মহাসিন আলী: বাংলাদেশের অতি পরিচিত পাখির মধ্যে ঘুঘু অন্যতম। এ পাখি নিয়ে যেমন রয়েছে প্রবাদ বাক্য তেমনি রয়েছে গল্প। পরিবেশ বিপর্যের কারণে আজ এ পাখি হারিয়ে যেতে বসেছে। এ পাখি সংরক্ষণ করা না গেলে আরো কয়েক বছর পরে আমাদের নতুন প্রজন্ম বর্ণমালা শিখতে শুধু বইয়ের পাতায় পড়বে ঘ-তে ঘুঘু পাখি দিচ্ছে ডাক অথবা ঘুঘু করে ঘু-ঘু। আর শিশুকে সত্যিকারের ঘুঘু পাখি দেখাতে মাঠ-ঘাটে নয় অভিভাবককে শিশুদের নিয়ে যেতে হবে চিড়িয়াখানায়।
সময়ের সাথে সাথে প্রকৃতি বদলাচ্ছে, বদলাচ্ছে পরিবেশও। মানুষও হয়ে যাচ্ছে স্বার্থপর আর নিষ্ঠুর। মানুষের স্বার্থপরতা আর নিষ্ঠুরতার কাছে আমাদের অতি পরিচিত ঘুঘু পাখি হারাতে বসেছে। এখন আর মাঠে-ঘাটে ঘুঘু পাখি দেখা যায় না বলেই চলে। শোনা যায় না ঘুঘু পাখির ডাক। কেউ ভাগ্যক্রমে ঘুঘু পাখি দেখে ফেললে সেটা গল্পতে রূপ নেয়। ঘুঘু পাখি দেখা মেলা দুর্লভ। তাই এখন আর কেউ রাগে-ক্ষোভে কাউকে বলে না- ‘তোর ভিটায় ঘুঘু চরাবো’। এক সময় বাংলার মাঠে-ঘাটে ঘুঘু পাখি ছিলো ভরি ভরি। প্রকৃতিতে অবাদ বিচরণ ছিলো তাদের। পিঁপড়ার উপকারী বন্ধু হিসেবে ঘুঘু পাখির গল্প বইয়ে পড়েনি এমন শিক্ষার্থী সে সময় খুঁজে পাওয়া ভার ছিলো।
নিষ্ঠুর পাখি শিকারীর টোটার গুলি আর ফাঁদ যখন পরিবেশ থেকে আস্তে আস্তে ঘুঘুসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি হারিয়ে দিচ্ছিলো। ঠিক তখন সরকার আইন করে পাখি শিকার নিষিদ্ধ করেন। তার পরও কি ঘুঘু প্রাণে রক্ষা পেয়েছে? ঘুঘুর প্রধান খাদ্য ধান, গম ও ডাল বীজ জাতীয় খাদ্য। আমাদের কৃষকরা সচেতনতার পরিচয় না দিয়ে তারা ফসল উৎপাদনে ক্ষেতে মাত্রা অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছেন। এতে প্রকৃতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বিষ মিশ্রিত খাদ্য খেয়ে ঘুঘুসহ কয়েক প্রজাতির পাখি প্রকৃতি থেকে উজাড় হচ্ছে।
পাখি প্রেমি মিজানুর রহমান জানালেন, ঘুঘু পাখির জন্য নিরাপদ খাদ্যের যেমন অভাব তেমনি নিরাপদ বাসস্থানের অভাব দেখা দিয়েছে। মাঠের খাদ্যে বিষ, চোরা শিকারীর কারণে গাছে বসা নিরাপদ নয়। তবে কিভাবে তারা প্রকৃতিতে টিকে থাকবে? তিনি জানালেন, ২০১২ সালে মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা বিজিবি ক্যাম্পের অগ্নিনির্বাপক সামগ্রীর ঘরে একজোড়া ঘুঘু পাখিকে ডিমে তা দিয়ে বাচ্ছা ফোঁটাত দেখেছি। এরপর আর মেহেরপুরের কোনোস্থানে ঘুঘু পাখি চোখে পড়েনি।
মেহেরপুরের আরেক পাখি প্রেমি আবু লায়েচ লাবলু জানালেন, আগের দিনে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মাঠে ঘাঠে নানা প্রজাতির প্রচুর পরিমাণ ঘুঘু পাখি দেখা যেতো। সংগী খুঁজতে ঘুঘুর ডাক শোনা যেতো। বাসা বাড়িতে অনেককেই খাঁচায় ভরে ঘুঘু পুষতে দেখা যেতো। এখন আর এমনটি দেখা মেলেনা। শোনা যায়না ঘুঘুর ডাক। সম্প্রতি মুজিবনগর কমপ্লেক্সের পাশে বে-সরকারিভাবে গড়ে ওঠা একটি চিড়িয়াখানায় দেখা গেলো ৪/৫টি ঘুঘু।
মেহেরপুরের সচেতন মহল মনে করেন আমাদের অতি পরিচিত ঘুঘু পাখি সংরক্ষণ করা না গেলে এ পাখি চিরতরে হারিয়ে যাবে। আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে ঘুঘু হবে অচেনা অজানা একটি পাখি। বাইয়ের পাতায় ঘুঘুর ছবি দেখা ছাড়া বাস্তবে তাদের ঘুঘুর দেখা মিলবেনা।