৭৮টির বেসরকারি ফল- ৩৬টিতে আওয়ামী লীগ, ২৮টিতে বিএনপি, ৭টিতে জামায়াত এবং ১টিতে এলডিপি সমর্থিত প্রার্থী জয়ী

উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতায় নিহত ৩ : ১৩ উপজেলার অন্তত ২৬টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার: তৃতীয় দফা উপজেলা নির্বাচনে ব্যাপক সংঘাত, গোলযোগ, বোমা হামলা, কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, জাল ভোট প্রদান, পোলিং এজেন্ট বের করে দেয়া ও অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনী সহিংসতায় গতকাল শনিবার ভোট গ্রহণের দিন অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। দু শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় ৮ জেলার ১৩ উপজেলার অন্তত ২৬টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। অর্ধশতাধিক ভোট কেন্দ্র সাময়িক স্থগিত করে পুনরায় ভোট নেয়া হয়। আজ ৬ জেলায় হরতালের ডাক দেয়া হয়েছে। ৮১টি উপজেলার মধ্যে গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৭৮টির বেসরকারি ফল জানা গেছে। প্রাপ্ত ফলে চেয়ারম্যান পদে ৩৬টিতে আওয়ামী লীগ, ২৮টিতে বিএনপি, ৭টিতে জামায়াত এবং ১টিতে এলডিপি সমর্থিত প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। এ ছাড়া ৪টিতে আওয়ামী লীগের ও ১টিতে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এছাড়া ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায়, বরিশালের হিজলা ও চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে ফল স্থগিত করা হয়েছে।

ভোট গ্রহণের সময় বেশ কয়েক উপজেলায় নির্বাচন কর্মকর্তাদের মারধর করা হয়েছে। এসব স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিষ্ক্রিয় ছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দিতে বাধা দেয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সামনেই বরিশালের হিজলা উপজেলার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামকে মারধর করে ক্ষমতাসীনরা। বিজিবি মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এ ঘটনায় পুলিশের এক কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়। ওই কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। একইভাবে আরও কয়েক উপজেলায় নির্বাচন কর্মকর্তাদের মারধর করা হয়। নির্বাচনে এসব ঘটনাকে অনভিপ্রেত ও ছোটখাটো সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নির্বাচন সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক। ভোট গ্রহণের সময়সীমা পার হওয়ার প্রায় তিন ঘণ্টা পর শনিবার সন্ধ্যায় প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ছোটখাটো কিছু সহিংসতা ঘটলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সুন্দরভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। মানুষ যখন পরিশালিত হবে, আরও সংযমী হবে তখন নির্বাচনে সহিংসতা কমবে। তিনি বলেন, ৮১ উপজেলায় ৫ হাজার ৪৪৪ ভোট কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ২৬টি স্থগিত হয়েছে, তবে তা আরও বাড়তে পারে। শান্তিপূর্ণভাবে বেশি জায়গায় ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনী সহিংসতার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে মামলা করা হবে বলেও জানান তিনি। এর আগে ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচন মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছিলো। ওই নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। এরপর ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে সহিংসতার মাত্রা বেড়ে যায়। এবার তৃতীয় দফা নির্বাচনে সহিংসতার মাত্রা আরও বেড়েছে।

