বিক্ষোভকারীদের চাপের মুখে আখ ক্রয়কেন্দ্রে আমদানি ও ওজন বন্ধ
মাঝহাদ থেকে ফিরে সদরুল নিপুল: কেরুজ আখ ক্রয়কেন্দ্রে অধিকাংশেই ওজনের কারচুপি হয়। এরকম অভিযোগ নতুন নয়। ওজনে আখচাষি ঠকানোর বিষয়টি মাঝে মাঝে ধরাও পড়ে। এবার আলমডাঙ্গার মাঝহাদ আখ ক্রয়কেন্দ্রে ওজনে কারচুপি হাতে নাতে ধরে চাষিরা বিক্ষোভ করেছে। প্রতিকার চেয়ে বিক্ষোভের মুখে সাময়িক ওজন বন্ধ রাখা হয়েছে।
স্থানীয় অধিকাংশ আখচাষি জানান, দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানির অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘদিন থেকে দুর্নীতি আর অনিয়মের সাথে লিপ্ত থাকায় ঐতিহ্যবাহী চিনির মিলটি বছরের পর বছর লোকসানের সম্মুখিন হচ্ছে। অধিক আখ রোপণ করুন অধিক মুনাফা অর্জন করুন কেরুজের প্রবাদকে বিশ্বাস করে আখচাষিরা আখ রোপণ করে। কিন্তু একের পর এক আখ ওজনের কারচুপি ঘটনায় চুয়াডাঙ্গার প্রত্যন্ত অঞ্চলের চাষিরা আখের আবাদ অনেক কুমিয়ে দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার আলমডাঙ্গার মাঝহাদ ইক্ষু ক্রয়কেন্দ্রে ওজনে কারচুপি হাতেনাতে ধরা পড়লে এলাকায় তুমুল উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। কাটাবাবুকে (ওজনদার) অবরুদ্ধ রেখে আখচাষিরা বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভকারীদের চাপের মুখে আখ আমদানি এবং ওজন বন্ধ হয়ে যায়।
সরেজমিনে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কেরু অ্যান্ড কোম্পানির মাঝহাদ ইক্ষু ক্রয়কেন্দ্রে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মাজহাদ গ্রামের আখচাষি আব্দুল হাই ওরফে হাই মিয়া মহিষের গাড়িতে এক হাজার ৮৩০ কেজি আখ বিক্রির উদ্দেশে নিয়ে যান। মাজহাদ ইক্ষু ক্রয়কেন্দ্রের কাটাবাবু সবুজ বিশ্বাস চাষি হাই মিয়ার আখ ওজন করে বলেন, এক হাজার ৬২০ কেজি হয়েছে। ওজনের কথা শুনে হাই মিয়া হতাবাক হয়ে যান। চাষি হাই মিয়া কাটা বাবুকে বলেন, আমি এক হাজার ৮৩০ কেজি আখ নিজে ওজন করে এখানে নিয়ে এসেছি। আর ২১০ কেজি আখ গেলো কোথায়। এরপর সচেতন চাষি হাই মিয়া তাৎক্ষণিকভাবে স্কেল কাটার পরীক্ষা করে দেখতে পান কাটাবাবু নিজের ইচ্ছায় ২১০ কেজি আখ কেজি তালবাহানা করে রেখেছেন। হাতেনাতে ওজনে কারচুপি ধরার ঘটনাটি মুহূর্তের ভেতর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আখচাষিরা অভিযুক্ত কাটাবাবু সবুজ বিশ্বাসকে তার ওজনরুমে অবরুদ্ধ করে রাখেন। উত্তেজনার মাত্রা ক্রমেই বাড়তে থাকে। এ সময় আখচাষিরা কেরু অ্যান্ড কোম্পানিসহ কাটা বাবুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে থাকে। বিক্ষোভকারীদের চাপের মুখে আখ সেন্টারে আখ আমদানি এবং আখ ওজন বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা অভিযুক্ত কাটা বাবু সবুজ বিশ্বাসের বদলীসহ শাস্তি দাবি করেন। অবস্থা বেগতিক সংবাদ পেয়ে কেরুজ ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদসহ অনেকে ঘটনাস্থলে ছুটে এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। তিনি বিক্ষোভকারীদের বিভিন্ন আশ্বাস দিয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি শান্ত করেন।
আখচাষিরা জানায়, মাজহাদ ইক্ষু ক্রয়কেন্দ্রে মাজহাদ, কান্তপুর, বটিয়াপাড়া, শিয়ালমারী, রংপুর, জুগিরহুদা, লক্ষ্মীপুর, রামচন্দ্রপুর, পারকেষ্টপুর, পাঁচকমলাপুর, আলিয়াটনগর, শিবপুর ও গোপালনগর গ্রামের আখচাষিরা আখ বিক্রি করে। আখচাষি হাই মিয়া গতকাল বিকেলে অভিযোগ করে বলেন, এক হাজার ৮৩০ কেজি আখ নিজে ওজন করে নিয়ে আসি। ওজনদার সবুজ বিশ্বাস আখ ওজন করে বলে এক হাজার ৬২০ কেজি হয়েছে। দিনে দুপুরে চোখের সামনে চুরি। অভিযোগকারী হাই মিয়া আরো জানান, ২১০ কেজি আখ ওজনে কারচুপির বিষয়টি আমি তাৎক্ষণিকভাবে হাতেনাতে ধরে ফেলি। এলাকার আখ চাষী সাহাবুল, আব্দুল আল মামুন, আব্দুল আলীম, সূর্য মণ্ডল, রহিম আলীসহ অসংখ্য চাষীদের অভিযোগ, আখ সেন্টার শুরু হওয়ার পর থেকে এবার মরসুমে প্রায় প্রায় ওজনে কারচুপি করে চাষিদের অন্যায়ভাবে ঠকিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কাটাবাবু সবুজ বিশ্বাস জানান, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সমস্যা হয়েছে।