চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গাসহ দেশের ৭৪টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আগামী ৩১ মার্চ

 

 

আজ মাঠে নামছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী : মধ্যরাতেই শেষ হচ্ছে প্রচার প্রচারণা

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদসহ পঞ্চম দফা উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে আজ শনিবার মাঠে নামছে সশস্ত্র (সেনা ও নৌ), বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা। আগামী সোমবার অনুষ্ঠেয় ভোট গ্রহণের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এসব বাহিনীর সদস্যরা মাঠে নামছেন। ভোটগ্রহণের আগে-পরে মোট পাঁচ দিন তারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন। ইতোমধ্যেই চুয়াডাঙ্গা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনের পূর্ব রাত ১২টা থেকে পরবর্তী রাত ১২টা পর্যন্ত যানবহন চলাচলের ওপর নিশেধাজ্ঞা জারি করেছেন। প্রশাসনের তরফে নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অবাধ পরিবেশে সম্পন্ন করার যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়া হলেও বিএনপি জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে শঙ্কা বিরাজ করছে। ইতোমধ্যেই ভোট ডাকাতির আশঙ্কা প্রকাশ করে আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা ইতোমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলো শনাক্ত করেছে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট কেন্দ্র রয়েছে ৮৫টি। এর মধ্যে সাধারণ কেন্দ্র ৩৪টি, গুরুত্বপূর্ণ ২৭টি ও অধিক গুরুত্বপূর্ণ ২৪টি। আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কেন্দ্র রয়েছে মোট ১০৩টি। এর মধ্যে সাধারণ ভোটকেন্দ্র ৪১টি, গুরুত্বপূর্ণ ৪৪টি ও অধিক গুরুত্বপূর্ণ ১৮টি।

পঞ্চম দফায় চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গাসহ ৭৪ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আজ মধ্যরাতে নির্বাচনী এলাকাগুলোতে সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা শেষ হচ্ছে। শেষ সময়ে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১ হাজার ৬৩ প্রার্থী। উপজেলা নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ফৌজদারী কার্যবিধির ১৩১ ধারা প্রয়োগের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। কোথাও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াই সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের তা ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। নির্বাচনে সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের মধ্যে রয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এছাড়াও প্রতিটি উপজেলায় একজন বিচারিক ও চারজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে রয়েছেন। তারা তাৎক্ষণিক সাজা দিতে পারবেন।

নির্বাচনী সহিংসতা দমন করা নিয়ে উভয় সঙ্কটে পড়েছে নির্বাচন কমিশন। একদিকে যথেষ্ট ক্ষমতা না দিয়ে ঢালাওভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ আনা হচ্ছে। অন্যদিকে সহিংসতা ও অনিয়ম হলে তার দায়ভারও তাদেরই নিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় পঞ্চম ধাপের নির্বাচনেও ব্যাপক সহিংসতার আশঙ্কা করছে কমিশন। কিন্তু চাইলেও অনেক ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে পারছে না। সূত্র জানায়, উপজেলা নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে যথেষ্ট কঠোর থাকতে চেয়েছে কমিশন। এতেও সহিংসতা এড়ানো সম্ভব হয়নি, বরং আগের তুলনায় তা বেড়েছে। মূলত প্রশাসনসহ সর্বত্র দলীয়করণের ফলেই ইসির উদ্যোগ ভেস্তে গেছে। এ ছাড়া ক্ষমতাসীনদের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে আইনি দুর্বলতাও অন্যতম কারণ।

আগামী ৩১ মার্চ অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ১ হাজার ৬৩ প্রার্থীর মধ্যে ভোটের লড়াই হবে। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৩৬৪, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪২০ এবং সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৭৯ জন। এসব প্রার্থীর সোমবার ভাগ্য নির্ধারণ হবে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ সমর্থিত আশাদুল হক বিশ্বাস। তার প্রতীক আনারস। বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মামুন অর রশীদ ঘোড়া মার্কা প্রতীক নিয়ে জোর প্রচার প্রচারণা চালালেও গতকাল তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। বিএনপির ৬ জন প্রার্থীর মধ্যে শেষ পর্যন্ত ৪ জন বিএনপি নেতা মজিবুল হক মালিক মজুকে সমর্থন দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। মজিবুল হক মালিক মজু চিংড়ি মাছ প্রতীক নিয়ে শুরু থেকে জোর প্রচারণার পাশাপাশি ৪ জনের সমর্থন নিয়ে বিএনপি নেতা কর্মীদের এক কাতারে দাঁড় করানোর প্রেক্ষিতে দলীয় নেতাকর্মী সমর্থকদের মাঝে আশার আলো জাগিয়েছে। যদিও দিন গড়ানোর সাথে সাথে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে নানা শঙ্কা দানা বাধছে। নেতাকর্মীদের অনেকেই মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, ঐক্যবদ্ধই মূল সাহস। ভাইস চেয়ারম্যান পদে আজিজুল হক আওয়ামী লীগ সমর্থিত, সাইফুর রশীদ ঝণ্টু বিএনপি সমর্থিত, আব্দুর রউফ জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। অপর প্রার্থী বিএনপি নেতা মফিজুর রহমান মনা ইতোমধ্যেই বিএনপি প্রার্থী সাইফুর রশীদ ঝণ্টুর চশমা প্রতীকে সমর্থন জানিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেত্রী কহিনুর বেগম ফুটবল, বিএনপি নেত্রী জাহানারা বেগম হাঁস প্রতীক, মমতাজ বেগম কলস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে রয়েছে ৪ জন। বিএনপি সমর্থিত শহিদুল কাউনাইন টিলু দোয়াত-কলম, বিএনপি একাংশের বতর্মানে বহিষ্কৃত সানোয়ার হোসেন লাড্ডু মোটরসাইকের প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন হেলাল উদ্দীন। তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে জোর প্রচারণায় রয়েছেন। জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত প্রার্থী নূর মোহাম্মদ টিপুর প্রতীক কাপ-পিরিচ। ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ৭ জন। এরা হলেন- আহম্মেদ জালাল, কাজী খালেদুর রহমান, এমদাদুল হক, গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস, জাহাঙ্গীর আলম, মাহাবুবু হোসাইন, মিজানুর রহমান মধূ। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন। এরা হলেন- পাপিয়া ইসলাম, পারুলা খাতুন রাবেয়া, শামীম আরা খাতুন, হাফিজা খাতুন, সামসাদ রানু।

গত ২৩ মার্চ চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোটগ্রহণ শুরু পর থেকেই কেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতি করা হয় বলে অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি-জামায়াত। এরপর চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন কেমন হবে? এ নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই। গ্রাম পর্যায়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভোট দিতে পারা না পারা নিয়ে নানা আশঙ্কা ভর করেছে।

নির্বাচনের পূর্ব রাত ১২টা থেকে পরবর্তী রাত ১২টা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা উপজেলায় বেবিট্যাক্সি, অটো রিকশা, ইজিবাইক, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জীপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক ও টেম্পো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জনস্বার্থে এ গণবিজ্ঞপ্তি চুয়াডাঙ্গা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দেলোয়ার হোসাইন জারি করেছেন।

Leave a comment