মহাসিন আলী: মেহেরপুর জেলা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত বেসরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও (বি.এম) কলেজটি এলাকার নারী শিক্ষার অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছে। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এইচএসসিতে (বিএম) শতভাগ পাস করছে। এসএসসি ও জেএসসি’র ফলাফলে শহরের দুটি সরকারি বিদ্যালয় থেকে পিছিয়ে নেই। একমাত্র বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটির পাবলিক পরীক্ষায় ফলাফল ভালো হলেও ভৌত অবকাঠামোগত ত্রুটি তা ম্লান করে দিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির ছাদ থেকে সিমেন্ট বালির প্লাস্টার খসে খসে পড়ছে। তার ওপরে স্কুল ও কলেজের জন্য ছাত্রীদের ক্লাস রুমের সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে প্রায় ৬শ ছাত্রী লেখাপড়া করছে। শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম সঙ্কটের পাশাপাশি বিল্ডিং অত্যন্ত পুরোনো হয়ে যাওয়ায় বর্ষায় ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। এতে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে বসা ও শিক্ষকদের পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটে। বর্তমানে ছাদ থেকে সিমেন্ট বালির প্লাস্টার খসে খসে পড়ছে। এতে অনেকে আহত হচ্ছে আবার অনেকে আতঙ্কে থাকছে। দিনে দিনে আতঙ্কের মাত্রা এতোই বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, ছাদ থেকে সিমেন্ট-বালির প্লাস্টার খসে পড়ার ভয়ে খাতা-কলমে নাম থাকলেও তাদের অনেকে স্কুলে আসা ছেড়ে দিয়েছে। গরমের মধ্যেও ফ্যান চালাতে ভয় পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলার শতকরা ৭৫ ভাগ ছাদ দিয়ে পানি পড়ে।
বিদ্যালয়টির ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত রয়েছে দুটি করে শাখা। এছাড়া বহুমুখি বিদ্যালয়টির বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক শাখায় ক্লাস করতে অতিরিক্ত কক্ষ প্রয়োজন হলেও তা না থাকায় ল্যাবরেটরি ও লাইব্রেরিতেও ক্লাস করতে হয় শিক্ষার্থীদের। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটছে।
প্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কামালউদ্দীন বলেন, মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক এমপি মাসুদ অরুন ও সাবেক এমপি জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী তহমিনা আবেদীন এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছিলেন। নির্বাচিত হওয়ার পরে একাধিকবার এ প্রতিষ্ঠানে তাদের পদধূলি পড়েছে। বিদ্যালয়ভবন বৃদ্ধি ও সংস্কারের জন্য একাধিকবার আবেদন করেও কোনো সহযোগিতা মেলেনি বিদ্যালয়টির।
বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী বিভা ও অন্যান্যা মণ্ডলসহ একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছে, এমন স্কুলে তাদের পড়তে ভালো লাগে না। সিমেন্ট-বালুর প্লাস্টার খসে পড়ে। ধূলোবালি মাথায় পড়ে। বর্ষায় ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। বইখাতা ভিজে যায়। স্কুলটি নতুন হলে ভালো হতো।
কলেজছাত্রী ফাতেমা ও সুইটি জানায়, প্রতিষ্ঠানটির কলেজ শিক্ষকমণ্ডলী আন্তরিকতার সাথে পাঠদান করায় কলেজশাখায় শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করে থাকে। তবে প্রতিষ্ঠানটির কলেজ শাখার শিক্ষার্থী ও স্কুল শাখার ছাত্রীদের একই বিল্ডিঙে ক্লাস করতে হয়। এটা কলেজছাত্রীদের ভালো লাগে না।
নবম শ্রেণির ছাত্রী কেয়া ও সুমাইয়া জানায়, বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হওয়ার পর থেকেই বিজ্ঞানের ক্লাসগুলো করতে কখনো ল্যাবরেটরি ও লাইব্রেরিতে যেতে হয়। এটা তাদের কাম্য ছিলো না।
প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মহা. আক্তারুজ্জামান জানান, জন্মলগ্ন থেকে বিদ্যালয়টি সহশিক্ষার প্রতিষ্ঠান ছিলো। নারী শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে সে সময়ের পরিচালনা কমিটি এটিকে শুধুমাত্র নারী শিক্ষার একমাত্র বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করান। পরবর্তীতে এটি বহুমুখি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং প্রায় দেড় যুগ আগে এটিতে এইচএসসি (বিএম) কোর্স চালু হয়েছে। নারী শিক্ষার জন্য বিদ্যালয়টির শাখা-প্রশাখার বিস্তার লাভ করলেও প্রায় ২ যুগ সরকার কিংবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এর ভবননির্মাণ ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে এগিয়ে আসেননি। জেলা পরিষদসহ শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগে আবেদন করেছি। ফল পাওয়া যায়নি। বিল্ডিং সংস্কার করতে প্রচুর টাকার দরকার। যা কেবল বিদ্যালয় ফান্ডের টাকা দিয়ে সম্ভব নয়। তারপরও চেষ্টা করে যাচ্ছি সরকারি কোনো অনুদান পাওয়া যায় কি-না।