দর্শনা রেলইয়ার্ডে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আবারো লুটেরাচক্রের দু পক্ষের তাণ্ডব হামলা-পাল্টা হামলা

দর্শনা অফিস: দর্শনা রেলইয়ার্ডে আবার অপতৎপরতা বেড়েছে লুটেরাচক্রের। লুটপাটে মেতে উঠেছে লুটেরাচক্রের সদস্যরা। ইয়ার্ডে রক্ষিত পণ্যভর্তি ওয়াগন থেকে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে লুটপাটের ঘটনা। আধিপত্যর বিস্তারে লুটেরাদের মধ্যেই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটছে অহরহ। নিরপত্তাকর্তাকে ম্যানেজ করেই লুটপাট হচ্ছে। এ রুটে আমদানি করতে আগ্রহ হারাচ্ছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। দর্শনা রেলইয়ার্ডে রয়েছে হরেক নামের লুটেরাবাহিনী। ১০/১২টি লুটেরাচক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছে চিহ্নিতরা। ইয়ার্ডে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করাকে কেন্দ্র করে আবারো ঘটলো নগ্ন তাণ্ডব। লুটেরাচক্রের মধ্যে ঘটেছে হামলা-পাল্টা হামলা, বাড়ি-ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট। উভয়পক্ষের মধ্যে আহত হয়েছে মহিলাসহ কমপক্ষে ৫ জন। ১৩ জনের বিরুদ্ধে থানায় করা হয়েছে লিখিত অভিযোগ। এ ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি।

জানা গেছে, গতপরশু বুধবার বিকেলে দর্শনা সোনালী এজেন্সির মাধ্যমে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান যশোরের এ আকবর এন্টারপ্রাইজের সয়াবিন ভূষিভর্তি ৩৮ ওয়াগন বিশিষ্ট ৱ্যাক ও ৮ ওয়াগন মাছের খাবার ভর্তি ৱ্যাক দর্শনা রেলইয়ার্ডে পৌঁছায়। দুটি ৱ্যাক ইয়ার্ডে পৌঁছানের সাথে সাথে লুটেরাদের মধ্যে বইতে শুরু করে আনন্দ। রাতের আঁধারে লুটপাটের প্রস্তুতি নিতে থাকে সন্ধ্যা থেকেই। রাত ২টার দিকে কয়েকটি লুটেরাচক্র হানা দেয় ইয়ার্ডে। এ সময় ইয়ার্ডে আধিপত্য বিস্তার করাকে কেন্দ্র করে লুটেরাদের দু পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। ঘটে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা। রাত ৩টার দিকে একপক্ষ অপরপক্ষের সদস্যদের বাড়িতে পাল্টা-পাল্টি হামলা চালায়। বাড়ি-ঘর ও ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ করেছে অনেকেই। লুটেরাদের পালাপাল্টি হামলায় শান্তিপাড়া রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ভয়ে ঘর ছাড়ে অনেকেই। পাল্টাপাল্টি হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে দর্শনা মোবারকপাড়ার বিল্লাল হোসেনের ছেলে শামীম, শান্তিপাড়ার আলতাফ মিয়ার ছেলে ইয়ার্ডের পাহারাদার সরদার বাবলু, রহম খার ছেলে আকরাম খা, আলাউদ্দিনের ছেলে মহিদুল, টুকু মিয়ার ছেলে জসিম, বাবর আলীর ছেলে খালেক, আ. হাকিমের ছেলে মনির হোসেনসহ ৯ জনের বাড়ি-ঘর।

এদের মধ্যে আকরাম খা, বিল্লাল হোসেনসহ বেশ কয়েকজন অভিযোগ করে বলেছেন, হামলাকারীরা ভাঙচুরসহ নগদ টাকা ও সোনার গয়নাগাটি লুট করেছে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের মধ্যে আহত হয়েছেন ২ মহিলাসহ কমপক্ষে ৫ জন। রাত আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত টানা ১ ঘণ্টা শান্তিপাড়া, মোবারকপাড়া ও পরাণপুর বেলে মাঠপাড়া ছিলো হামলাকারীদের দখলে। খবর পেয়ে দর্শনা আইসি পুলিশ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে পৌঁছায় ঘটনাস্থলে। পরিস্থিতি শান্ত করতে পারলেও হামলাকারীদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিল্লাল হোসেন, আকরাম খা ও মনির হোসেন গতকাল বৃহস্পতিবার দামুড়হুদা থানায় জসিম, সোহেল, ঘটু, শাহরুল, মামুনসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। তবে অপরপক্ষ থানায় কোনো অভিযোগ করেছে কি-না জানা যায়নি। ইয়ার্ডে লুটের রাজত্ব কায়েম করাকে কেন্দ্র করে দর্শনা শান্তিপাড়ায় হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় এখনো কমেনি উত্তেজনা। আবারো দুপক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।

এদিকে ইয়ার্ডে লুটেরাদের অব্যাহত তাণ্ডব ও লুটপাটের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দর্শনা সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ গতকালই সাক্ষাত করেছেন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগরের সাথে। সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লুটেরাদের তাণ্ডবের কথা শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন এমপি টগর। এছাড়া দামুড়হুদা থানার নবাগত অফিসার ইনচার্জ শিকদার মশিউর রহমান ও দর্শনা আইসি ইনচার্জ এসআই মিজানুর রহমান বলেছেন, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Leave a comment