উৎসব উৎসাহ উদ্দীপনায় বর্ষবরণ

ভেদাভেদ ভুলে সম্প্রীতির বন্ধনে মিলনের প্রত্যাশা

স্টাফ রিপোর্টার: পয়লা বোশেখে এবারও গোটা দেশ ছিলো উৎসবমুখর। গান গেয়ে, বাজনা বাজিয়ে, খেয়ে-খাইয়ে উৎসব আনন্দে, শোভাযাত্রায় শামিল হয়ে, বর্ণিল সাজে সেজে, তপ্ত গ্রীষ্মকে উপেক্ষা করে চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ সারাদেশের মানুষ বরণ করে নিয়েছে ১৪২১ সনের প্রথম দিন পয়লা বোশেখকে।

এদিন ব্যবসায়ীরা খুলেছেন হালখাতা। আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্য অনুযায়ী লালসালুতে বাঁধাই করা এই হালখাতা বা নতুন খাতায় হিসাব উঠানো এবং পুরনো হিসাব চুকানোর লক্ষ্যে খদ্দেরকে মিষ্টি মুখ করানোর ঐতিহ্য পালন করতেও দেখা যায় দেশব্যাপি অনেক ব্যবসায়ীকে। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে সোমবার রাজধানীর রাজপথে নেমেছিলো মানুষের ঢল। সকালে রমনার বটমূলে ছায়ানটের শিল্পীরা যে সুর-মূর্ছনায় সিক্ত করেন সমবেতদের, তার হিল্লোল যেন বয়ে যায় ইট-পাথরের কৃত্রিম শহরের সীমানা ছাড়িয়ে চির সবুজের আধার গ্রামে। এদিন ভ্রমণপিপাসুরা রাত অবধি দল বেঁধে ঘোরাঘুরি, হই চই, পান্তা-ইলিশ ভোজন ও নানা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আনন্দ-উল্লাসে কাটিয়ে দেন। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাবদাহ তাদের দমাতে পারেনি। পুরনো কষ্টকে ভুলে নতুনকে পাওয়ার আশায় ছিলো এ আনন্দ। একে অন্যকে জানিয়েছে নববর্ষের শুভেচ্ছা। দিনভর তারা তপ্ত রোদে পুড়ে উপভোগ করেছে নানা আয়োজন।

বর্ণাঢ্য নানা আয়োজন ও উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যদিয়ে চুয়াডাঙ্গায় বর্ষবরণ পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে পয়লা বোশেখে দিনের শুরুতে সকাল ৬টায় মুকুলফৌজ ও ঝিনুক মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্বাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পরে সাড়ে ৭টার দিকে শহরের চাঁদমারী মাঠ (ভি.জে স্কুল মাঠ) থেকে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিতে অংশ নেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসাইন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মল্লিক সাঈদ মাহমুব, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আনজুমান আরা, পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান ও পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটনসহ সরকারি-বেসরকারি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। র‌্যালিতে চির নতুনের আহ্বান, মঙ্গলময় ও সমৃদ্ধ দিনের প্রত্যাশায় বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিনে চুয়াডাঙ্গাসহ সারাদেশ ভেসেছিলো নব উন্মাদনার বন্যায়, সেজেছিলো খাটি বাঙালি আনায়। সূর্যোদয়ের সাথে সাথেই শুরু হয় বোশেখকে স্বাগত জানানোর দিনব্যাপি আয়োজন। প্রতি বছর বসন্ত শেষে আসে বোশেখ। আসে পুরোনো গ্লানিকে বিদায় জানিয়ে নতুনের দিকে পথ চলার বার্তা নিয়ে। আর তাই ধর্ম, বর্ণ বা বয়সের কোনো প্রতিবন্ধকতাই এ দিনে বাঙালিকে বর্ষবরণের আনন্দে মেতে ওঠা থেকে আটকে রাখতে পারে না। এবারো পারেনি। দিনের প্রচণ্ড খরতাপ উপেক্ষা করে সকাল থেকেই মানুষ ছুটেছিলেন উৎসব-অনুষ্ঠানের দিকে। লাল-শাদা শাড়ি পরা তরুণী আর পাঞ্জাবি-ফতোয়া পরা তরুণদের ঢল ছিলো রাস্তায়। সেইসাথে সব বয়সের নারী-পুরুষ-শিশু কেউই বাঁধন ছেঁড়ার এ প্রতিযোগিতায় নামতে ভুল করেননি। নানা রঙে নানা ঢঙে সেজে সবাই দিনভর মেতে উঠেছিলেন বর্ষবরণের নানা অনুষ্ঠানে।

