সনাতন ডাকবাংলোটি ভেঙে মডেল ডাকবাংলোতে রুপান্তরের জন্য হুইপের দৃষ্টি আকর্ষণ

 

দামুড়হুদার ডাকবাংলো অরক্ষিত : প্রয়োজন ব্যবস্থা গ্রহণে

তাছির আহমেদ: দামুড়হুদা উপজেলা সদরের প্রবেশদ্বারে ৩৭ বছর ধরে অবস্থান করছে দামুড়হুদার ডাকবাংলো। তিন যুগ ধরে চল্লিশ শতক জমির ওপর ডাকবাংলোটি চোখের সামনে অবস্থান করলেও এখনো অনেকেই জানে না এর নাম ডাকবাংলো। ডাকবাংলোটি তার অস্তিত্ব না হারালেও এ জনপদের মন থেকে সে হারিয়েছে তার নাম। নামবিহীন আর অযন্ত অবহেলায় পথ চলতে চলতে সে আজ বড় ক্লান্ত। দীর্ঘদিন ধরে সুষ্ঠু তদারকির অভাবে এলাকার মানুষ এখন তার সাথে করছে দুর্ব্যবহার। তাই সে আকুতি জানাচ্ছে সুনামের সাথে বাঁচার।

দামুড়হুদা উপজেলা শহরে প্রবেশের প্রধান সড়কের ধারেই এ ডাকবাংলোটির অবস্থান। এর পূর্বদিকে রয়েছে স্টেডিয়াম মাঠ এবং এর দক্ষিণ দিকে দামুড়হুদার অডিটোরিয়াম হল। ডাকবাংলোটি ১৯৭৭ সালে স্থাপিত হয়। সেই থেকে তার এভাবেই পথ চলা। বয়সের ভারে তার ছাঁদ ফুঁড়ে বৃষ্টির পানিতে তার মেঝে সয়লাবের কারণে চলতি বছরেই তা সংস্কার করা হয়েছে। এছাড়া তার রুপের আর কোনো কিছুর সংস্কার করা হয়নি। তদারকির অভাবে তার সীমানার মধ্যে মাদকাসক্তের আড্ডা দিন দিন বেড়েই চলেছে। দিনের বেলায় গাঁজা সেবনের কোনো চিহ্ন এরমধ্যে পড়ে থাকতে দেখা না গেলেও, এলোমেলোভাবে পড়ে আছে অসংখ্য ফেনসিডিলের খালি বোতল। আর প্রধান গেটের দেয়ালের সাথে পড়ে আছে বড়বড় কাঠের গুড়ি। প্রধান গেট ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকায় চলতি পথের পথিকেরা গেটের ভীতরের দু কোণায় প্রসাব করতে ভুল করে না। সে হিসেবে ডাকবাংলোটি বর্তমানে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে প্রসাবখানা হিসেবে।

ডাকবাংলোটি দেখভালের দ্বায়িত্বে থাকা আজিজুল হক জানান, ঘটনা সত্য! মেন গেটের সাইড পকেট নেই। সে হিসেবে মেন গেট সবসময় বন্ধ থাকে না। প্রসাব ফেরার অযুহাতে ওরা এসব করে থাকে। কারা করে তা উনি বলতে পারবেন না। কারণ অন্ধকারে দেখা যায় না। আবার দিনের বেলায় ঢুকতে নিষেধ করলেও উনারা শোনেন না। তিনি আরো জানান, এ ডাকবাংলোয় রয়েছে দুটি বেডরুম ও একটি ডাইনিংরুম। খাট পালঙ্কগুলো সেই মান্ধাতার আমলের। এ প্রতিষ্ঠানটি জেলা পরিষদের তাই সরকারি কোনো ব্যক্তির জন্য একটি রুম ও একটি খাটের জন্য তাকে প্রতিদিন পঞ্চাশ টাকা ভাড়া দিতে হবে। আর বেসরকারি ব্যক্তির জন্য একশ টাকা ভাড়া দিতে হবে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ হামিম হাসান দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে জানান, দামুড়হুদার ডাকবাংলোটি অবশ্যই জেলা পরিষদের। সরকারি ও বেসরকারি ব্যক্তিদের নিকট দিন চুক্তিতে ডাকবাংলোটি ভাড়া দেয়া হয়ে থাকে। ভাড়া নিতে হলে বিধি নিষেধ মানতে হবে। দামুড়হুদার এ ডাকবাংলো থেকে গত মাসে কতো টাকা আয় হয়েছে তার হিসাব জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওখান থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে ওই ডাকবাংলোর বিদ্যুত বিলই হয় না। তাহলে কি বছর বছর গচ্ছা যায়? অনেকটা সেকরমই! এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন কী? এ প্রশ্নোতরে তিনি বলেন, না এখনো নেয়া হয়নি, তবে হুইপ স্যার ইচ্ছে করলে ডাকবাংলোটি ভেঙে একটি মডেল ডাকবাংলো তৈরি করতে পারে। আপনারা উনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন।

এলাকার সুধীমহল জানান, দামুড়হুদার ডাকবাংলোটি দীর্ঘদিন কোনো সংস্কার না করা ও সুষ্ঠু তদারকির অভাবে বর্তমানে অবস্থান করছে অরক্ষিতভাবে। এ বাংলোতে নেই পর্যাপ্ত রুমের ব্যবস্থা, আবার যা আছে তাতে নেই আধুনিকতার ছোঁয়া। বাউন্ডারির সীমানা পাঁচিলের উচ্চতা খুব ছোট হয়ে গেছে, ওই পাঁচিলের ওপরে নেই কোনো কাটা তারের বেড়া। এর প্লাষ্টার অনেক আগেই খঁসে খঁসে পড়েছে। যার কারণে সরকারি-বেসরকারি কোনো ব্যক্তি বা টিম এ বাংলোকে পছন্দ করেন না। গত সংসদ নির্বাচনে ডাকবাংলোটি সেনাবাহিনীদের পছন্দ হয়নি। উপজেলা নির্বাচনে বিজিবির টিম ডাকবাংলো থেকে মুখ ফিরিয়ে চলে যায় অডিটোরিয়াম হলে। সনাতন এ ডাকবাংলোটি ভেঙে একটি মডেল ডাকবাংলোতে রুপান্তর করলে সে তার স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে এবং সেইসাথে দামুড়হুদাকে সৌন্দর্যে বর্ধিত করবে। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখে সনাতন এ ডাকবাংলোটির প্রতি সুদৃষ্টির জন্য হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে দামুড়হুদার এ মহল।

Leave a comment