স্টাফ রিপোর্টার: ঐতিহাসিক ৭ মার্চ আজ। শোষিত-বঞ্চিত বাঙালির ঘুরে দাঁড়ানোর দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন- এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। সেদিনের অগ্নিঝরা ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। যার যা কিছু আছে তা নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেবো, দেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। বঙ্গবন্ধুর এ আহ্বান উল্কাবেগে ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। স্বাধীনতার স্বপ্নে জেগে ওঠে পুরো জাতি। ক্ষেত্র প্রস্তুত হয় স্বাধীনতা সংগ্রামের। বাঙালির স্বাধীনতার প্রস্তুতির এ সময়ে ২৫ মার্চ কালো রাতে নেমে আসে পাকিস্তানিদের বর্বর আঘাত। হানাদারদের পৈশাচিক গণহত্যা আর অত্যাচার-নির্যাতনের প্রতিবাদে দামাল বাঙালি হাতে তুলে নেয় অস্ত্র। বঙ্গবন্ধুর ডাকে মরণপণ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশের মানুষ। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত সবখানে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ৩০ লাখ প্রাণ আর দু লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অবশেষে আসে সেই কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।
দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করবে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে আছে ভোরে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। বিকাল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভাপতিত্ব করবেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এক বিবৃতিতে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ গৃহীত কর্মসূচি দেশবাসীর সাথে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসমূহের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে ৭ মার্চ উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ বলেন, ৭ মার্চ বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় ঐতিহাসিক দিন। বঙ্গবন্ধুর অনন্য সাধারণ নেতৃত্বেই বাঙালি জাতি একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছে।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের এই দিনে স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অসীম সাহসিকতার সাথে রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার উদ্দেশ্যে বজ্রকণ্ঠে যে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন তা বাঙালি জাতির ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ঐতিহাসিক সেই ভাষণ এদেশের গণমানুষকে দারুণভাবে আন্দোলিত করে এবং তাদেরকে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে বিপুলভাবে উদ্বুদ্ধ করে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, বর্তমান সরকার দেশ থেকে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, শোষণ, বঞ্চনা ও সন্ত্রাস চিরতরে দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, ঔপনিবেশিক পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্বে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বাংলার গণমানুষের প্রাণের দাবি এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, বজ্রকণ্ঠে ধ্বনিত হয়। তিনি বলেন, এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেদিন গোটা জাতি মহান মুক্তিযুদ্ধের দিকে ধাবিত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা গণহত্যা শুরু করলে, ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ ও বহু ত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করি। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক ভাষণ। বাঙালির বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে এ ভাষণের দিকনির্দেশনাই ছিলো সে সময় বজ্রকঠিন জাতীয় ঐক্যের মূলমন্ত্র। অসীম ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অমিত শক্তির উৎস ছিলো এ ঐতিহাসিক ভাষণ। যার আবেদন আজও অটুট রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের মধ্যদিয়ে বাঙালি জাতি যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলো, তেমনি আরেকবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে রূপকল্প-২০২১ ও রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়ন করে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে উপনীত হবো- এই হোক আজকের দিনের অঙ্গীকার।