বাঙালিয়ানা না থাকলেও তরুণ ছেলেরা শাদা গেঞ্জিতে কষ্ট, কেউ রক স্টার, কেউবা সেভেন স্টার লিখে শহরে ঘুরতে থাকে প্রানের উচ্ছ্বাসে। কেউ বর-বধূ, ঘটক, গরুর গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ায় শহরের নানা প্রান্তে। নানা সাজে ও নানা ঢঙ্গে সাজোয়া র‌্যালিটি প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ হাসান চত্বর হয়ে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে এসে থামে। সেখানে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর রহমত আলী র‌্যালিকে স্বাগত জানান। সরকারি কলেজের উন্মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বাংলা কবিতা আবৃত্তি, বাউল সঙ্গীত, নৃত্যসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ওই মঞ্চে র‌্যালিতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারকারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও পৌর মেয়র। বর্ষবরণ উৎসব র‌্যালিতে পুরস্কার পেয়েছে ‘ক’ গ্রুপে প্রথম স্থান অধিকার করেছে রাহেলা খাতুন গার্লস একাডেমী, দ্বিতীয় এমএ বারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারী চুয়াডাঙ্গা একাডেমী। ‘খ’ গ্রুপে প্রথম অরিন্দম স্বাংস্কৃতিক সংগঠন, দ্বিতীয় জিমনেসিয়াম, তৃতীয় উদীচী এবং ‘গ’ গ্রুপে রেলবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দ্বিতীয় স্টার ফেয়ার কিন্ডারগার্টেন ও তৃতীয় স্থান অধিকারী কচিকণ্ঠ কিন্ডারগার্টের। পুরস্কার বিতরণের পূর্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা সাম্প্রদায়িকতা মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদমুক্ত ডিজিটাল বাংলাদেশ  গড়ার প্রত্যয়ের মাধ্যমে বাংলা নববর্ষ-১৪২১ বঙ্গাব্দ পালন উৎসবে আগত সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা ও স্বাগত জানান। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের পক্ষ থেকে আয়োজনে অনুষ্ঠিত বর্ষবরণে অসংখ্য শ্রেণিপেশার মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিলো কলেজ ক্যাম্পাস। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ চত্বর  ভেসেছিলো উচ্ছ্বসিত প্রাণের জোয়ারে।

সরকারি কলেজের অনুষ্ঠানমালা শেষে পান্তা ইলিশ, আর পায়েসের আয়োজনে পাল্লা-পাল্লি বাধে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার ও চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের মধ্যে। তবে এ আয়োজনে কেউ কারো থেকে আয়োজনে রকমারিতা আনায়নে পিছিয়ে ছিলেন না। কিন্তু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বাড়তি আয়োজন আর পায়েশের ভিন্নতায় উপস্থিত শুধীজনেরা জেলা প্রশাসকের অয়োজনকেই নম্বর দেন বেশি। জেলা প্রশাসক নিজে পান্তা-ইলিশের প্লেট হাতে তুলে দেন আমন্ত্রিত অতিথিদেরেকে।  ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই পৃথীবির রুপ খুঁজিতে যাই না আর’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে জেলা প্রশাসকের বাঙলো চত্বরে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে  জেলা শিল্পকলার শিল্পীদের বর্ষবরণ গান ‘এসো এসো হে বৈশাখ…..’ গানটি যোগ করে নুতুন মাত্রা। শিল্পীদের একেপর এক গাওয়া গানে বুধ হয় আমন্ত্রিত অতিথিরা। এ অনুষ্ঠানে জেলায় কর্মরত সরকারি কর্মকর্তারা ছাড়াও যোগদেন আমন্ত্রিত বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন ৬ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়েনের পরিচালক এসএম মনিরুজ্জামান, পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন প্রমুখ।

এছাড়া বর্ষবরণ উপলক্ষে জেলা শিল্পকলা একাডেমী মুক্ত মঞ্চে শিশু একাডেমীর উদ্যোগে শিশুদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হালখাতা খোলা, জেলা কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের ব্যবস্থাসহ জেলার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এদিকে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার উদ্যোগে সকাল ৮টায় পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দারের নেতৃত্বে দৃষ্টিনন্দন একটি শোভাযাত্রা শহর ঘুরে আবার পৌরসভা এসে শেষ হয়।

