পোলিওমুক্ত ঘোষণা ও উপমহাদেশের বাস্তবতা

 

অসংখ্য শিশু পোলিও আক্রান্ত হয়ে অতীতে পঙ্গু হয়ে গেছে, কেউউ ধুঁকে ধুঁকে মারা গেছে। বহুদিন ধরেই বাংলাদেশ এ ভয়ঙ্কর ব্যধি থেকে মুক্তির জন্য শিশুদের প্রতিষেধক বা টিকা খাওয়ানোর কর্মসূচি চালিয়ে আসছিলো। গত তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশে নতুন কোনো পোলিও আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১১টি দেশের সাথে বাংলাদেশকেও পোলিওমুক্ত ঘোষণা করেছে।

দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দেশ এখনো পোলিওমুক্ত হতে পারেনি। দেশ দুটি হচ্ছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। পাকিস্তানের সাথে ভারতের রয়েছে দীর্ঘ সীমান্ত। ফলে ভারতে আবারও পোলিও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়ে গেছে। আবার ভারতে পোলিও সংক্রমণ ঘটলে কিংবা পারিবারিক যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশেও নতুন করে রোগটি প্রবেশ করতে পারে। ফলে টিকা খাওয়ানোর কর্মসূচি এখনই বন্ধ করে দেয়া হবে কি-না, তা নিয়ে আরো চিন্তাভাবনা করতে হবে।

পোলিওমাইলাইটিস বা পোলিও রোগটি শিশুদের পঙ্গুত্ব হিসেবেও পরিচিত। এটি একটি ভাইরাসঘটিত ও অত্যন্ত সংক্রামক রোগ। সাধারণত খাদ্য ও পানীয়ের মাধ্যমে এটি সংক্রমিত হয়। ভাইরাসটি শিশুদের মেরুদণ্ডকে আক্রমণ করে এবং একসময় শিশুকে পঙ্গু করে দেয়। শিশুটি সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায় এবং পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এ ভাইরাস যতোদিন নির্মূল না হবে ও আশপাশের কোনো অঞ্চলে থেকে যাবে, ততোদিন সংক্রমণের ভয়ও থেকে যাবে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে ধর্মীয় জঙ্গি গোষ্ঠী টিকাদান কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করছে। টিকাদান কর্মসূচির অনেক কর্মীকে তারা হত্যাও করেছে। ফলে দেশ দুটিতে টিকাদান কর্মসূচি সফল হতে পারছে না। এ কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় দেশ দুটি ঝুঁকি হিসেবেই থেকে যাবে। বাংলাদেশ পোলিওমুক্ত হলেও এ আশঙ্কা ও ঝুঁকির কথা সবসময়ই বিবেচনায় রাখতে হবে।

অর্থনীতির নানা সূচকে বাংলাদেশ যেমন এগিয়ে চলেছে, তেমনি দারিদ্র্য হ্রাস, শিক্ষার হার বৃদ্ধি, জন্মকালীন মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনাসহ নানা সামাজিক-অর্থনৈতিক সূচকেও দেশটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে ও করছে। সর্বশেষ তাতে যোগ হলো পোলিওর অভিশাপ থেকে মুক্তি। এ ধারা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে অবশ্যই ডায়রিয়া, অপুষ্টি, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গুসহ অন্যান্য রোগব্যধি থেকেও আমরা মুক্ত থাকতে পারবো।

Leave a comment