খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে অন্যতম অন্তরায় দুর্নীতি

 

দুর্নীতি যেকোনো দেশে উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। দেশে দুর্নীতি যেন লাগামহীন ঘোড়া! প্রায় প্রতিটি স্তরে দুর্নীতি শিকড়-বাকড় গেড়েছে।  গণমাধ্যম এবং দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার জরিপ ও গবেষণা প্রতিবেদনে এমনই অনাকাঙ্ক্ষিত চিত্র মাঝে মাঝেই উঠে আসে। সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) তাদের প্রতিবেদনে খাদ্যখাতে ভয়াবহ দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- আইনি ফাঁকফোকড়ের কারণে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। এ খাতের দুর্নীতি এমন এক পর্যায় পৌঁছেছে যে, এ নিয়ে উৎপাদক, বিক্রেতা, জনসাধারণ, তদারকি সংস্থা, সরকার, দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ী, গণমাধ্যমের কোনো মাথাব্যথা নেই।

খাদ্যখাতের দুর্নীতি রোধে সরকারের নানা উদ্যোগ রয়েছে, টিআইবির অনুসন্ধানি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের কোনো উদ্যোগই ফলপ্রসূ হয়নি। এটা সত্য, যেকোনো পরিকল্পনার সফলতা নির্ভর করে তার সফল বাস্তবায়নের ওপর। আর এটি করতে না পারলে ফল হয় উল্টো। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি দেশ। কিন্তু দেশের নাগরিকদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া অতীব দুঃখের। খাদ্যখাতে দুর্নীতির একটি বড় কারণ শনাক্ত করা হয়েছে, এ খাতের বিশেষ স্বার্থান্বেষীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারা এবং সংশ্লিষ্টরা জড়িত থাকা। আইনি ফাঁকফোকড়ের কারণেই দুর্নীতিগ্রস্ত ও প্রভাবশালী আমদানিকারক ও উৎপাদকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয় না বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এটা ভেবে অবাক হতে হয়, দেশের প্রতি জেলায় খাদ্য আদালত প্রতিষ্ঠার বাধ্যবাধকতা থাকলেও সরকার আইন করে এ বাধ্যবাধকতা রোধ করেছে। সরকারের এ ধরনের উদ্যোগ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের অন্তরায় বলে মনে হওয়াটাই যৌক্তিক।

টিআইবি সম্প্রতি যে তথ্য তুলে ধরেছে তা নিয়ে হয়তো সরকার কিংবা সংশ্লিষ্ট বিভাগের ভিন্নমত থাকতে পারে। কিন্তু অনস্বীকার্য যে, একমাত্র দুর্নীতির কারণেই আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে অচলাবস্থা বিরাজমান। দুর্নীতির কারণে ‘পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প’ থেকে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন স্থগিতই ‘দুর্নীতি’র সবচেয়ে বড় উদাহরণ। আমরা মনে করি একমাত্র সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছাই পারে রাষ্ট্র থেকে দুর্নীতি উচ্ছেদ করতে। দেশের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে এটি করা সরকারেরই অন্যতম দায়িত্ব। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন খাতের দুর্নীতি বার বার আলোচনায় আসা দেশবাসীর জন্য যেমন লজ্জার, তেমনি সরকারের জন্যও এটি বিব্রতকর। সুতরাং সরকারকেই এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

Leave a comment