প্রতিবন্ধীদের প্রতি আমাদের সকলেরই যত্মবান হওয়া দরকার

 

আমাদের দেশে জনসংখ্যার ৯ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে প্রতিবন্ধী। ২০১০ সালের পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে আসে। গত তিন বছরে জনসংখ্যা যে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। একই সাথে বেড়েছে প্রতিবন্ধী লোকের সংখ্যাও। সে হিসেবে বর্তমানে দেশে আনুমানিক ১ কোটিরও বেশি মানুষ প্রতিবন্ধিতার শিকার।

আমাদের দেশেও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এসব মানুষের জন্য অনেকেই কাজ করছেন। সরকারেরও বিশেষ মনোযোগ আছে বলেই প্রতীয়মান। সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা দূর করা হয়েছে। এখন কোনো বাধা নেই, বরং বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছেলেমেয়েরা সেই সুবিধা কতখানি ভোগ করতে পারছেন, সেই প্রশ্ন রয়ে গেছে। সত্যিকারার্থে আমাদের সমাজ এখনও পর্যন্ত যথার্থ প্রতিবন্ধীবান্ধব হয়ে উঠতে পারেনি। দৈহিক, মানসিক, বাক, শ্রবণ কিংবা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নাগরিকদের ব্যাপারে মুখে এবং কাগজে-কলমে সহানুভূতি প্রদর্শন আর কার্যক্ষেত্রে তাদের সুবিধা-অসুবিধা অনুযায়ী অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার মধ্যে ব্যবধান আছে। সাম্প্রতিক এক জরিপ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রতিবন্ধী ভোটারগণের অনেকেই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন না। কেবল ভোট দেয়ার ব্যাপার বলেই কথা নয়, বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি অফিস ও প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ ভবনই শারীরিক প্রতিবন্ধীদের প্রবেশ কারর জন্য অনুকূল নয়। এমন কি রেলস্টেশন, লঞ্চঘাটে প্রবেশ এবং ট্রেনে লঞ্চে প্রতিবন্ধীরা যাতে সহজেই উঠতে পারেন সে ব্যবস্থাও নেই। অথচ উন্নত বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই প্রতিটি ভবনে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের সহজে প্রবেশ করবার জন্য পৃথক বিশেষ ধরনের সিঁড়ি থাকে। আমাদের দেশে তা তো নেই-ই, প্রতিবন্ধীদের সাহায্য করার জন্যও লোক পাওয়া যায় না। বাসে প্রতিবন্ধীদের জন্য আসন নির্দিষ্ট থাকলেও অনেক সময়ই তা সাধারণযাত্রীরা দখল করে রাখেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাগজপত্রে প্রতিবন্ধীদের ভর্তিতে বাধা না থাকলেও তাদের বিশেষ চাহিদাগুলো অপূর্ণ থেকেই যায়। একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর লেখাপড়ার জন্য বিশেষ পদ্ধতির প্রয়োজন। কিন্তু সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তা নেই।

প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেয়া কিংবা জন্মের পরে কোনো দুর্ঘটনায় প্রতিবন্ধিতার শিকার হওয়ার জন্য তারা দায়ী নয়। তারা সমাজেরই অংশ। সামান্য আনুকূল্য ও যত্ন পেলে সমাজকে তারাও দিতে পারেন অনেক কিছু। বিশ্বের ইতিহাসে এমন অনেক মহান মানুষের নাম লেখা রয়েছে, যারা প্রতিবন্ধী হয়েও রেখে গেছেন অনন্যসাধারণ অবদান। কাজেই প্রতিবন্ধী নাগরিকদের প্রতি নিজ নিজ অবস্থান থেকে সকলেরই মনোযোগী ও যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন।

Leave a comment