সদরুল নিপুল/আশিক পারভেজ: কবিরাজ বললো এ ওষুধগুলো সেবন করলে অপনার বাচ্চা সুস্থ হয়ে যাবে। কোনো ডাক্তারের কাছে যাওয়ার দরকার নেই। নিশ্চিন্তে বাড়িতে চলে গিয়ে ওষুধগুলো খাওয়াতে থাকুন। বিকেলের দিকে ছেলে আমার নিস্তেজ হয়ে নেতিয়ে পড়ে। সন্ধ্যার একটু আগে হাসপাতালে নেয়ার পথে ছেলে আমার মারা যায়। আমি হাসপাতালে না গিয়ে কেন কবিরাজের কাছে গেলাম। ওই তালেব কবিরাজ আমার ছেলের মৃত্যুর জন্য দায়ী। উপরোক্ত কথাগুলো আর্তনাদ করে কেঁদে কেঁদে বলেন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া তিন বছর বয়সী শিশুপুত্র ইয়ামিনের মা লেখজান খাতুন। গত দু দিন ধরে ইয়ামিন ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হলে গতকাল শনিবার সকালে চুয়াডাঙ্গা বাগানপাড়ার আব্দুল তালেব কবিরাজের নিকট প্রথমে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়। বিকেলে ইয়ামিনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে সন্ধ্যার একটু আগে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়ার উদ্দেশে রওনা হয় তার মা। চুয়াডাঙ্গা ছাগল ফার্মের কাছে পৌঁছুলে ফুটফুটে শিশুপুত্র ইয়ামিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে হাসপাতালে পৌঁছানোর পর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের বোয়ালমারী গ্রামের বিশ্বাসপাড়ার মিন্টু বিশ্বাসের ছোট ছেলে ইয়ামিন (৩) গত পরশু শুক্রবার ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। ইয়ামিনের পিতা মিন্টু বিশ্বাস গতকাল সন্ধ্যায় জানান, আমার অনুপস্থিতে আমার স্ত্রী লেখজান খাতুন ইয়ামিনকে তালেব কবিরাজের কাছে নিয়ে যায়। তালেব কবিরাজ ওষুধ দিয়ে বলেন, এ ওষুধগুলো সেবন করলে বাচ্চা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে। বিকেলে ছেলের অবস্থা খুবই খারাপ হলে মাগরিবের নামাজের একটু আগে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হই।
এলাকাবাসী জানায়, অসচেতনার কারণে ফুটফুটে শিশুপুত্র ইয়ামিনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে ডাক্তার থাকতে কেন তাকে কবিরাজের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ইয়ামিনের লাশ বাড়িতে নেয়া হয়। তার পিতা-মাতার আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। দু সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে ইয়াসিন দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। ইয়ামিন ছিলো মা-বাবার আদরের সন্তান।