স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি নামে আছে : কাজে নেই
স্টাফ রিপোর্টার: প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষাদান ও সার্বিক উন্নয়নের জন্য সরকারি বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি (এসএমসি) গঠন করে ক্ষমতা দেয়া হলেও অধিকাংশ কমিটি নিষ্ক্রিয়। ফলে যে উদ্দেশ্য নিয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে তা কোনো কাজেই আসছে না। এই কমিটি মূলত নামে আছে, কাজে নেই। দেশের ৯০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান সংস্থা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরই বলছে, কমিটি ঠিকমতো কাজ করছে না। আর স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকরা জানিয়েছেন, প্রতি মাসের শেষ সপ্তায় কমিটিরসভা হওয়ার নিয়ম থাকলেও মাসের পর মাস কোনো সভা হয় না। তবে প্রধান শিক্ষক সদস্যদের বাড়ি গিয়ে সভায় অংশগ্রহণ করছেন বলে সদস্যদের স্বাক্ষর নিয়ে আসেন। আবার কখনো সভা হলেও কোরাম পূর্ণ হয় না। কোরাম পূর্ণ দেখানোর জন্য অনুপস্থিত সদস্যদের বাড়ি গিয়ে স্বাক্ষর নিয়ে আসা হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১২ সালের ১৫ নভেম্বর এসএমসি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এ নির্দেশনা অনুসারে কমিটিতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সদস্য সচিব হবেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য মনোনীত একজন পুরুষ ও একজন মহিলা বিদ্যোত্সাহী সদস্য, একজন জমিদাতা সদস্য, নিকটস্থ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক, সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক প্রতিনিধি, শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মধ্য থেকে নির্বাচিত দুজন পুরুষ ও দুজন মহিলা অভিভাবক সদস্য, ইউনিয়ন পরিষদের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের একজন সদস্য এ কমিটির সদস্য হবেন। সকলের ভোটে নির্বাচিত হবেন সভাপতি। বিদ্যালয়ের সকল কার্যাবলি মনিটরিং, শিক্ষক ছাত্রের উপস্থিতি, শিক্ষকদের কর্তব্য পরায়ণতা, পাঠদান তদারকি, শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ, বিদ্যালয় উন্নয়নের জন্য স্থানীয় জনগণের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ, উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ, শতভাগ শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে উপস্থিতি নিশ্চিতকরণসহ ৫০-এর অধিক কাজ করা কমিটির দায়িত্ব। কিন্তু এসব কোনো কাজেই অংশ নিতে আগ্রহী নন কমিটির সদস্যরা। কেন অংশ নিতে আগ্রহী নন, এমন প্রশ্নের জবাবে এক সদস্য বলেন, কমিটির সদস্যরা সচেতন নন। আর্থিক কোনো সম্মানিও নেই । এ প্রতিষ্ঠানে সময় ব্যয়কে তারা অপচয় মনে করেন। এছাড়া এ কমিটি ঠিকমতো কাজ করছে কিনা তাও মনিটরিং করছে না কেউ। ১১ সদস্যের এ কমিটি শিক্ষার মানোন্নয়নে কোনো কাজ না করলেও কমিটি গঠনে রয়েছে রাজনৈতিক প্রভাব। কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপনের আলোকেই দুজনকে মনোনয়নের সুযোগ রয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্যের। এছাড়া শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের মধ্য থেকে অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন করার কথা থাকলেও বেশিরভাগ স্কুলে স্থানীয় সংসদ সদস্য বা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রভাব খাটিয়ে তার পছন্দের চারজন অভিভাবক প্রতিনিধি সদস্য নির্বাচিত করেন। অন্যান্য পদেও তার পছন্দের ব্যক্তিকে মনোনীত করা হয়। এ কারণে প্রধান শিক্ষকের কোনো ভূমিকাই থাকে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কমিটি গঠনে সরকারের উদ্যোগ ভালো। কিন্তু এ কমিটিকে কিভাবে কার্যকর করা যায় সে বিষয়ে কার্যকর পরিকল্পনা নেই। এ কারণে এখানো ৩০ ভাগ শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণি সমাপ্ত করার আগেই ঝরে পড়ে। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের খৈলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এসএমসির সভাপতি হুমায়ুন কবীর বলেন, আমাদের দুই গ্রাম মিলে একটি স্কুল। প্রতি মাসে সভা করার চেষ্টা করি। কিছু সদস্য সভায় আসেন না। যারা উপস্থিত থাকেন না তাদের স্বাক্ষর নিয়ে আসা হয়। এ বিষয়ে বগুড়ার শেরপুরের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, নামে আছে স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি। তার স্কুলের এসএমসির সভাপতি আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি। তিনি জানান, স্কুলের শিক্ষকদের পাঠিয়ে শিক্ষার্থীদের তথ্য নিই। এসএমসির সদস্যদের কাজে লাগানো যাচ্ছে না। তবে স্কুলে কোনো বরাদ্দ এলে তখন সক্রিয় হন সভাপতি ও সদস্যরা। কারণ এ বরাদ্দ থেকে আর্থিক সুবিধা নেয়া যায়।
কাপাসিয়ার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সায়েম মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এ উপজেলায় যাতে নিয়মিত এসএমসিরসভা হয় এ বিষয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছি। সদ্য সরকারি হওয়া শিক্ষক সংগঠনের এক নেতা বলেন, যেহেতু সরকারি শিক্ষক হয়েছি তাই এখন এ বিষয়ে কথা বলা যাবে না। তবে শিক্ষার মান উন্নয়নে এসএমসি ভূমিকা রাখছে না। অথচ তাদের হাতে ক্ষমতা রয়েছে। বরাদ্দ এলে তাদের উপস্থিতি বাড়ে।