স্টাফ রিপোর্টার: অ্যানার্জি ড্রিংকসে সম্পূরক শুল্ক ২৫ শতাংশ আর কোমল পানীয়তে ১৫ শতাংশ। শুল্ক হারের এ ব্যবধানের সুযোগ নিয়ে কিছু অ্যানার্জি ড্রিংকস উৎপাদক কয়েকশ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। মিথ্যা ঘোষণায় কোমল পানীয়ের শুল্কে অ্যানার্জি ড্রিংকস বাজারজাত করে এভাবে শুল্ক ফাঁকির ব্যাপকতায় কঠোর হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। দায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিহ্নিত করে সরকারের পাওনা আদায়ের নির্দেশ জারি হয়েছে। এখন পর্যন্ত অ্যানার্জি ড্রিংকস স্পিড উৎপাদনকারী আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ এবং ট্রান্সকমকে অভিযুক্ত করেছে ভ্যাট কর্তৃপক্ষ।
এদিকে এনবিআরের কড়াকড়িতে কৌশল পাল্টে ফেলে অসাধু কিছু উৎপাদক। এতোদিন যে পানীয়ের ক্যান বা বোতলে বড় অক্ষরে অ্যানার্জি ড্রিংকস লিখে রমরমা ব্যবসা করেছে, এখন সেই একই অ্যানার্জি ড্রিংকস বিক্রি হচ্ছে কোমল পানীয় নামে। বোতল বা ক্যান থেকে রাতারাতি অ্যানার্জি ড্রিংকস লেখা মুছে ফেলা হয়েছে। এখনও অনেক জনপ্রিয় অ্যানার্জি ড্রিংকস বিক্রি হচ্ছে কোমল পানীয় নামে। আর এভাবে শ শ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রাথমিক তদন্তে মাত্র ১ বছরে আকিজ ফুডের বিরুদ্ধে ১৭০ কোটি ১৩ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ এনে দাবিনামা সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছে ভ্যাট এলটিইউ (লার্জ ট্যাক্স ইউনিট)। এছাড়া ট্রান্সকমের স্টিং অ্যানার্জি ড্রিংকস বাজারজাতেও ৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকার শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে। কারণ দর্শানো নোটিশ জারি হলে ট্রান্সকম অভিযোগ অস্বীকার করে আদালতে রিট মামলা করেছে বলে জানিয়েছে ভ্যাট কর্তৃপক্ষ। এছাড়া এনবিআরের নির্দেশে ভ্যাট এলটিইউসহ অন্য ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাধীন অ্যানার্জি ড্রিংকস উৎপাদকরা শুল্ক যথাযথভাবে দিচ্ছে কি-না সে বিষয়েও তদন্ত শুরু হয়েছে।
মূলত ভ্যাট আইন, বিধিমালা, প্রজ্ঞাপন, সাধারণ আদেশের কোনোটিতেই এ দুটি পণ্য সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। বিডিএস মানে অ্যানার্জি ড্রিংকসের নাম নেই। আর এ সুযোগে শ শ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সঠিকভাবে রাজস্ব আদায়েও জটিলতা দেখা দিয়েছে। ভ্যাট এলটিইউর পত্র পাওয়ার পর এনবিআর জরুরি ভিত্তিতে এ জটিলতা অবসানের উদ্যোগ নেয়। এরপর গত মঙ্গলবার এনবিআর অ্যানার্জি ড্রিংকস আর কোমল পানীয়কে আলাদাভাবে চিহ্নিত করার একটি দিকনির্দেশনা জারি করে।
ভ্যাট এলটিইউ কমিশনার এক চিঠিতে এনবিআরকে জানান, অ্যানার্জি ড্রিংকসের কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা না থাকায় এর ওপর কার্যকর ২৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আদায় নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। কাস্টমস ট্যারিফেও বিষয়টি স্পষ্ট নয়। এতে পানি, খনিজ পানি (মিনারেল ওয়াটার) ও মিষ্টি স্বাদযুক্ত পানিকে এইচএসকোড ২২.০২.১০.০০-এর আওতাভুক্ত করে অন্য সব পানীয়কে এইচএস কোড ২২.০২.৯০.০০-এর আওতায় রাখা হয়েছে। ২০১৩ সালের এনবিআরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এইচএস কোড ২২.০২.৯০.০০-এ অ্যানার্জি ড্রিংকসের ওপর ২৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক কার্যকর করা হয়েছে। কিন্তু কী কী উপাদান থাকলে অ্যানার্জি ড্রিংকস বলে গণ্য হবে তার কোনো ব্যাখ্যা এতোদিন ছিলো না। এখন এনবিআরের আদেশে তা নির্দিষ্টকরণ করা হয়েছে বলে সূত্র দাবি করেছে।
সূত্র মতে, জটিলতা নিরসনে এনবিআর গত মঙ্গলবার ভ্যাট এলটিইউকে নির্দেশনা দেয় যে, ক্যাফেইন এবং বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন থাকলে তা অ্যানার্জি ড্রিংকস হিসেবে গণ্য হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরীক্ষার পর তা নিশ্চিত হয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। যেসব অ্যানার্জি ড্রিংকসে ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক পরিশোধ করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে পাওনা আদায়ে দাবিনামা জারি করতে হবে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অ্যানার্জি ড্রিংকসের মূল উপাদান ক্যাফেইন, জিনসেং, ভিটামিন বি এবং শক্তিবর্ধক বিভিন্ন উপাদান। কোনো পানীয়তে এসবের উপস্থিতি পাওয়া গেলে তা অ্যানার্জি ড্রিংকস বলে বিবেচিত হবে। সংশ্লিষ্ট কমিশনারেট তা রাসায়নিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে অনুমোদন করবে। যেসব প্রতিষ্ঠান এসব শক্তিবর্ধক উপকরণ ব্যবহার করে কোমল পানীয় নামে বিক্রি করেছে তাদের বিরুদ্ধে অনাদায়ী ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আদায়ে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে।
জানা গেছে, বর্তমানে বাজারে প্রচলিত অ্যানার্জি ড্রিংকস হচ্ছে আকিজের স্পিড, এএসটি বেভারেজের টাইগার ও ব্ল্যাক হর্স, পারটেক্সের বিগবস, ট্রান্সকমের স্টিং ও প্রাণের পাওয়ার। এর মধ্যে কারা কম শুল্ক দিয়ে পণ্য বাজারজাত করেছে তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে এনবিআর।