ঝুলে আছে জাপা মহিলা এমপিদের তালিকা

স্টাফ রিপোর্টার: এরশাদ ও রওশনের দ্বন্দ্বের  কারণে ঝুলে আছে জাতীয় পার্টির সংরক্ষিত মহিলা আসনের প্রার্থী তালিকা। প্রার্থী তালিকা নিয়ে স্বামী-স্ত্রী কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। আওয়ামী লীগ মহিলা আসনে তাদের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে তা প্রকাশ করলেও পারেনি জাতীয় পার্টি। এ অবস্থায় ক্ষুব্ধ জাপার মহিলা এমপি প্রার্থীরা। জাপার একাধিক নেতা জানিয়েছেন প্রায় দু মাস আগে গত ২০ জানুয়ারি এবং ২১ জানুয়ারি সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেন পার্টির চেয়ারম্যান  হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এরপর ২৩  জানুয়ারি ৬ জনের একটি তালিকা তৈরি করেছিলেন তিনি।  ওই তালিকায় থাকা ৬ জন হলেন- এরশাদের ছোট বোন মেরিনা রহমান, ছোট ভাই জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদের, প্রেসসচিব সুনীল শুভ রায়ের স্ত্রী কনিকা রায়, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ও চেম্বার অব কমার্সের নেতা ইব্রাহিম মোর্শেদের স্ত্রী মাহজাবিন মোর্শেদ, ব্রিগেডিয়ার (অব.) গিয়াসউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী মাহমুদা চৌধুরী ও নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী  মো. শাহজাহানের স্ত্রী শাহজাদী নাহিনা ইদ্রিস নূর। এরশাদের তালিকা প্রণয়নের খবর বাইরে চাউর হলে ত্যাগী-বঞ্চিত নারী নেত্রীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। তারা যোগাযোগ করেন রওশন এরশাদের সাথে। অনেকে এরশাদের বিরুদ্ধে অর্থ লেনদেনের অভিযোগও তোলেন। ওই সময় জাতীয় মহিলা পার্টির নেত্রীরা বলেছিলেন, সংরিক্ষত মহিলা আসনে এমপি হতে যোগ্যতা ও দলের জন্য শ্রম নয় বরং যাদের কোটি টাকা আছে তারাই এমপি হবেন। বঞ্চিতদের রওশন এমপি বানানোর আশ্বাস দিলে পরে এরশাদ আর এ নিয়ে বেশি দূর এগোতে পারেননি।

জাপাসূত্রে জানা গেছে, মহিলা এমপিসহ পুরো জাতীয় পার্টির নিয়ন্ত্রণ এখন রওশন নিতে চাচ্ছেন। এর অংশ হিসেবেই মহিলা সংসদ সদস্য নির্বাচনে এরশাদের যেকোনো খবরদারিই মানতে নারাজ রওশন। তবে এরশাদের মনোনীত মাত্র দুজন প্রার্থীকে এমপি বানাতে রাজি হয়েছেন রওশন। বাকি চারজনের ব্যাপারে রওশন কোনো ছাড় দেবেন না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে।

এদিকে এরশাদও নিজের তালিকার ব্যাপারে অনড় থাকায় এখনও নির্বাচন কমিশনে সংরক্ষিত আসনের মহিলাদের নামের চূড়ান্ত তালিকা পাঠাতে পারছে না জাতীয় পার্টি। রওশনের মনোনীত চারজন হলেন- মহিলা পার্টির সভানেত্রী নূর-ই-হাসনা চৌধুরী লিলি, জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা প্রফেসর রওশন আরা মান্নান, চট্টগ্রামের মহিলা নেত্রী খুরশিদ আরা হক, রংপুরের সাহানা বেগম।

সূত্র জানায়, এরশাদের ছোটবোন মেরিনা রহমান ও চট্টগ্রামের নেত্রী মাহজাবিন মোর্শেদকে এমপি বানাতে রাজি আছেন রওশন। তবে এ দুজন ছাড়া এরশাদ মনোনীত আর কাউকেই  মানবেন না রওশন। এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, বিরোধীদলের নেতা রওশন এরশাদ এবং পার্টির চেয়ারম্যান মিলেই সংরক্ষিত আসনের এমপিদের নাম চূড়ান্ত করবেন। একটু সময় লাগছে। আশা করি, কয়েকদিনের মধ্যেই আপনারা জানতে পারবেন।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার এমপি বলেন, পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। আমরা খুব দ্রুত এবং নির্বাচন কমিশনের বেধে দেয়া সময়ের মধ্যেই তালিকা পাঠিয়ে দেবো।

এদিকে পুনর্নির্ধারিত তফশিল অনুযায়ী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৫০টি সংরক্ষিত  মহিলা আসনের নির্বাচন হবে আগামী ৩ এপ্রিল। জোট এবং দলের সংসদ সদস্যের সংখ্যা অনুযায়ী আওয়ামী লীগ ৪১টি, জাতীয় পার্টি ৬টি এবং স্বতন্ত্র জোট ৩টি মহিলা আসন পাবে।