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে পয়লা বোশেখ চুয়াডাঙ্গার জাফরপুরস্থ বিজিবি-৬ ব্যাটালিয়নের উদ্যোগে একদিনের বোশেখি মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সীমান্ত বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত মেলায় ঐতিহ্যবাহী সাপের খেলা, কুঠির শিল্পের পণ্য, বিজিবির কর্মকর্তার স্ত্রীদের সংগঠনের তৈরি পণ্য এবং গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠা-পুলিসহ খাবারের স্টল ছিলো। সকালে মেলার উদ্বোধন করেন বিজিবি-৬’র পরিচালক লে. কর্ণেল এসএম মনিরুজ্জামান। মেলায় আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসাইন, পুলিশ সুপার মো. রশীদুল হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মল্লিক সাঈদ মাহবুব ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছালেহ উদ্দীন। বিজিবি পরিচালক অতিথিদেরকে পান্তা-ইলিশসহ রকমারি দেশি খাবার  দিয়ে আপ্যায়ন করেন। পরে এক মুনমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটির বিবিএ ডিপার্টমেন্টের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় বাংলা নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠান, আলোচনাসভা, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার প্রফেসর হারুন-অর-রশীদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথী ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. প্রফেসর এম ওবায়দুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার। বিশেষ অতীথি ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যলয়ের বোটানী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. প্রফেসর নাসিমা জোয়ার্দ্দার, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (অর্থ) প্রফেসর আঃ মজিদ বিশ্বাস, কন্ট্রলার প্রফেসর মাহাবুব হাসান ও সহকারি রেজিস্টার নাফিউল ইসলাম শান্ত।

‘বাংলার মেলা, বাঙালির মেলা, পৌর মেলা’ স্লোগান নিয়ে বাংলা নববর্ষ-১৪২১ উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গায় সপ্তাব্যাপি শুরু হয়েছে পৌর মেলা। স্থানীয় টাউন ফুটবল মাঠে অনুষ্ঠিত ওই মেলার আয়োজক চুয়াডাঙ্গা পৌর পরিষদ। গত সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে জাতীয় সংসদের হুইপ চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন প্রধান অতিথি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে এ মেলার উদ্বোধন করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসাইন, পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান ও পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার,  কাউন্সিলরবৃন্দ, গ্রামিণ ফোনের কুষ্টিয়া জোনের এরিয়া ম্যানেজার মো. আমিনুল ইসলাম, টেরিটরি ম্যানেজার শরিফুল ইসলাম সোহাগ উপস্থিত ছিলেন। মেলায় ছোটদের নাগরদোলা ও শিশুদের খেলার সামগ্রীসহ অর্ধশত স্টল বসেছে। উদ্বোধন শেষে প্রধান অতিথিসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা মেলায় অংশ নেয়া বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে মেহেরপুরে শুরু হয়েছে বাংলা নববর্ষ বরণ। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সোমবার সকাল সাড়ে ৭টায় মেহেরপুর জেলা প্রশাসন কার্যালয় চত্বরের সামনে থেকে একটি মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ফরহাদ হোসেন দোদুল। জেলা প্রশাসক মাহমুদ হোসেন, জেলা পরিষদ প্রশাসক অ্যাড. মিয়াজান আলী, পুলিশ সুপার একেএম নাহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) হেমায়েত হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ মো. জয়নাল আবেদীন, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলহাজ আসকার আলী, আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক আমাম হোসেন মিলু, জেলা বিএমএ’র সভাপতি ডা. রমেশচন্দ্র নাথসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহরের শহীদ ড. সামসুজ্জোহা নগর উদ্যানে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে ৮টায় মেহেরপুর পৌরসভা প্রাঙ্গণে ও মহিলা ক্লাব প্রাঙ্গণে পান্তা উৎসবের আয়োজন করা হয়। এছাড়া বাংলা নববর্ষবরণে বিকেলে জেলা শিশু একাডেমী মিলনায়তনে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা শেষে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এছাড়া এদিনটি পালন উপলক্ষে মেহেরপুর অরণী ও উদীচী সংগঠন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

