সাংবাদিক এবিএম মূসা আর নেই

স্টাফ রিপোর্টার: দেশের মানুষকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসা। গতকাল বুধবার বেলা সোয়া ১টার দিকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এবিএম মুসার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি  আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

১৯৩১ সালে ফেনীর ফুলগাজী থানার ধর্মপুর গ্রামে খ্যাতিমান এ সাংবাদিকের জন্ম হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ৮৪ বছরে পা রাখেন প্রবীণ এ সাংবাদিক। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সদস্য প্রথিতযশা এই সাংবাদিক কিছুদিন দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তারা শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। এদিকে এবিএম মুসার মৃত্যুর সংবাদে সাংবাদিক মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে।

এবিএম মুসার ছেলে ডা. নাসিম মুসা জানান, তার পিতার প্রথম জানাজা বাদ মাগরিব মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের নিজ বাসভবনে অনুষ্ঠিত হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে দ্বিতীয় জানাজা, এরপর দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে তৃতীয় জানাজা হবে। তবে কোথায় তাকে দাফন করা হবে সে বিষয়ে পারিবারিকভাবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান তিনি। একই সাথে রাজধানীর মিরপুরে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করার আশা প্রকাশ করেন তিনি।

প্রবীণ এ সাংবাদিক বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। গত ২৯ মার্চ তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত সোমবার রাত আড়াইটার দিকে তার অবস্থা  খারাপ হলে তাকে লাইফসাপোর্ট দেয়া হয়। হাসপাতালে ভর্তির পর এবিএম মূসাকে কয়েকবার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রেও (আইসিইউ) রাখা হয়। এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ল্যাবএইড হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই সময় তার শরীরে রক্ত দেয়া হলে তা ভেঙে যেতে থাকে ডা. বরেণ চক্রবর্তীর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

এবিএম মূসা ১৯৫০ সালে দৈনিক ইনসাফের মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন। ওই বছরেই তিনি ইংরেজি দৈনিক পাকিস্তান অবজারভারে যোগ দেন। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান অবজারভারে রিপোর্টার, স্পোর্টস রিপোর্টার, বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় সরকার পাকিস্তান অবজারভার বন্ধ করে দিলে তিনি সংবাদে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি বিবিসি, সানডে টাইমস প্রভৃতি পত্রিকার সংবাদদাতা হিসেবে রণাঙ্গন থেকে সংবাদ প্রেরণ করতেন। স্বাধীনতার পর তিনি বিটিভির মহাব্যবস্থাপক, মর্নিং নিউজের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৮ সালে এবিএম মূসা ব্যাংককে অবস্থিত জাতিসংঘের পরিবেশ কার্যক্রমের (এসকাপ) এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক পদে যোগ দেন। দেশে ফিরে তিনি ১৯৮১ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এবং ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার মহাব্যবস্থাপক ও প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সালে তিনি কিছুদিন দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

জনপ্রিয় কলাম লেখক এবিএম মূসা  বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে আলোচক এবং সংবাদ বিশ্লেষক হিসেবে অংশ নিয়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। এবিএম মূসা জাতীয় প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং ক্লাবের আজীবন সদস্য। তিনি এ পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের চারবার সভাপতি এবং তিনবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন।

Leave a comment