স্টাফ রিপোর্টার: উপজেলা নির্বাচনে মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসংখ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পছন্দের প্রার্থীদের বিশেষ নির্বাচনী সুবিধা দেয়া, আচরণবিধি লংঘন সত্ত্বেও ব্যবস্থা না নেয়া, প্রতিপক্ষকে হয়রানি করাসহ নানা গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। এমনকি নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে। বেশিরভাগ অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযোগ তুলেছেন বিএনপি তথা বিরোধী দলের পরাজিত প্রার্থীরা। প্রার্থীদের অভিযোগ- নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যাপক ধরপাকড় ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করছেন। এতে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারছেন না অনেক প্রার্থী। প্রতিদিনই এ ধরনের অসংখ্য অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে পাঠাচ্ছেন প্রার্থীরা। তারা কমিশনের কাছে এর প্রতিকার চেয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছেন। কোনো কোনো প্রার্থী সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে প্রশাসনে রদবদল দাবি করেছেন। ইসির কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনের সময় যতোই ঘনিয়ে আসছে অভিযোগের সংখ্যা ততোই বাড়ছে।
তবে এসব অভিযোগের বেশিরভাগই আমলে নিচ্ছে না নির্বাচন কমিশন। কমিশনের মতে, বেশিরভাগ অভিযোগে ঢালাওভাবে নির্বাচন কর্মকর্তাদের দোষারোপ করা হচ্ছে। কিন্তু এর স্বপক্ষে উপযুক্ত প্রমাণাদি জমা দেয়া হয়নি। এ কারণে শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে নির্বাচন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশাসনে রদবদল করা হলে অস্থিরতা দেখা দেয়ার শঙ্কাও রয়েছে। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এছাড়াও চলতি মাসে অনুষ্ঠেয় তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম দফা উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখেও গোলাযোগের আশঙ্কা করে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা চেয়ে কমিশনে আবেদন করেছেন অনেক প্রার্থী। অনেকে ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্রের নাম উল্লেখ করে ওই সব কেন্দ্রে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। বেশ কয়েকজন প্রার্থী গত ১৯ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দু দফা নির্বাচনের অনিয়ম তুলে ধরে পুনরায় ভোটগ্রহণ ও ফলাফলের গেজেট প্রকাশ বন্ধ রাখতে নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। নির্বাচন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক অভিযোগের বিষয়ে কমিশনের অবস্থান জানতে চাওয়া হলে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বৃহস্পতিবার বলেন, প্রতিদিন অনেক অভিযোগ পাচ্ছি। কিন্তু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণসহ কেউ দাখিল করেননি। এ কারণে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
নির্বাচন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, উপজেলা নির্বাচন উপলক্ষে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি জারি করা হয়। ওই চিঠিতে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকভাবে নির্বাচনের দায়িত্ব পালনের জন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নির্বাচনসংক্রান্ত আইন লংঘন করলে চাকরি থেকে বরখাস্তসহ দণ্ডের বিধান রয়েছে।