এদিকে মেহেরপুর ভেনাস স্পোর্টিং ক্লাবের উদ্যোগে বাংলা নববর্ষ বরণ করা হয়। এদিন মেহেরপুর পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ মঞ্জুরুল কবির রিপনের সভাপতিত্বে সৈয়দ এহসানুল কবীর অরিফ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। এ সময় সেখানে ক্লাবের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক মেহেরপুর রিজিওনের সাতটি শাখায় আজ  হালখাতা অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে বাংলা নববর্ষে হালখাতায় মেহেরপুরে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক শাখার গ্রাহকবৃন্দ, ঋণগ্রহিতা এবং শুভানুধ্যায়ীদের মিষ্টিমুখ করানো হয়। হালখাতা অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে শ’ শ’ ঋণগ্রহিতাদের কাছ থেকে প্রায় ৪ কোটি টাকা বকেয়া ঋণ আদায় করা হয়। ঋণগ্রহিতারা স্বতঃস্ফুর্তভাবে শাখাগুলোতে এসে তাদের ঋণের টাকা পরিশোধ করেন। শুধু গাংনী শাখা এককভাবে তিন কোটি টাকা আদায় করার গৌরব অর্জন করে।

এ হালখাতা উপলক্ষে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক গাংনী শাখাকে বাংলার ঐতিহ্য অনুসারে সাজানো হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক মেহেরপুর রিজিওনাল ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম হালখাতা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এ সময় তার অফিসের উর্ধ্বতন মুখ্যকর্মকর্তা বাবু সমীরকান্তি নন্দী, গাংনী শাখা ব্যবস্থাপক শামশুল ইসলামসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদায় নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে সোমবার সকাল ৮টায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদুর রহমানের নেতৃত্বে স্টেডিয়াম মাঠ থেকে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনার চত্বরে শেষ হয়। উপজেলা সাহিত্য পরিষদ, মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাইলট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বেবী কেয়ার হোমস, কানন বিদ্যাপীঠ, দশমী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চিৎলা কদমতলা ব্যস্ত সংঘসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টু, প্রেসক্লাব সভাপতি দীন মোহাম্মদ, সাধারণ সম্পাদক এম. নুরুন্নবী, উপজেলা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি ইসমাইল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আব্দুল আলিম, দামুড়হুদা ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক আক্কাচ আলী, ওস্তাদ আসমত আলী বিশ্বাস প্রমুখ। শোভাযাত্রা শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পাদদেশে শুরু হয় বোশেখি গানের আসর। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে চিৎলা কদমতলা ব্যস্ত সংঘকে প্রথম, পাইলট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজকে ২য় এবং ব্র্যাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে ৩য় পুরস্কারসহ অংশগ্রহণকারী সকল সংগঠনকে পুরস্কৃত করা হয়।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগরে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে পয়লা বোশেখ উদযাপিত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে দিনব্যাপি অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। প্রত্যুষে শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে উপজেলা চত্বর থেকে নানান সাজে সজ্জিত হয়ে বাঙালির প্রাণের উৎসব নববর্ষের শুভ সূচনা হয়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন ও বাঙালিয়ানাপোশাকসহ বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্য ধারণ করে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে। শোভাযাত্রা শেষে উপজেলা মিলানায়তনে পানতা-ইলিশ পরিবেশন করা হয়। সকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজেদুর রহমানের নেতৃত্বে উপজেলা ক্যাম্পাস থেকে বর্ণাঢ্য  শোভাযাত্রা শুরু হয়। এতে নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান আবু মো. আব্দুল লতিফ অমল, ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফারহানা আক্তার রিনি, নবনির্বাচিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আয়েশা সুলতানা লাকী, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সাইদুর রহমান, নিজামউদ্দিন, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক এম আর বাবু, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে। রাতে  শিল্পকলা একাডেমীর উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ বটতলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উপজেলার খয়েরহুদা ও রায়পুরে বোশেখি ও চৈত্র সংক্রান্তি মেলা বসেছে। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দিনব্যাপি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

মোমিনপুর প্রতিনিধি জানিয়েছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের সরিষাডাঙ্গা বিশু শাহ বটমুলে পয়লা বোশেখ উপলক্ষে গত পরশু সোমবার সন্ধ্যায় বোশেখি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বিশু শাহ বাউল একাডেমীর আয়োজনে মোমিনপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দারের সহযোগিতায় বটমুলের উন্মুক্ত মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশু শাহ বাউল একাডেমীর শিল্প গোষ্ঠী জসীম, রিপন রেজাউল, মোমিনপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দারসহ অনেকে।

