চাঞ্চল্যকর অপহরণ : আইনের আওতায় আনতে হবে অপহরণকারীদের

বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর গুমের দু বছর পূর্তির আগের দিন আরেকটি চাঞ্চল্যকর অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এদিন বিকেলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক এবং ম্যাগসেসে পুরস্কারপ্রাপ্ত আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বক্কর সিদ্দিক নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানাধীন একটি ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে অপহৃত হন। তাকে বহনকারী গাড়িকে একটি নীল রঙের মাইক্রোবাস পেছন থেকে ধাক্কা দিলে তার গাড়িচালক গাড়ি থামায়। এ সময় পেছনের গাড়িটি থেকে ৭-৮ জন যুবক অস্ত্র ও লাঠি হাতে নেমে তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। রিজওয়ানা হাসান দেশে-বিদেশে একজন স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব। তার মতো একজন নারীর স্বামী এভাবে দিন-দুপুরে অপহৃত হওয়ায় দেশবাসী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। ইলিয়াস আলীর গুম রহস্য দু বছরেও উদঘাটিত হয়নি। তাকে হত্যা করা হয়ে থাকলে তার পরিবারবর্গ নিদেনপক্ষে তার লাশেরও সন্ধান পায়নি। রিজওয়ানার স্বামী অপহরণকারীদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে কি-না, সেটাও এখনও অনিশ্চিত। রিজওয়ানা অজ্ঞাত ৭-৮ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন বটে, কিন্তু অপহরণকারীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে?

শুধু ইলিয়াস আলী নয়, নিখোঁজ রহস্য উদঘাটিত হয়নি আরও অনেকের। সবচেয়ে বড় কথা, অপহরণ-গুমের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর অপহরণের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। অপহৃতদের কারও কারও লাশ পাওয়া গেলেও অনেকের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এটাই যখন বাস্তবতা, তখন সাধারণ মানুষের গুম হওয়ার বিষয়টাকে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বলে মনে হয় না। একেকটি গুমের ঘটনা ঘটছে আর কয়েক দিন তা নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখির পর আড়াল হয়ে যাচ্ছে সেই ঘটনা। ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ার বিষয়টি যেমন এখন আর তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না। অথচ গুম থেকে সব ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ বাংলাদেশ। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো কর্তৃক স্বাক্ষরিত ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তিকেই গুম করা যাবে না। জাতিসংঘ সনদে আরও বলা হয়েছে, জাতিসংঘের প্রতিটি সদস্যরাষ্ট্র গুম করাকে ফৌজদারি অপরাধের পর্যায়ভুক্ত করে আইন প্রণয়ন নিশ্চিত করতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আরও বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি, যে নিজে গুম করে অথবা গুম করতে হুকুম বা মন্ত্রণা দেয় অথবা প্ররোচিত করে অথবা গুম করার উদ্যোগ নেয় অথবা নিজে গুম কার্যের একজন সহযোগী- রাষ্ট্র তাকে অপরাধী সাব্যস্ত করে তার শাস্তি নিশ্চিত করবে। পরিতাপের বিষয়, জাতিসংঘের গুমবিরোধী সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে এখানকার সরকার অপহরণকারীদের শনাক্ত পর্যন্ত করতে পারছে না। আমরা আশা করবো, জাতিসংঘ সনদের আলোকে সরকার গুমের কঠোর শাস্তির বিধান প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হবে।

বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। এখানে রয়েছে আইন-আদালত, থানা-পুলিশ ও বিচার ব্যবস্থা। অথচ এ দেশে গুমসহ নানা ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। গুম, অপহরণের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না রাজনীতিক থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। এমনকি মায়ের কোল থেকে শিশুও অপহৃত হচ্ছে। রাষ্ট্র ব্যর্থ হচ্ছে মানুষের নিরাপত্তা বিধান করতে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেয়ে অপহরণকারী দুর্বৃত্তরাই বেশি শক্তিশালী। এমন অবস্থা বেশি দিন চলতে পারে না। সরকার ও প্রশাসন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে গুম-অপহরণ অনিরাময়যোগ্য সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হবে, সন্দেহ নেই। আইনের আওতায় আনতে হবে অপহরণকারীদের।