স্টাফ রিপোর্টার: ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দু পক্ষের সংঘর্ষে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফুরকান উদ্দিন সেলিম (৪২) নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে চেয়ারম্যানের দু ভাইসহ আরও কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি, টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।
সূত্র জানায়, গতকাল রোববার ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত ধোবাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনের উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন এমপি। এ উপলক্ষে বেলা ১১টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন ডা. সঞ্জীব কুমার চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও প.প.কর্মকর্তা ডা. আব্দুল খালেক। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকী, উপজেলা চেয়ারম্যান ফুরকান উদ্দিন সেলিম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা খাতুন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলমগীর হোসাইন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আ. মান্নান আকন্দ প্রমুখ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বেলা সোয়া দুটোর দিকে মধ্যাহ্নভোজের সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের দু গ্রুপের সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর হোসাইন ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ উপলক্ষে গতকাল দুপুরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রবেশ ও খাবার বিতরণকে কেন্দ্র করে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ফুরকান উদ্দিন সেলিম গ্রুপের সাথে গামারীতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক খান গ্রুপের মধ্যে প্রথমে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাই মজনুর নেতৃত্বে আজিজুল হক খানের ওপর হামলা করা হয়। পরে আজিজুল হক খান ঘটনাস্থল ত্যাগ করে উপজেলার কলসিন্দুর এলাকায় গিয়ে তার পক্ষের লোকজনকে জড়ো করে উপজেলা সদরে পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নেন। এ খবর জানাজানি হলে চেয়ারম্যানের সমর্থকরা উপজেলা সদরে জড়ো হয়ে প্রতিপক্ষের সম্ভাব্য হামলার জবাব দিতে প্রস্তুতি নেন। ইতোমধ্যে প্রতিমন্ত্রী ও অন্যান্য অতিথিরা ধোবাউড়া ত্যাগ করেন। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে প্রশাসন উপজেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করে। বিকেল পাঁচটার দিকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে আজিজুল হক খান ও উপজেলা চেয়ারম্যান গ্রুপ উপজেলা সদরে ফের সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষে উভয়পক্ষ লাঠি-সোটা, বর্ষা ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে। এতে প্রতিপক্ষের হামলায় চেয়ারম্যান ফুরকান উদ্দিন সেলিম, তার দু ভাই মজনু ও টিপু গুরুতর আহত হন। ধোবাউড়া থানার ওসি আব্দুল হক জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শটগানের ১০ রাউন্ড গুলি ও ছয়টি টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে।
গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে চেয়ারম্যান সেলিম, মজনু ও টিপুকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল সূত্র জানায়, বর্ষার আঘাতে চেয়ারম্যানের তলপেটে গুরুতর জখমের কারণে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এছাড়া তিনি মাথায়ও আঘাত পান। রাত সোয়া আটটার দিকে চিকিত্সাধীন অবস্থায় চেয়ারম্যান সেলিম মারা যান।
ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার মইনুল হক জানান, ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। গতকাল রাত ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছিল। ওসি জানান, অপরাধীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। ফুরকার উদ্দিন সেলিম এবারই প্রথম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত ও দুই কন্যা সন্তানের জনক।