অপরদিকে আলমডাঙ্গা উপজেলার বাড়াদী ইউনিয়নের আঠারখাদা সরকারি বিদ্যালয় মাঠ চত্বরে গত রোববার রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় ডি.জে গ্রুপের আয়োজনে বাড়াদী ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি জহুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দার। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাড়াদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, ডিজে গ্রুপের সভাপতি আনারুল ইসলাম, সেক্রেটারি রাজীব বিশ্বাস।

আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে পয়লা বোশেখ উদযাপন করেছে আলমডাঙ্গাবাসী। সকাল ৮টায় উপজেলা পরিষদ থেকে বের করা হয় পয়লা বোশেখের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা।। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আশরাফুল আলম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসান কাদির গনু, সহকারী কমিশনার ভূমি মোহাম্মদ শাহিনুজ্জামান, উপজেলা নিবার্চন অফিসার ফেরদৌস হাসান, সমাজসেবা অফিসার আবু তালেব, কৃষি অফিসার একেএম হাসিবুল হাসান, বিআরডিবি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী খালেদুর রহমান অরুন, সাংগঠনিক সম্পাদক আলম হোসেন, বেলগাছি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সমীর কুমার দে, ভাংবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আসাবুল হক ঠাণ্ডু, আওয়ামী লীগ নেতা জিনারুল ইসলাম বিশ্বাস, বিআরডিবির চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলাম মহিদ, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আহসান উল্লাহ, মাসুদ রানা তুহিন, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সেক্রেটারি টুটুল  খন্দকারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। র‌্যালি শেষে পান্তা-ইলিশ দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। এছাড়াও আলমডাঙ্গার নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে আলমডাঙ্গা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শহরে বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করে। পরে আলমডাঙ্গা প্রাইম পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে বর্ষবরণ ও উপজেলা চেয়ারম্যানদেন সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়। প্রাইম পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা ইদ্রিস খানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী খালেদুর রহমান অরুন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীম আরা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম খান প্রমুখ। এছাড়াও বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক পৌর চেয়ারম্যান সবেদ আলীর নেতৃতে এম সবেদ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শহরে নজরকাড়া বোশেখি র‌্যালি বের করে। এছাড়া আলমডাঙ্গা কলেজিয়েট স্কুল, গোবিন্দপুর এশিয়া ক্লাব, ফ্রেন্ডস ক্লাবসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠন বর্ষবরণ উৎসব পালন করে।

আলমডাঙ্গার আটকপাট ও ফরিদপুর গ্রামে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। আলমডাঙ্গার হারদী গ্রামে ৫ দিনব্যাপি মেলার আয়োজন করা হয়েছে। খাসকররা এলাকায় পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করা হয় এবং ৭ বৈশাখ থেকে শুরু হবে বৈশাখি মেলা।

ডিঙ্গেদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দিনটি উপলক্ষে শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে র‌্যালি, সাংস্কৃতিক ও পিঠামেলা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৯টায় ডিঙ্গেদহ বালিকা বিদ্যালয়ের মাঠে প্রধান অতিথি হিসেবে পিঠা মেলার উদ্বোধন করেন শঙ্করচন্দ্র ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মখলেসুর রহমান, সোহরাওয়ার্দ্দী স্মরণী বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক শাহীনুল হোসেন, পাস’র নির্বাহী পরিচালক ইলিয়াস হোসেন, সহকারী শিক্ষক জামাল উদ্দিন, ইউপি সদস্য শওকত আলী, শিক্ষক লোকমান হোসেন, বাবুল আক্তার, মাহাবুব হোসেন ও মনজুরুল ইসলাম। অপরদিকে উদীচী ডিঙ্গেদহ শাখা ডিঙ্গেদহ বাজারে জারি গানের আয়োজন করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উদীচী জেলা শাখার সেক্রেটারি জহির রায়হান, পাস’র  পরিচালক কাতব আলী, সিডিএফ’র প্রকল্প সমন্বয়কারী চুমকী।