এদিকে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে কমিশন সূত্র জানায়, হামলা, ব্যালট বক্স ও পেপার ছিনতাই, কেন্দ্র দখলসহ নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় ৮ জেলার ১৩ উপজেলার অন্তত ২৬টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। চাঁদপুরের কচুয়ায় ৪টি ও হাজীগঞ্জে ২টি, রাজশাহীর চারঘাটে ১টি, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে ১টি, ফেনীর দাগনভূঞায় ৩টি, কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ৩টি, তিতাসে ১টি ও চৌদ্দগ্রামে ২টি, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় ৩টি, যশোরের মনিরামপুরে ১টি, লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে ১টি, বরিশালের হিজলায় ৩টি এবং ভোলা সদরে ১টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করেন সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা। ভোট গ্রহণ শুরুর চার ঘণ্টার মধ্যেই চার উপজেলার ৯টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। শনিবার বেলা সাড়ে ১২টার মধ্যে ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলায় ব্যালট পেপার ও ব্যালট বক্স ছিনতাইয়ের ঘটনায় আলাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দরাপপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। নির্বাচনের এসব সহিংসতা ও অনিয়মকে ছোটখাটো সমস্যা উল্লেখ করে শনিবার দুপুর ২টায় ইসি সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, ছোটখাটো সমস্যা ছাড়া নির্বাচনে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ চলছে। বাগেরহাটে কেন্দ্রের বাইরে দু প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সমর্থীত প্রার্থীরা যেখানে নির্বাচিত হয়েছে-
আইয়ুব আলী (কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর), আনোয়ারুল ইসলাম (নওগাঁর পোরশা), আকুজার রহমান (নীলফামারী সদর), আবদুর রশীদ (চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ), কামরুল আহসান (নেত্রকোনা সদর), আবু জাহিদ (সিলেটের দক্ষিণ সুরমা), রফিকুল ইসলাম (মৌলভীবাজারের বড়লেখায়), আশরাফ হোসেন খোকন (শেরপুরের শ্রীবরদী), সৈয়দ ফয়জুল আমিন (নড়াইলের লোহাগাড়া), আবুল কালাম আজাদ (জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ), আবুল হাশেম (শরীয়তপুর সদর), শামসুদ্দিন কালু (নাঙ্গলকোট), ফরিদুল ইসলাম (দিনাজপুর), আল-মামুন (চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডু), তরিকুল আহসান (বরিশালের মুলাদী), গাজী গোলাম মোস্তফা (গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া), কামাল উদ্দিন আকন্দ (বাগেরহাটের শরণখোলা),  খন্দোকার মোহতেশাম হোসেন বাবর (ফরিদপুর সদর) নজরুল ইসলাম, (রাজশাহী দুর্গাপুর), কাজী শফিকুর রহমান (ফরিদপুর সদরপুর), আমজাদ হোসেন লাবলু (যশোর মনিরামপুর), বিল্লাল হোসেন সরকার (ময়মনসিংহ মুক্তাগাছা),  তরিকুল হাসান খান মিঠু (বরিশাল মুলাদী)  মজনু মিয়া, (ময়মনসিংহ ধোবাউড়া)। মীর ফারুক আহমেদ (টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী), শেখ ওয়াহিদুজ্জামান (সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ), খালেদ হোসেন (বরিশাল বাবুগঞ্জ), জাহাঙ্গীর আলম (কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া), শফিক আজিজ (ফরিদপুরের সদরপুর), ইসমাইল হক (শরীয়তপুরের নড়িয়া), পনির উদ্দিন আহমেদ (কুড়িগ্রাম সদর), এমএম জালাল উদ্দিন (ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা), এসএম চৌধুরী (রাঙামাটির কাউখালী) ও আবু তাহের (বাগেরহাটের মংলা), মো. আয়ুব আলী (কিশোরগঞ্জ হোসেনপুর)।

বিএনপি: সাইদুর রহমান (গাইবান্ধা সাইদুল্লাহপুর), আনোয়ারুল ইসলাম (চাপাইয়ের ভোলাহাট), ঈমান আলী (কুড়িগ্রামের রৌমারী), মোহাম্মদ ইসহাক (রাজশাহীর গোদাগাড়ী), মিজানুর রহমান (কুমিল্লার বুড়িচং), আবু সাঈদ (রাজশাহীর চারঘাট), ওয়াহিদুজ্জামান (পিরোজপুরের নেসারাবাদ), আজিজুর রহমান (কুমিল্লার হোমনা), আবুল বাসার আকন্দ (ময়মনসিংয়ের ফুলপুর) এএস ফেরদৌস (টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার), আজিজুর রহমান (ফরিদপুরের মধুখালী), খন্দকার লিয়াকত হোসেন (মানিকগঞ্জের ঘিওর), বাবর আলী (খুলনার পাইকগাছা)। আইয়ুব আলী (লালমনিরহাটের আদিতমারী), বাদল আমিন (ফরিদপুরের চরভদ্রাসন), শরীফুল ইসলাম শরীফ (নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ), শামসুল আলম (লক্ষ্মীপুরে কমলনগর), নুরুল ইসলাম (ঠাকুরগাওয়ের হরিপুর), কামরুজ্জামান কমল (জয়পুরহাটের আক্কেলপুর), আবদুল কুদ্দুছ (বান্দরবান সদর) আবুল কালাম আজাদ (বান্দরবানের আলী কদম) ও নুরুল মিল্লাত (কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর), শরিফুল ইসলাম (কিশোরগঞ্জ সদর), ইঞ্জি. শফিকুল ইসলাম, (বাহ্মণবাড়ীয়া নবীনগর), আবুল কালাম আজাদ (নোয়াখালী সেনবাগ), শামসুল আলম, (সুনামগঞ্জ জামালগঞ্জ), আজিজুর রহমান, (ময়মনসিংহ ফুলবাড়ীয়া)।

জামায়াত: আজিজুর রহমান (চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা), মোখলেসুর রহমান (চাপাইনওয়াবগঞ্জ সদর), কেরামত আলী (চাপাইনওয়াবগঞ্জ শিবগঞ্জ), মঈন উদ্দিন (নওগা ধামরাইর হাট), আকরাম হোসেন (গাইবান্ধা সদর), মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন (নওগার ধামুরহাট), নূরে আলম সিদ্দিকী (দিনাজপুর নবাবগঞ্জ)। অন্যান্য: এলডিপি: চট্টগ্রামের চন্দনাইশ।