতে নেয়। এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেন চুয়াডাঙ্গা সহকারী পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান, দামুড়হুদা থানার অফিসার ইনচার্জ শিকদার মশিউর রহমান, ওসি তদন্ত ফকির আজিজুর রহমান। বিকালে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে নেয়। আজ সোমবার ময়নাতদন্ত শেষে ঈশ্বরচন্দ্রপুর গোরস্তানে রুপার দাফন সম্পন্ন করা হতে পারে।
এদিকে নিহত রুপার মা ভানু বিবি বাদী হয়ে গতকালই দামুড়হুদা থানায় সুজনসহ তার বাবা-মা ও ছোট ভাই রিপনের বিরুদ্ধে হত্যামামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ সুজনের বাবা-মা ও ছোট ভাই রিপনকে হেফজতে আনলেও তাদের বিরুদ্ধে হত্যামামলা দায়ের করায় আজ সোমবার আদালতে সোপর্দ করতে পারে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সুজনকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। রুপা হত্যার রহস্য উন্মোচনে পুলিশি তদন্ত অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন থানার অফিসার ইনচার্জ শিকদার মশিউর রহমান।