ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলা নির্বাচন আজ : লড়াই হবে দ্বিমুখি

 

ঝিনাইদহ অফিস: বাউল সম্রাট লালন শাহ এবং তার গুরু সিরাজ সাঁইয়ের জন্মস্থান ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলা পরিষদের নির্বাচন আজ রোববার অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

নির্বাচন উপলক্ষে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। গতকাল শনিবার দুপুরে প্রিসাইডিং অফিসাররা তাদের নির্বাচনী মালামাল ও ব্যালট পেপার বুঝে নেন সহকারী রিটার্নি কর্মকর্তার কাছ থেকে। বিকেলে ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটের সরঞ্জামসহ কর্মকর্তারা পৌঁছেছেন। হরিণাকুণ্ডু উপজেলাজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা রয়েছে অনেক বেশি। র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবির পাশাপাশি সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। এছাড়াও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি তাৎক্ষণিক বিচারের জন্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্ব পালন করবেন।

একটি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৩৪ হাজার ৮২৮। জেলার ৬টি উপজেলার মধ্যে ৫টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ও ২৭ ফেব্রয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংসদ নির্বাচন একতরফাভাবে হলেও এ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করছে। ফলে এখানে ভোটের মূল্যায়ন হবে বলেও জানান সাধারণ ভোটাররা।

নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী হরিণাকুণ্ডু উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক চাঁদপুর ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাড. এমএ মজিদ মোটরসাইকেল প্রতীক, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি রবিউল ইসলাম আনারস প্রতীক ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রার্থী মাও. আকরাম হোসাইন দোয়াত-কলম প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাধারণ ভোটাররা জানান, চেয়ারম্যান পদে মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর দ্বিমুখি লড়াই হবে। ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মো. শহিদুল ইসলাম শিলু চশমা প্রতীক, জামায়াত সমর্থিত রেজাউল ইসলাম টিউবওয়েল প্রতীক, স্বতন্ত্রপ্রার্থী আবুল হাসান তালা প্রতীক ও মো. আমিরুজ্জামান চৌধুরী উড়োজাহাজ প্রতীক নিয়ে ভোটযুদ্ধে লড়ছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি প্রার্থী না দেয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী শহিদুল ইসলাম শিলুর সাথে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী রেজাউল ইসলামের সাথে লড়াই হবে বলে ভোটাররা জানান। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী পদে বিএনপি সমর্থিত সেলিনা খাতুন কলস প্রতীক, আওয়ামী লীগ সমর্থিত মাহমুদা আক্তার কেয়া ফুটবল প্রতীক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোছা. নাছিমা আক্তার মায়া হাঁস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মহিলা ভাইস চেয়াম্যান পদে লড়াই হবে ত্রিমুখি।

এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর তৃণমূল নেতাকর্মী ও ভোটারদের মধ্যে বিরাজ করছে ব্যাপক উৎসাহ আমেজ। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলেও স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে অংশ নেয়ার উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে উপজেলা বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীদের মধ্যে। যার ফলে তারা জোটগতভাবে দিয়েছেন একক প্রার্থী। নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারেও আশাবাদী এই দু দলের নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কোন্দল ভুলে কাজ করেছন নিজ দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে।

এ উপজেলার ৬২টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩১টি ব্যাপক ঝুঁকিপূর্ণ। চাঁদপুর ইউনিয়নের মোকিমপুর, রঘুনাথপুর ইউনিয়নের ভবিতপুর, পোড়াহাটি, তোলা, শ্রীফলতলা, গাড়াবাড়িয়া, ফলসি ইউনিয়নের কুলবাড়িয়া, কাপাশহাটিয়া ইউনিয়নের ভাতুড়িয়া, ঘোড়াগাছা, শিতলী, শাখারীদহ, দৌলতপুর ইউনিয়নের ফতেপুর, দখলপুর, কেবি একাডেমী, সোনাতনপুর, রিশখালী, গোবরাপাড়া, হিঙ্গেরপাড়া, তাহেরহুদা ইউনিযনের ভবানীপুর গ্রামের দুটি, নারায়ণকান্দি, তাদেরহুদা, জোড়াদহ ইউনিয়নের ভেড়াখালী, লালন একাডেমী, ভায়না ইউনিয়নের তৈলটুপি, বাকচুয়া, দোবিলা, কালিশঙ্করপুর ও পৌর এলাকার শুড়া রেজি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চটকাবাড়িয়া এবং মান্দারতলা জোড়াপুকুরিয়া ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ বলে প্রশাসনসূত্রে জানা গেছে।

তবে নির্বাচনে অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনী, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াও স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে থাকবে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহকারী রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন।

সর্বশেষ ২০০৯ সালের নির্বাচনে এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জামায়াত নেতা মোতাহার হোসেন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। পুলিশ কনস্টেবল ওমর ফারুক হত্যামামলায় বর্তমানে তিনি জেলহাজতে রয়েছেন।

Leave a comment