স্টাফ রিপোর্টার: আগে আন্দোলন নাকি দল পুনর্গঠন, এ নিয়ে বিএনপিতে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কেউ কেউ আগে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। অন্যরা দল গুছিয়ে আন্দোলনে নামতে চান।
জানা গেছে, একতরফা নির্বাচনের দু মাস পরও সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্য এখনো আন্দোলন শুরু করতে পারেনি বিএনপি। প্রায় এক মাস আগে ঢাকা মহানগর কমিটি পুনর্গঠনের কথা থাকলেও এখন পুনর্গঠনের সেই কমিটি হবে কি-না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন নেতাকর্মীরা। আর ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বাস্তবিক অর্থে শুরুই হয়নি। মূল দলের কাউন্সিল হবে কি-না তাও স্পষ্ট নয়।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলকে আন্দোলনের উপযোগী করতে ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর নেতাদের সাথে বৈঠক করে নেতাদের ভর্ৎসনা করেন খালেদা জিয়া। বর্তমান কমিটি ব্যর্থ মন্তব্য করে তিনি বলেন, দ্রুত তিনি কমিটি গঠন করবেন। অবশ্য, এর আগেই ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতার সাথে বৈঠক করে স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহকে আহ্বায়ক করে ২১ সদস্যের একটি হাই প্রোফাইল কমিটি চূড়ান্ত করেন তিনি। ওই কমিটিতে সাদেক হোসেন খোকা এবং আবদুস সালাম কাউকেই রাখা হয়নি। গত মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢাকা মহানগর কমিটি ঘোষণার কথা ছিলো। এরপর বলা হয়, কমিটির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা কারামুক্ত হলে নতুন কমিটি হবে। খোকা মুক্তির পরও কমিটি গঠনের কোনো উদ্যোগ নেই। এখন বলা হচ্ছে, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি হবে।
গুলশান কার্যালয় সূত্র বলছে, ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠনের কাজ করছেন খালেদা জিয়া। বিভিন্ন পর্যায় থেকে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। নগর বিএনপির থানা এবং ওয়ার্ড কমিটিগুলোর নেতৃত্বে কারা আছেন এবং কোন প্রক্রিয়ায় কমিটি গঠন করা হয়েছে; তা জেনেই নতুন কমিটি গঠন করবেন তিনি।
জানা গেছে, দলের একটি অংশ এ মুহূর্তে ঢাকা মহানগর কমিটি ঘোষণার বিপক্ষে। তাদের যুক্তি, এখন উপজেলা নির্বাচন। এ বিষয়ে দলের নজর থাকা উচিত। তাছাড়া নগর বিএনপি কমিটি গঠন করলে দলের পুরনো কোন্দল নতুন করে দেখা দেবে। বরং আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের পরই নতুন কমিটি গঠন করা যেতে পারে।
এদিকে খুব শিগগিরই নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি গঠনের কথা বলা হলেও এ নিয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং সিনিয়র সহসভাপতি কারাগারে থাকায়, বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি গঠনে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন সংগঠনের অধিকাংশ নেতাকর্মী। কারণ, শতভাগ নিয়মিত ছাত্রদের মধ্যে কারা ছাত্রদলের প্রকৃত কর্মী বা সমর্থক তা ওই তিন কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়া কেউ জানেন না। অপরিচিতদের দিয়ে কমিটি গঠন করলে, তাতে শিবির অনুপ্রবেশ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ আশঙ্কার কথা ছাত্রদল নেতারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামকে জানিয়েছেন।
খালেদা জিয়া নিজেই বলেছেন, সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং সিনিয়র সহসভাপতি মুক্তি পেলেই কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হবে। তবে এতে দ্বিমত পোষণ করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। তারা বলেন, সংগঠনের তিন শীর্ষ নেতার মুক্তি পেতে আরো কয়েক মাস লাগবে। এরপর কমিটি গঠন করা সম্ভব হবে না। কেননা, তখন আন্দোলনের সময় চলে আসবে।
বিএনপির অন্যতম অঙ্গসংগঠন যুবদলের শীর্ষ কোনো নেতা কারাগারে না থাকলেও ওই কমিটি গঠনের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। আর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক কারাগারে। তাই আপাতত ওই কমিটিও হচ্ছে না।
এদিকে সরকার গঠন হওয়ার প্রায় দুই মাসেও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে তেমন অগ্রগতি না থাকায় বিএনপি নেতাকর্মীরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ বলছেন, ঢাকা মহানগর কমিটি আর হবেই না। হলে এতোদিন হয়ে যেত। আর অন্য অঙ্গ দলগুলোর পুনঃগঠন করাও সময় সাপেক্ষ। তাই এখনই আন্দোলন শুরু করে দেয়া উচিত।
দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে আলোচনা করে জানা যায়, স্থায়ী কমিটির সভা থেকে শুরু করে দলের প্রত্যেকটি ফোরামেই চলছে কবে নাগাদ আন্দোলন শুরু করা যায় তা নিয়ে বিতর্ক। দলের একটি অংশের নেতাদের দাবি, দিন যতো যাচ্ছে ততোই মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগ যেন দীর্ঘ সময়ের জন্য ক্ষমতা আঁকড়ে থাকবে। তাই দল পুনর্গঠনের আগেই আন্দোলনও শুরু করতে হবে। আর অপর একটি অংশের দাবি হচ্ছে, দল পুনর্গঠন না করে আন্দোলনে গেলে আগের মতো অবস্থাই হবে। আন্দোলন যদি সফলই না হয় তাহলে তা করে কি লাভ? তাই দল গুছিয়েই আন্দোলনে যেতে হবে।
দলের সিনিয়র এক নেতা জানান, এখন উপজেলা নির্বাচনের পর আন্দোলন কথা বলা হলেও তা সম্ভব হবে না। এর কারণ হচ্ছে, এরপরই স্থানীয় সরকার পর্যায়ের আরো নির্বাচন হবে। এরপর ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হবে। শুধু স্থানীয় সরকারের এসব নির্বাচন শেষ হতে হতে সরকারের মেয়াদ ১ বছর পেরিয়ে যাবে। এসব নির্বাচনে বেশি গুরুত্ব দেয়ায় দলও গোছানো কঠিন হবে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনের পর দল গোছানোর প্রক্রিয়া শুরু করলে আরো সময় ক্ষেপণ হবে। এত সময় বর্তমান সরকারক দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই বিএনপিতে জোর দাবি উঠেছে, স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ, দল পুনর্গঠন এবং আন্দোলন একযোগে চালাতে হবে। এ দাবির যৌক্তিকতা বিবেচনা করে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।
পরবর্তী আন্দোলনের বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, তৃণমূল থেকে আন্দোলনে যাওয়া চাপ আছে। তবে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার পরই আন্দোলনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ছিলো। কিন্তু দল পুনঃগঠনে সময় লাগছে অনেক। এজন্য দল পুনর্গঠন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণের পাশাপাশি আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া যায় কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নয়। এখন থেকে নেয়া হবে কার্যকর করার মতো সিদ্ধান্ত।