গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তত্কালীন প্রধান বিরোধীদল বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট অংশগ্রহণ করেনি। এর পেছনে তাদের নিজস্ব কিছু যুক্তি বা বক্তব্যও ছিলো। প্রথমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে অনড় থাকলেও পরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া হয় যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। এটি তাদের দলীয় বা জোটগত সিদ্ধান্ত। সর্বোপরি, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত সকল দলেরই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার বা না-করার অধিকার রয়েছে। এ বিষয়ে কারও কিছু বলার নেই। সংবিধান অনুযায়ী যথারীতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকারও গঠন করেছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। ইতোমধ্যে বিএনপিসহ নানা মহল থেকে অতিদ্রুত আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি তোলা হয়েছে। এখন সমস্যা হলো, চলতি সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই আগামী দু-এক বছরের মধ্যে সরকার যদি মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ গ্রহণ করে তখন কী হবে? বিএনপি বা বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট কি সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে? প্রশ্নটি এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো তখনও তো শেখ হাসিনাই প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। এটিই সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে দেশি-বিদেশি নানা মহল থেকে বহু কথা বলা হয়েছে। দেয়া হয়েছে নানা পরামর্শ। সেই প্রক্রিয়া কম-বেশি এখনও অব্যাহত আছে। তাতে মনে হতে পারে যে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যে সংকটের সৃষ্টি হয়েছে তার মূলে রয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতানৈক্য বা মতবিরোধ। কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। মূলত এটি হলো সংবিধানের সাথে নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর বিরোধ। এটা সুবিদিত যে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো সুযোগ নেই। আর সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে পরবর্তী নির্বাচনের সময়েও শেখ হাসিনাই প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। অর্থাৎ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছিলো সেই সঙ্কটেরই পুনরাবৃত্তি ঘটবে। অন্যদিকে, সংবিধান-বহির্ভূত পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মহলেও কতোটুকু গ্রহণযোগ্য হবে- তাও প্রশ্নসাপেক্ষ।