ঝিনাইদহ অফিস: জিন্দাদেহে মুরদা বসন থাকতে কেন পরনা/মন তুমি মরার ভাব জান না/ওরে মরার আগে না মরিলে পরে কিছুই হবে না। আমি মরে দেখেছি, মরার বসন পরেছি /কয়েকদিন বেঁচে আছি/তোরা দেখবি যদি আয় পাগলা কানাই বলতেছি……এমনি শ শ গানের রচয়িতা মরমী কবি পাগলাকানাই। লোক-সাধনা ও মরমী সঙ্গীতের এ কবি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বেড়বাড়ি গ্রামে বাংলা ১২১৬ সালের ২৫ ফাল্গুন জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা ১২৯৬ সালের ২৮ আষাঢ় মৃত্যুবরণ করেন।
২০৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কবির জন্মভিটা বেড়বাড়ি গ্রামে পাগলা কানাই স্মৃতি সংরক্ষণ সংসদে ৩ দিনব্যাপি উৎসবের আয়োজন করেছে। গতকাল রোববার সকালে ঝিনাইদহের বেড়বাড়ি গ্রামে কবির মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণের মধ্যদিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানমালা।
উৎসবে লাঠিখেলা, ধুয়া-জারী গান, পাগলা কানাইয়ের জীবনভিত্তিক নাটক, তার গান পরিবেশন, স্কুলের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আলোচনাসভা ও কবি গানের প্রতিযোগিতা থাকছে। এসব অনুষ্ঠানে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসছেন কবি ভক্তরা। এদিকে মরমী কবি পাগলাকানাই কবির রচিত অসংখ্য গান দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও সংরক্ষণের অভাবে আজ তা হারিয়ে যাচ্ছে। কবির মাজারসহ অযত্নে অবহেলায় রয়েছে একটি লাইব্রেরি।
জানা গেছে, ছোটবেলা থেকেই তিনি দূরন্ত ও আধ্যাত্মিক স্বভাবের ছিলেন। বাল্যকালে পিতৃহারা পাগলা কানাই-এর ঘরে মন না টেকায় অর্থের অভাবে পড়ালেখা হয়নি। তিনি মানুষের বাড়ি রাখালের কাজ করেছেন। গরু চরাতে গিয়ে ধুয়ো জারি গান গাইতেন। নিরক্ষর হলেও তার স্মৃতি, মেধা ছিলো প্রখর। তিনি উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে গান রচনা করে নিজ কণ্ঠে পরিবেশন করতেন। তার সঙ্গীতে যেমন ইসলাম ধর্মেরও তত্বকে প্রচার করেছেন তেমনি হিন্দু-পুরান রামায়ণ ও মহাভারত থেকেও নানা উপমার প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। এ কারণেই তার গান সর্বজনীনতা লাভ করে। তার মধ্যে বাউল ও কবিয়াল এ দুয়ের যথার্থ মিলন ঘটেছে। পাগলাকানাইয়ের গান গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
পাগলাকানাই স্মৃতি সংরক্ষণ সংসদের কোষাধ্যক্ষ আক্কাচ আলী জানান, পাগলা কানাইয়ের অবদান আমাদের সাহিত্যকে ঐতিহ্য মণ্ডিত করেছে। তার রচিত ৩ সহস্রাধিক গান থাকলেও আজও তা সংগৃহিত হয়নি। ঝিনাইদহসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে মানুষের মুখে মুখে ঘুরে ফেরে তার গান। কবির গান সংরক্ষণের দাবি কবিভক্ত ও এলাকাবাসীর। ঝিনাইদহের অঙ্কুর নাট্য একাডেমীর পরিচালক নাজিম উদ্দীন জুলিয়াস জানান, গবেষণার অভাব ও নানা সীমাবদ্ধতায় নতুন প্রজন্মের মানুষেরা ভুলতে বসেছে এ কবির জীবন দর্শন ও তার রচনা সম্পর্কে।
পাগলাকানাই স্মৃতি সংরক্ষণ সংসদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আব্দুর রশিদ জানান, দু লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে কবির সমাধিস্থল তৈরি ছাড়াও একটি লাইব্রেরি স্থাপন করা হয়েছে। গত বছর পাগলাকানাইয়ের একটি কল্পিত প্রতিকৃতিও অঙ্কন করা হয়েছে। কবির সৃষ্ট গানগুলো সংরক্ষণ, গবেষণা ও মাজার প্রাঙ্গণে একটি কমপ্লেক্স তৈরিসহ রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোর নানা উন্নয়নের দাবি জানান তিনি। লালন পরবর্তী কালের অন্যতম মরমী সাধক ও লোককবি পাগলা কানাই রচিত গান সংরক্ষণ করে তার স্মৃতিকে ধরে রাখার আহ্বান ঝিনাইদহবাসীর।