প্রতারণার দোকানের দাওয়াই প্রথমে মাঙনাই থাকে। সুযোগ বুঝে অর্থ আদায় শুরু হয়। প্রতারণার ফাঁদের প্রচার-প্রচারণা মূলত মুখে মুখেই ছড়ায়। লজ্জা ঢাকতে অনেকেই রোগমুক্তির মনগড়া কথা বলে থাকে। তা দ্রুত প্রচার পাওয়ার কারণেই প্রতারণার দোকানে সরলসোজা নারী-পুরুষের ভিড় বাড়ে। আর সেখানে যদি রান্নাবান্না করে তা বিতরণের আয়োজন বেড়ে যায় তাহলে শিশু-কিশোরের আনাগোনা তো বাড়বেই। চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার মোক্তারপুর মাঠের বুড়ো ভাটামগাছকে যে কল্পিতগল্পের নায়ক বানানো হয়েছে তা সভ্যসমাজের সচেতনদের কাছে হাস্যকর হলেও সরলসোজা কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষগুলোর কাছে আরাধ্য। তা না হলে কি আর এমনি এমনিই সপ্তার প্রতি বৃহস্পতিবার ওদের ভিড় বাড়ছে?
কালো ছেলে কাক হয় কীভাবে? মুখে মুখে রটা গুজবে। সেই গুজবে মেতে ওঠাদের শুধু হুজুগে বলা কি যথার্থ? অবশ্যই সচেতনতার আলো ছড়াচ্ছে, সমাজ থেকে দূর হচ্ছে কুসংস্কারাচ্ছন্নতা তথা অন্ধকার। সচেতনরাই এ আলো ছড়িয়ে থাকেন। যে সমাজে সচেতন দায়িত্বশীল মানুষের সংখ্যা বেশি, সেই সমাজে কুসংস্কার যতো দ্রুত দূর হয়েছে, সেখান থেকে প্রতারণার দোকানও উঠে গেছে। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রতারণার দোকান উচ্ছেদে মাথাভাঙ্গার অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। প্রতারকরা শুধু কল্পিত গল্প প্রচারের মাধ্যমেই প্রতারণার দোকানকে জমজমাট করে তোলে না, ওরা সমাজের অসচেতন মানুষগুলোকে ধন্ধে ফেলে কাছে টানে। একজনকে টানতে পারলে তাকে দেখে আরো অনেকেই সেদিকে ছোটে। অবাক হলেও সত্য যে, যারা প্রতারণার দোকানের খদ্দের, অনেকে ঠকেছে বা ঠকছে বলে নিশ্চিত হলেও তারা লজ্জা আড়াল করতেই ‘উপকার পেয়েছি, পাচ্ছি’ বলে মিথ্যা দাবি করে। এ দাবি প্রতারকচক্রের প্রচারণায় সহায়ক হয়। দিন দিন লোকজন বাড়তে থাকে। এক সময় অবশ্য সকলেই মুখ ফিরিয়ে নেয়। যার উদাহরণ ভুরি ভুরি।
‘বনবিবি মাঠের বুড়ো ভাটামগাছের নিচে তেল, পানি, তাবিজ-কবজ রেখে রান্না-বান্না করে তা শিশু-কিশোরদের মাঝে বিতরণ করতে হবে। বিতরণের পর তাবিজ, কবজ, পানি বা তেল নিয়ে শরীরে লাগালে যেকোনো রোগ থেকে মুক্তি মিলবে।’ এ দাওয়াই কবে কে কীভাবে দিলো? লেজ মাথা খুঁজে না পাওয়া গেলেও অনুমান করা অসম্ভব নয়। আড়ালে রয়েছে বাণিজ্য। প্রতারণার দোকান লাভজনক হয়, যদি এলাকায় সচেতন মানুষ না থাকে। অবশ্য সচেতন মানুষ থাকলেই হয় না, তাকে দায়িত্বশীলও হতে হয়। অসচেতনতার কারণেই প্রতারণার দোকান দেয়ার সাহস পায় প্রতারকচক্র। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি সচেতন মানুষগুলোকেই সচেতনতার আলো ছড়িয়ে দূর করতে হবে কুসংস্কার নামক অন্ধকার।