রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ১৫ বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে চলতি বছরের একুশে পদক তুলে দিয়ে বলেছেন, অমর একুশের ও মহান স্বাধীনতার চেতনা থেকে পাওয়া শিক্ষা নিয়েই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। দক্ষিণ এশিয়ায় একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠা করাই বর্তমান সরকারের লক্ষ্য। একুশের চেতনা ও স্বাধীনতার চার মূলস্তম্ভকে যারা অস্বীকার করে তারা একুশের ও স্বাধীনতার শত্রু। এদের মোকাবেলা করার জন্য আমাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে একুশের চেতনা ছড়িয়ে দিতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একুশে পদক ২০১৪ প্রদান উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদানের জন্য এ বছর শামসুল হুদা, প্রথম শহীদ মিনারের নকশাকার ভাষাসৈনিক ডা. বদরুল আলম (মরণোত্তর), সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য ডা. মুজিবুর রহমান, শিল্পকলায় গৌরবজনক অবদানের জন্য বাংলাদেশের সংবিধানের নকশাবিদ সমরজিত রায় চৌধুরী, লোকসঙ্গীত শিল্পী ও সংগ্রাহক রামকানাই দাশ, অভিনয়শিল্পী কেরামত মওলা ও নাট্যব্যক্তিত্ব এসএম সোলায়মান (মরণোত্তর) এবার একুশে পদক পেয়েছেন। এছাড়া সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, গবেষণায় ড. এনামুল হক, শিক্ষায় ড. অনুপম সেন, ভাষা ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য কবি বেলাল চৌধুরী, জামিল চৌধুরী, কবি রশীদ হায়দার, ছড়াকার বিপ্রদাস বড়ুয়া ও আবদুস শাকুর (মরণোত্তর) এ পদক পেয়েছেন। প্রয়াত বদরুল আলমের পক্ষে তার স্ত্রী বেগম আফজালুন নেসা, এসএম সোলায়মানের পক্ষে তার মেয়ে আনিকা মাহিন একা, আবদুস শাকুরের পক্ষে তার ছেলে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে একুশে পদক গ্রহণ করেন।
একুশে পদকপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের এই পুরস্কার আপনাদের দীর্ঘদিনের সাধনা, মেধা ও পরিশ্রমের স্বীকৃতি। আমরা এমন অনেককেই এ পুরস্কার দিয়েছি যারা আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু বাঙালি জাতি তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। একুশের চেতনা বাস্তবায়নে পদকপ্রাপ্তদের দায়িত্ব আরো বেড়ে গেলো উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলা ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি বিকাশে আপনারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা। বাঙালির ভাষা আন্দোলন, ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি মায়ের ভাষার জন্য ছাত্র-জনতার রক্তদান এবং বাংলার রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা আদায়ের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একুশ মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বাঙালি জাতির আত্মত্যাগের এক বীরত্ব কাহিনি। ১৯৯৯ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ঘোষিত হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বের সকল মাতৃভাষার সুরক্ষা বিধানে ভূমিকা রাখার দায়িত্বও আমরা পেয়েছি।
অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, যে জাতি গুণীজনকে সম্মান দিতে জানে না সে জাতি নিজেকে সভ্য বলে দাবি করতে পারে না। অতীতে অনেক সময়ই প্রকৃত গুণীদের বঞ্চিত করা হয়েছে। গুণীজনরা যাতে যথাযথভাবে সম্মানিত হয় সরকার সে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সংস্কৃতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব রণজিত কুমার বিশ্বাস। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা। বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ ছাড়াও মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, বিচারপতি, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও বিভিন্ন অঙ্গনের বিশিষ্টজনরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। পদকপ্রাপ্ত প্রত্যেককে এক লাখ টাকা, একটি স্বর্ণপদক ও একটি মানপত্র দেয়া হয়।