দ্রুততম সময়ে নির্বাচন দাবি সুজনের

স্টাফ রিপোর্টার: ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটেনি। ওই নির্বাচনে জনগণের সম্মতি ছিলো না। তাই জনগণের সম্মতি পেতে হলে নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন। গতকাল দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে দশম জাতীয় সংসদের সদস্যদের তথ্য উপস্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।

তারা বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী এবং নির্বাচন বর্জনকারী সকল রাজনৈতিক দল নাগরিক সংগঠন ও সচেতন নাগরিক সমাজকে বিরাজমান সঙ্কট নিরসনে আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক সঙ্কটের স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে সকল রাজনৈতিক দলের সম্মতিতে ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন সাপেক্ষে একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছেন সুজন নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুজন নির্বাহী সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, ঢাকা জেলা কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মুসবাহ আলীম ও সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ৫ জানুয়ারির  নির্বাচনে জনগণের সম্মতি ছিলো না। তাই জনগণের সম্মতি পেতে হলে নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করে যত দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেয়া যাবে দেশের জন্য মঙ্গল হবে। তিনি বলেন, এ নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে কোন কাজ হবে না। তারা সঠিক ব্যক্তি নয়। প্রার্থীগণ হলফনামায় যে তথ্য দাখিল করেন তা যাচাই-বাছাই ও খতিয়ে  দেখতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। নির্বাচনী অঙ্গনকে কলুষমুক্ত করার জন্য এ তথ্য খতিয়ে দেখার বিকল্প নেই। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করলে মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ হবে। একইসাথে বসন্তের কোকিলদের নির্বাচনী অঙ্গন থেকে দূরে রাখা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, হলফনামায় অসত্য তথ্য প্রদান একটি দ-নীয় অপরাধ। কারণ, দ-বিধি ১৮১ ধারা অনুযায়ী, হলফনামায় অসত্য ও ভুল তথ্য প্রদান করলে ৩ বছরের জেল পর্যন্ত হতে পারে।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ৩০০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ২৫৮ জন আয়কর প্রদান করলেও বার্ষিক দু লাখ ২০ হাজার টাকা আয় করলেই আয়কর প্রদান করতে হয়। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, তাহলে কি আমরা ধরে নেব বাকি ৪২ জন সংসদ সদস্য কেউই দু লাখ টাকা আয় করেন না। তিনি বলেন, এ তথ্য আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়। দু-একজন এরকম প্রার্থী থাকলেও থাকতে পারে।  কিন্তু বাকিরা সবাই আয়করের তথ্য গোপন করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ  বলেন, হলফনামায় সংসদ সদস্যরা যে তথ্য প্রদান করেছেন তা যেন হাস্যসম্পদে পরিণত না হয়। এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য দুদক, নির্বাচন কমিশন, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ প্রার্থীরা যে তথ্য প্রদান করেন তা ভাল করে খতিয়ে দেখার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনুরোধ জানান। হলফনামায় অসত্য তথ্য প্রদান জাতির সঙ্গে অবমাননার শামিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি। অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ  বলেন, আমার জানামতে সংরক্ষিত আসনের অনেক মহিলার আয় নেই। হলফনামায় দেখিয়েছেন বেশি। ভবিষ্যতে আয় করে সমন্বয় করা হবে এই আশায়। মূল প্রবন্ধে বলা হয়; দশম জাতীয় সংসদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১৫৩ জনসহ ৩০০টি নির্বাচনী এলাকার সর্বমোট প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ৫৪৩ জন। জাতীয় সংসদের ৩৫০ জন এমপির মধ্যে অর্ধেক  ব্যবসায়ী। শতকরা ৫০ ভাগই ব্যবসায়ী। সংখ্যায় ১৭৫ জন। আইনজীবী আছেন ৫১ জন। দশম জাতীয় সংসদে এমপিদের সম্পর্কে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) দেয়া প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ১২৮ জন সংসদ সদস্যের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে। আর স্নাতক ডিগ্রি রয়েছে ১৪৭ জনের। ১৫ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিকের নিচে।

এতে আরও বলা হয়, ৫৫ জন এমপির  আয় কোটি টাকার বেশি। ১৭ জনের আয় দু লাখ টাকার নিচে। আর নারী এমপি বাদে ৩০০ জন এমপির  মধ্যে মোট করদাতা ২৫৮ জন। ১০৭ জন এমপি পাঁচ হাজার টাকা বা তার চেয়ে কম আয়কর দেন। ৩১ জন এমপি ১০ লাখ টাকার বেশি আয়কর  দেন। প্রার্থীগণ কর্তৃক প্রদত্ত হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে বেশির ভাগ স্নাতক বা স্নাতকোত্তর। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২৭৩ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে এই সংখ্যা ২২০ জন, জাতীয় পার্টির ৪০ জনের মধ্যে ৩১ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল  জাসদের ৬ জনের মধ্যে ৪ জন, জাতীয় পার্টি-জেপি’র ২ জনের মধ্যে ১ জন এবং স্বতন্ত্র ১৯ জনের মধ্যে ১১ জন। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ৭ জনসহ বিএনএফ-এর একজনসহ সকলের শিক্ষাগত যোগ্যতাই স্নাতক বা স্নাতকোত্তর। হলফনামা বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে বলা হয় ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ১৭৫ জন ব্যবসায়ী। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২৭৩ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে এই সংখ্যা ১৪২ জন, জাতীয় পার্টির ৪০ জনের মধ্যে ১৮ জন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ৭ জনের মধ্যে ১ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের ৬ জনের মধ্যে ৩ জন এবং স্বতন্ত্র ১৯ জনের মধ্যে ১১ জন ব্যবসায়ী। তাদের মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে দিলীপ সরকার বলেন, ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ৩১ জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা আছে, অতীতে মামলা ছিল ১৪৩ জনের বিরুদ্ধে। অতীত ও বর্তমান উভয় সময়ে মামলা ছিল বা আছে এমন এমপির সংখ্যা ২৩ জন। সুজন কেন্দ্রীয় প্রধান সমন্বয়কারী আরও বলেন, ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে বছরে ৫ লাখ  টাকার কম আয় করেন ৮০ জন। সর্বোচ্চ ১২৪ জন প্রার্থীর বছরে  আয় ৫ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকা। আর সংসদ সদস্যের মধ্যে বছরে ৫ লাখ টাকার কম সমপদের মালিক মাত্র ১২ জন। সংসদ সদস্যের মধ্যে বেশির ভাগের সমপদ কোটি টাকার উপরে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২৭৩ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে এই সংখ্যা ১৯৪ জন, জাতীয় পার্টির ৪০ জনের মধ্যে ১৮ জন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ৭ জনের মধ্যে ১ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের ৬ জনের মধ্যে ১ জন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের ২ জনের মধ্যে ২ জনই, জাতীয় পার্টি- জেপির ২ জনের মধ্যে ১ জন এবং স্বতন্ত্র ১৬ জনের মধ্যে ৮ জনের কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। পাশাপাশি সংরক্ষিত আসনের ৫০ জন এমপির মধ্যে আওয়ামী লীগের নিলুফার জাফর উল্লাহর বছরে আয় ৬ কোটি ১০ লাখ ২৫ হাজার ৫৫৯ টাকা।

Leave a comment