স্টাফ রিপোর্টার: দ্বিতীয় দফার প্রচার-প্রচারণাও শেষ। আগামীকাল বৃহস্পতিবার মেহেরপুর মুজিবনগর ও গাংনীসহ দেশের ৫২ জেলার ১১৬টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছে। সাথে পর্যাপ্ত র্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসারবাহিনীর সদস্যও মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে মঙ্গলবার মধ্য রাত থেকে এসব উপজেলায় মিছিল-মিটিংসহ সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে সব ধরনের যান্ত্রিক যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে।
সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন দলীয় ব্যানারে না হলেও সব জায়গাতেই দলীয় প্রার্থী রয়েছেন। প্রথম দফায় ৯৮ উপজেলার নির্বাচনের ফলাফলেও রাজনৈতিক প্রভাব লক্ষণীয়। দ্বিতীয় দফার নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ, বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের পছন্দের প্রার্থী দিয়েছে। এবার অর্ধেকের বেশি উপজেলাতে বড় দল দুটির বিদ্রোহী প্রার্থীরা ভোটযুদ্ধে নেমেছেন।
জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন দ্বিতীয় দফাতে ১১৭ উপজেলার তফশিল ঘোষণা করলেও বৃহস্পতিবার ভোট হবে ১১৬ উপজেলায়। কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলায় ভোট হবে ১ মার্চ। সূত্র জানায়, দ্বিতীয় ধাপের ১১৬টি উপজেলায় তিনটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১ হাজার ৩৬৭ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫১৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫২১ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩৪০ জন। এ দফায় মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন ৪১১ জন। মোট ভোটার ১ কোটি ৯৮ লাখ ৫১ হাজার ১৭৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯৯ লাখ ৩৭ হাজার ৭৪১, মহিলা ৯৯ লাখ ১৩ হাজার ৪৩৫ জন। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৮ হাজার ১৩৬টি।
এদিকে এ নির্বাচন ঘিরে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এ বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের সহকারী সচিব আশফাকুর রহমান জানান, নির্বাচনের ৩২ ঘণ্টা আগে থেকে সব প্রচার-প্রচারণা বন্ধ রয়েছে। এটা অব্যাহত থাকবে নির্বাচনের পর ৬৪ ঘণ্টা পর্যন্ত। কেউ আইন ভঙ্গ করলে কারাদণ্ড ও আর্থিক দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এমনকি প্রার্থিতাও বাতিল হতে পারে।
সাধারণ ছুটি: ভোটগ্রহণ উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বৃহস্পতিবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে (ইসি)। এদিন সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে টানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, প্রথম পর্যায়ের উপজেলা নির্বাচনের ত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্বাচন আরো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য কমিশন কাজ করছে।
এদিকে, সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন শেষ করতে ইতোমধ্যে ১১৬ উপজেলায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। নির্বাচনের আগে ও পরে মোট পাঁচদিন তারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতি উপজেলায় এক প্লাটুন করে সেনাবাহিনীর সদস্য টহল দেবেন। বড় উপজেলায় এ সংখ্যা বাড়তে পারে। পাশাপাশি প্রতি উপজেলায় সেনাবাহিনীর দুই থেকে তিনটি গাড়ি থাকবে। সাথে সেনাবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার ও একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। এছাড়া মোবাইলফোর্স হিসেবে পর্যাপ্ত সংখ্যক র্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসারবাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। প্রতি কেন্দ্রে একজন পুলিশ (অস্ত্রসহ), অঙ্গীভূত আনসার একজন (অস্ত্রসহ), অঙ্গীভূত আনসার ১০ জন (মহিলা-৪, পুরুষ-৬) ও আনসার একজন (লাঠিসহ) এবং গ্রামপুলিশ একজন করে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকবে। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ৪৬৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১১৬ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন।
যেসব উপজেলায় নির্বাচন: দ্বিতীয় ধাপে যে ১১৬টি উপজেলায় নির্বাচন হবে তা হলো- রংপুর বিভাগের ৭ জেলার ১৫ উপজেলা: পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া, ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাংগী, রানীশংকৈল, দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট, চিরিরবন্দর, বিরামপুর, বীরগঞ্জ, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, সদর, হাতীবান্ধা, রংপুরের বদরগঞ্জ, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী, রাজারহাট, রাজবপুর। রাজশাহী বিভাগের ৭ জেলার ১৮ উপজেলা: গাইবান্ধার পলাশবাড়ী, জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল, কালাই, সদর, বগুড়ার কাহালু, শিবগঞ্জ, আদমদিঘী, শাজাহানপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর, নওগাঁর আত্রাই, নিয়ামতপুর, পত্নীতলা, বদলগাছি, সদর, সাপাহার, রাজশাহীর বাঘা, নাটোরের বাগাতিপাড়া, গুরুদাসপুর, লালপুর, সদর, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া। খুলনা বিভাগের ৮ জেলার ১৬ উপজেলা: মেহেরপুরের গাংনী, মুজিবনগর, কুষ্টিয়ার কুমারখালী, খোকসা, মিরপুর, ঝিনাইদহের মহেশপুর, যশোরের চৌগাছা, ঝিকরগাছা, বাঘারপাড়া, শার্শা, মাগুরার মোহাম্মদপুর, শালিখা, বাগেরহাটের কচুয়া, ফকিরহাট, খুলনার ডুমুরিয়া, সাতক্ষীরার শ্যামনগর। বরিশাল বিভাগের ৩ জেলার ৫ উপজেলা: ভোলার চরফ্যাশন, বোরহানউদ্দিন, বরিশালের সদর, পিরোজপুরের কাউখালী, নাজিরপুর। ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলার ২৮ উপজেলা: টাঙ্গাইলের সখিপুর, জামালপুরের ইসলামপুর, বকশিগঞ্জ, মেলান্দহ, শেরপুরের ঝিনাইগাতি, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ, ভালুকা, সদর, নেত্রকোনার কলমাকান্দা, খালিয়াজুরী, পূর্বধলা, বারহাট্টা, মানিকগঞ্জ সদর, হরিরামপুর, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, সদর, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, সাভার, নরসিংদীর শিবপুর, ফরিদপুরের নগরকান্দা, বোয়ালমারী, সালথা, গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া, সদর, মাদারীপুরের রাজৈর, শিবচর, সুনামগঞ্জের দিরাই, সুনামগঞ্জ সদর। সিলেট বিভাগের ২ জেলার ২ উপজেলা: সিলেটের বালাগঞ্জ, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট। চট্টগ্রাম বিভাগের ৯ জেলার ২৭ উপজেলা: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল, কুমিল্লার দেবীদ্বার, মনোহরগঞ্জ, লাকসাম, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ, মতলব (উ:), মতলব (দ:), সদর, হাইমচর, ফেনীর পরশুরাম, ফেনী সদর, নোয়াখালী কবিহাট, কোম্পানীগঞ্জ, চাটখিল, সদর, সোনাইমুড়ী, চট্টগ্রামের পটিয়া, লোহাগড়া, কক্সবাজার পেকুয়া, চকরিয়া, খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি, রাঙ্গামাটির কাপ্তাই, নানিয়ারচর, বান্দরবানের থানছি, রুমা, রোয়াংছড়ি, লামা।
তৃতীয় ধাপে চূড়ান্ত প্রার্থী ১ হাজার ১৫৩: এদিকে উপজেলা নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ৮৩ উপজেলায় চূড়ান্ত প্রার্থী ১ হাজার ১৫৩ জন। এদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৪৩৪ প্রার্থী, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৩৭ প্রার্থী আর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৮২ প্রার্থী। মঙ্গলবার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এ দফার মনোনয়ন জমা দেয়ার শেষ দিনে ৪২ জেলার ৮৩ উপজেলায় মোট ১ হাজার ৫৪৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। যাদের মধ্যে চেয়ারম্যানপদে ৬২৯ জন, ভাইস চেয়ারম্যানপদে ৫৯৮ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩২১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এ দফার ভোটগ্রহণ হবে আগামী ১৫ মার্চ।
এদিকে চতুর্থ দফার ৪২ জেলার ৯২ উপজেলায় ১ হাজার ৫১২ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে চেয়ারম্যানপদে ৫৬৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যানপদে ৬১০ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানপদে ৩৩৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। আজ বুধবারের মধ্যে এদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে। এ দফার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ৬ মার্চ আর নির্বাচন আগামী ২৩ মার্চ।
তৃতীয় ধাপে যেসব আসনে নির্বাচন: রংপুর বিভাগের ৬ জেলার ১০ উপজেলা: ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর, দিনাজপুরের সদর ও নবাবগঞ্জ, নীলফামারী সদর, লালমনিরহাটের আদিতমারী, কুড়িগ্রাম সদর, রৌমারী ও চিলমারী, গাইবান্ধার সদর ও সাদুল্যাপুর। রাজশাহী বিভাগের ৪ জেলার ১০ উপজেলা: জয়পুরহাটের আক্কেলপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর, ভোলাহাট ও শিবগঞ্জ, নওগাঁর মান্দা, পোরশা ও ধামইরহাট, রাজশাহীর গোদাগাড়ি, চারঘাট ও দুর্গাপুর। খুলনা বিভাগের ৬ জেলার ১০ উপজেলা : চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা, যশোরের মনিরামপুর, নড়াইলের লোহাগড়া, বাগেরহাট সদর, মোড়েলগঞ্জ, মোংলা, রামপাল ও শরণখোলা, খুলনার পাইকগাছা, সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ। বরিশাল বিভাগের ৩ জেলার ৫ উপজেলা: ভোলা সদর, বরিশালের মুলাদী, হিজলা ও বাবুগঞ্জ, পিরোজপুরের নেছারাবাদ। ঢাকা বিভাগের ১১ জেলার ২৫ উপজেলা: টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী, দেলদুয়ার, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ, শেরপুরের শ্রীবর্দী, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া, গৌরীপুর, মুক্তাগাছা, ফুলপুর ও ধোবাউড়া, নেত্রকোনা সদর ও মোহনগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ সদর, কুলিয়ারচর ও হোসেনপুর, গাজীপুরের শ্রীপুর, মানিকগঞ্জের ঘিওর, ফরিদপুর সদর, চরভদ্রাসন, আলফাডাঙ্গা, ভাঙ্গা, মধুখালী, সদরপুর, গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া, শরীয়তপুর সদর ও নড়িয়া। সিলেট বিভাগের ৩ জেলার ৪ উপজেলা: সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমা, মৌলভীবাজারের বড়লেখা। চট্টগ্রাম বিভাগের ৯ জেলার ১৯ উপজেলা: কুমিল্লার নাঙ্গলকোট, হোমনা, বুড়িচং, চৌদ্দগ্রাম, ব্রাহ্মণপাড়া ও তিতাস, চাঁদপুরের কচুয়া ও হাজীগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর, ফেনীর দাগনভূঁইয়া, নোয়াখালীর সেনবাগ, লক্ষ্মীপুরের কমলনগর, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও সীতাকুণ্ড, রাঙামাটির বরকল, বাঘাইছড়ি ও কাউখালি এবং বান্দরবানের বান্দরবান সদর ও আলী কদম।