স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার আসাননগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইলোরা শারমিন গত ১৫ মাস ধরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমোদন ছাড়াই দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যহত হচ্ছে।
অনুমোদনহীন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির ঘটনায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে ইলোরা শারমিনকে তিনদফা নোটিশ প্রদানের পর সর্বশেষ আলমডাঙ্গা শহরে পিতার বাড়ির দরজায় নোটিশ লটকে দেয়া হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোক্তার হোসেন সরকার বলেন, ইলোরা শারমিনকে সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী অপরাধে চাকরি ডিসমিস করে দেয়ার বিষয়টি শেষ পর্যায়ে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আলমডাঙ্গা স্টেশনরোড এলাকার মৃত আবুল কাশেমের মেয়ে ইলোরা শারমিন ২০০৫ সালের ১৬ নভেম্বর আসাননগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। চাকরিকালীন সময়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে এমনকি কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে ২০১৩ সালের পয়লা জানুয়ারি থেকে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। বিষয়টি অবগত হয়ে তৎকালীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আতাউর রহমান দু দফা এবং বর্তমান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোক্তার হোসেন সরকার এক দফা কৈফিয়তসহ নোটিশ পাঠানো হয় ইলোরা শারমিনের ঠিকানায়। অথচ একটি পত্রেরও জবাব দেননি ওই প্রধান শিক্ষক। এরপর তার মোবাইলফোনে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তার আলমডাঙ্গা স্টেশনরোডের বাড়ির দরজায় নোটিশ লটকে দেয়া হয়। যাতে বলা হয় সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী ইলোরা শারমিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। যার শাস্তি চাকরিচ্যুত করা। এ নোটিশপ্রাপ্তির তিনদিনের মধ্যে জবাব প্রদান এবং বিদ্যালয়ে যোগদানের জন্য বলা হলেও গতকাল মঙ্গলবার এ খবর লেখা পর্যন্ত ইলোরা শারমিন যেমন জবাব পাঠাননি, তেমনি চাকরিতেও যোগদান করেননি।
ইলোরা শারমিনের বড় বোন ও আসাননগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী প্রধান শিক্ষক সামসুন্নাহার ডেইজী জানান, ইলোরা বর্তমানে তার স্বামী যশোর মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক এবিএম সাইফুল আলমের সাথে বসবাস করছেন। ডেইজী আরো জানান, তার বোন ইলোরা শারমিন ঢাকার হোম ইকনোমিক্স কলেজ থেকে ফোর ফার্স্টক্লাস নিয়ে পাস করেছিলেন। কিন্তু চাকরি করার আগ্রহ থাকলেও সাংসারিক কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।
সাইফুল আলমের সাথে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দুজনই চাকরিজীবী হওয়ায় দু সন্তানকে লালনপালন করা সমস্যা হয়ে যাচ্ছিলো। তাছাড়া স্ত্রীকে বদলি করে আনার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে চাকরি থেকে অনুপস্থিত থাকতে হয়েছে। ইলোরা শারমিনের সাথে যোগাযোগের জন্য চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল নম্বরে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার স্বামী এবিএম সাইফুল আলম নতুন মোবাইল নম্বরও দেননি। তার বড় বোন সামসুন্নাহার ডেইজী জানান, তার বোনের মোবাইল নম্বর তার কাছে নেই। ফলে তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
আলমডাঙ্গা উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিও) শামসুজ্জোহা জানান, ইলোরা শারমিনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা চূড়ান্ত উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।