দর্শনা অফিস জানিয়েছে, দর্শনাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এ বছরো দর্শনা অনির্বাণ থিয়েটারের আয়োজনে যেমন খুশি তেমন সাজো প্রতিযোগিতামূলক বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দর্শনা কলেজ মাঠ থেকে র‌্যালির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে অনির্বাণ থিয়েটার কর্তৃপক্ষ। প্রথম প্রভাত র‌্যালিতে অংশ নেয় বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে সিডিএল, মেমনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, লিটিল এনজেলস ইন্টার ন্যাশনাল স্কুল, দক্ষিণচাঁদপুর বিদ্যালয়, দর্শনা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, চিরন্তন দর্শনা, রামাযুস, জেসিডি, শান্তিনগর সংগঠন, দর্শনা প্রেসক্লাব, কেয়াম মেটাল, লালনসংঘ, বন্ধু মহল, সজিব সংগঠন, ওয়েভ ফাউন্ডেশন, প্রত্যয়সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। পরে সন্ধ্যায় অনির্বাণ থিয়েটারের আয়োজনে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষে দামুড়হুদার মদনা ও জয়রামপুরে পড়শি এইড’র উদ্যোগে বর্ণাঢ্য র‌্যালিসহ ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে পয়লা বোশেখ পালিত হয়েছে। সন্ধ্যায় দর্শনা সরকারি কলেজমাঠে অনুষ্ঠিত পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে পুরস্কার বিতরণ করা হয়েছে। র‌্যালি ও আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন অ্যাড. শহিদুল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান জাকারিয়া আলম, অনির্বাণের সভাপতি ফজলুল হক, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।

গাংনী নানা আয়োজনে বাঙালীর প্রাণের উৎসব পালিত

গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গাংনী উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সকাল ৮টার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে মঙ্গল শোভযাত্রা শুরু হয়। উপস্থিত ছিলেন বিদায়ী উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম শফিকুল আলম, গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুস সালাম ও গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজুল ইসলামসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। একই সময়ে দৃষ্টান্ত গোষ্ঠী,  মিতালী ক্লাব, প্রগতি ক্লাব, গাংনী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ, গাংনী পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, সন্ধানী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, গাংনী প্রি-ক্যাডেট অ্যান্ড জুনিয়র হাইস্কুল, ফজলুল হক আইডিয়াল স্কুল, মাতৃছায়া বিদ্যা নিকেতন, গাংনী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফুলকুড়ি শিশু শিক্ষালয়, পৌর মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পৃথক মঙ্গল শোভাযাত্রা করা হয়। এদিকে সকাল ১০টার দিকে মিতালীর আমবাগানে সপ্তাব্যাপি বোশেখি মেলার উদ্বোধন করেন মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন। উপস্থিত ছিলেন পৌর মেয়র আহম্মেদ আলীসহ মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দ।

ঝিনাইদহ অফিস জানিয়েছে, অনাবিল উৎসব আনন্দে ঝিনাইদহবাসী পালন করেছেন বাংলা নববর্ষ। পুরনো বছরের জীর্ণতাকে বিদায় দিয়ে নতুনকে বরণ করে নিতে সোমবার ভোর থেকেই রাস্তায় নেমেছেন সর্বস্তরের মানুষ। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য কর্মসূচি পালিত হয়েছে। উৎসব আর আমেজে যেন নিজেদের স্বতন্ত্র রূপ ও বৈশিষ্ট্যের জানান দিচ্ছেন সবাই।

সকাল সাড়ে ৭টায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শহরের ওয়াজির আলী হাইস্কুল মাঠ থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রায় জেলা প্রশাসক শফিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে পান্তা খাওয়া পর্ব, যেমন খুশি তেমন সাজ, আবৃত্তি ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, লাঠিখেলা, ঘুড়ি উড়ানো, সাপখেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে।

শহরের পুরাতন ডিসিকোর্ট চত্বরে ১৫ দিনব্যাপি বোশেখি মেলার আয়োজন করা হয়েছে। শহরের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে মানুষের ঢল নেমেছে। নববর্ষকে বরণ করতে সরকারি কেসি কলেজ, সরকারি নুরুননাহার মহিলা কলেজ, সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, শিশুকুঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, পৌর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কাঞ্চননগর মডেল হাইস্কুল, ওয়াজির আলী হাইস্কুল, বিহঙ্গ সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র, শিল্পীসংঘ, বাউল সংঘ, গণশিল্পী সংস্থা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, অঙ্কুর নাট্য একাডেমী, ঝিনেইদহ থিয়েটার ফুলকুঁড়ি আসর, মানবাধিকার নাট্য পরিষদ, জাগরণ সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, জেলা সাহিত্য পরিষদ, টিআইবিসহ বিভিন্ন সংগঠন দিনব্যাপি নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করে।

মহেশপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আজ বুধবার মহেশপুর উপজেলার ফতেপুর বকুল তলা বাজারে পয়লা বোশেখ উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী চড়কপূজার মেলা শুরু হচ্ছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের এ মেলার সভাপতি সাধন কুমার ঘোষ জানান, ইংরেজ শাসন আমল থেকে এ চড়কপূজার উৎসব চলে আসছে। আমাদের বাপ-দাদারাও এ উৎসব পালন করে গেছে। তাই তাদের দেখাদেখি আমরাও এ উৎসবটি আনন্দের সাথে পালন করে থাকি। মেলার প্রধান আকর্ষণ শেষ দিনে চড়কপূজা উপলক্ষে হিন্দু ধর্মীয় কিছু লোক সন্ন্যাসী সেজে পিঠে লোহার বড়সি ফুঁটিয়ে চড়ক গাছে তুলে রসির সাথে বেধে ঘুরানো। এবার একে একে ৭ জন সন্ন্যাসীকে এভাবে পিঠে বড়সি ফুঁটিয়ে চড়ক গাছে তুলে ঘুরানো হয়েছে। এবার যারা সন্ন্যাসী সেজেছে তারা হলেন- শ্রী মনা কর্মকার, শ্রী প্রবীর কুমার হালদার, শ্রী রথীন্দ্রনাথ, শ্রী ভীম কুমারসহ ৬ জন।

আমঝুপি প্রতিনিধি জানিয়েছে,  আমঝুপিতে পালিত হয়েছে বর্ষবরণ উৎসব। এ উপলক্ষে আমঝুপি গন্ধরাজ ক্লাবের উদ্যোগে আমঝুপি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম গোলাম মোস্তফার বাসভবনের সামনে থেকে একটি বোশেখি র‌্যালি বের করে। র‌্যালিটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। র‌্যালি শেষে গন্ধরাজপুর খেলার মাঠে গ্রামবাংলার বিভিন্ন ইভেন্টের খেলা অনুষ্ঠিত হয়। খেলা শেষে সদর উপজেলা তৃণমূল দলের সভাপতি ওমর ফারুক লিটন ও প্রভাষক জাহির হোসেন চঞ্চল বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। এছাড়াও আমঝুপি ক্রীড়া একাদশ নীলকুঠি চত্বরে দিনব্যাপি বোশেখি মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন। উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ প্রশাসক অ্যাড. মিয়াজান আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুস সামাদ ববলু বিশ্বাস, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. ইব্রাহীম শাহিন, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল মারেক মোল্লা, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বোরহাদ উদ্দীন চুন্নু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অ্যাড. পল্লভ ভট্টাচার্য। সভাপতিত্ব করেন বোশেখি উদযাপন কমিটির সভাপতি ক্যাপ্টেন (অব.) গনি-উল আযম।

মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুর মুজিবনগরে বাংলা নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত সোমবার সকালে পল্লী উন্নয়র অফিসার মনিরুজাম্মানের নেতৃত্বে মুজিবনগর উপজেলা পরিষদ থেকে একটি মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়ে মুজিবনগর উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে শেষ হয়। পরে উপজেলা চত্বরে পান্তা উৎসব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মুজিবনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মোল্লাসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ। এছাড়া দারিয়াপুর দক্ষিণপাড়া খাঁনপুর যুবসংঘ, মানিকনগর যুবসংঘের আয়াজনে নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠিত হয়।

দৌলতপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পয়লা বোশেখ পালিত হয়েছে। দৌলতপুর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে সকাল ৮টায় বাংলা নববর্ষের শোভাযাত্রা উপজেলা পরিষদ প্রদক্ষিণ করে। শোভাযাত্রায় উপজেলা চেয়ারম্যান হারেজ উদ্দিন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোকতার হোসেনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়। এরপর উপজেলা পরিষদ চত্বরে পান্তা ইলিশ পরিবেশন করা হয়। শেষে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীর শিল্পীরা  বৈশাখ ও নববর্ষের গান পরিবেশন করে। এছাড়া বর্ষবরণ উপলক্ষে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করে।