স্মৃতিস্তম্ভটি ভরে গেছে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার ফুলের পরশে
স্টাফ রিপোর্টার: গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করা হলো পিলখানায় নিহতদের। চোখের জলে সিক্ত হয়ে স্বজনরা কবরে ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার ছিলো পিলখানায় সংঘটিত নির্মম ও মর্মান্তিক ঘটনার ৫ম বার্ষিকী। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতে বনানী সামরিক কবরস্থানে এসেছিলেন স্বজনরা। তারা নীরবে চোখের জল ফেলেছেন। কবরগুলো ভরে যায় ফুলে ফুলে। পাশে স্থাপিত কালো সিরামিকের স্মৃতিস্তম্ভ। তাতে তিন সারিতে সেদিনের নির্মম ঘটনায় নিহত সব কর্মকর্তা ও সদস্যদের নাম লেখা। এ স্মৃতিস্তম্ভটি ভরে গেছে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার ফুলের পরশে। কারও বাবা-মা, স্ত্রী, ভাই- বোন, কারও সন্তান। তাদের অনেকে সেদিনের সেই ভয়াল স্মৃতি ও আপনজন হারানোর ব্যথা স্মরণ করে হাউমাউ করে কেঁদেছেন। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের শিকার বেশির ভাগ সেনা কর্মকর্তার দাফন হয়েছে বনানী কবরস্থানে। কয়েকজনকে নিজ গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। কবরস্থানের মাঝামাঝি একই সারিতে কর্মকর্তাদের শেষ শয্যায় শায়িত করা হয়। সবার সামনে বিডিআরের মহাপরিচালক শাকিল আহমেদ ও তার স্ত্রীর কবর। ফুলে ফুলে ভরে গেছে সেটিও।
নিহতের সন্তান জারিফ বিন আজম বলেন, বিচারের রায় ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু রায়ের দ্রুত কার্যকারিতা দেখতে চাই। সন্তানের কবরে ফুল দিয়ে মোনাজাত করে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন নিহত মেজর শামছুর রহমানের মাতা খালেদা রহমান ও পিতা মজিবুর রহমান। ক্ষোভের সাথে জানালেন, এ নির্মম হত্যাকাণ্ডে আমাদের উপার্জনক্ষম সন্তান হারিয়েছি। অনেকেই অনেক আশ্বাস দিয়েছিলেন। অল্প কিছু সাহায্য ছাড়া কেউ এখন আর আমাদের খোঁজ নেয় না। সরকারও এখন আর খোঁজখবর করে না। এ সময় বনানী সামরিক কবরস্থানে নিহতদের স্বজনরা ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণার দাবি জানান। তবে সব কিছু ছাপিয়ে ক্ষোভ ছিলো নিহতের পরিবারের স্বজনদের। তাদের অনেকেরই অভিযোগ, নারকীয় এ হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য এখনও উদঘাটিত হয়নি। নেপথ্যের কুশীলবদের চিহ্নিত করা যায়নি। বিচার যেটি হয়েছে সেটিও প্রশ্নবোধক।
কবরের পাশে দাঁড়িয়ে স্বজনরা দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। নিহতদের স্মরণে সামরিক আনুষ্ঠানিকতাও ছিলো। সশস্ত্র বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তারা বনানী কবরস্থানে উপস্থিত হয়ে বিনম্র শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন তাদের সহকর্মীদের প্রতি। সকালে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের পক্ষে সামরিক সচিব মেজর জেনারেল আবুল হোসেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদিন বীরবিক্রম শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারী, নৌবাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল এম ফরিদ হাবিব, সম্মিলিতভাবে পুষপস্তবক অর্পণ করে নিহতদের স্মরণ করেন। এছাড়া, বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ)’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিকিউকে মোস্তাক আহমেদ সম্মিলিতভাবে বনানী কবরস্থানে পুষপস্তবক অর্পণ করেন। আওয়ামী লীগের পক্ষে কর্নেল (অব.) ফারুক খান, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, এবি তাজুল ইসলাম, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপি ও ১৯ দলীয় জোট এবং জাতীয় পার্টির পক্ষে দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। শেষে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে বিজিবি’র মহাপরিচালক আজিজ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচারক কাজে বিলম্ব হচ্ছে না। আইন অনুযায়ী বিচার এগিয়ে চলেছে। বিজিবি’র ললাটে যে কালিমা লেপন হয়েছিলো বিচারের মাধ্যমে কিছুটা হলেও তা দূরীভূত হয়েছে। বর্তমান বিজিবি আইনে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড। তাই আশা করা যায় এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর হবে না। শ্রদ্ধা জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচারকে ‘খণ্ডিত বিচার’ বলে মন্তব্য করে সাংবাদিকদের বলেন, দেশি ও বিদেশি শক্তি এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত। বিচার প্রক্রিয়ায় অপরাধীদের দৃশ্যমান করা যায়নি। বিচারে অনেক কিছুই উন্মোচন হয়নি। কুশীলবরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। তিনি বলেন, বিএনপি আগামীতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলে এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে বিচার করবে। দিবসটি পালন উপলক্ষে পিলখানাসহ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি’র সব রিজিয়ন, সেক্টর, প্রতিষ্ঠান ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় বাদ ফজর খতমে কোরান এবং বিজিবি’র সব মসজিদে এবং বিওপি পর্যায়ে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে। বিকেল সাড়ে ৪টায় পিলখানার বীর উত্তম ফজলুর রহমান খন্দকার মিলনায়তনে শহীদ ব্যক্তিবর্গের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হয়।