হুসনা তুমি ক্ষমা করো সভ্যবলে দাবিদার এই সমাজকে

 

যে আসমাউল হুসনার খেলার বয়স, সমবয়সীদের সাথে বিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা, সেই আসমাউল হুসনাকে অপর এক শিশুর পরিচর্যার দায়িত্ব নিতে হয়েছে। শুধু কি তাই, বন্দী অবস্থায় নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তার। নির্যাতন করেছেন কে? এবং কেন? যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি শিক্ষিতই শুধু নন, একজন মাও। সারাদিনের জন্য বদ্ধ ঘরে বরাদ্দকৃত দুটি রুটিতে খিদে মিটতো না, তাই একটু ভাত বেড়ে নিয়ে খেয়েছিলো। এ কারণেই গরম খুন্তির ছ্যাঁকা খেতে হয়েছে আসমাউল হুসনাকে। ঝলসে দেয়া হয়েছে তার শরীর।

শিশু আসমাউল হুসনার পিতা দরিদ্র। অনাহারে থাকতে হবে না, দু বেলা দু মুঠো ভালো খাবার খেতে পারবে মেয়ে। এ বিশ্বাস আর ভবিষ্যত উজ্জ্বল করে দেয়ার প্রতিশ্রুতির কারণেই আসমাউল হুসনার পিতা-মাতা অতোটুকু বয়সে প্রাণপ্রিয় সন্তানকে অন্যের বাড়িতে অন্যের শিশুসন্তান পরিচর্যার জন্য পাঠিয়েছিলেন। আর যাই হোক, একজন চিকিৎসক মা, প্রকৌশলী পিতা কি আর অতোটুকু বয়সের শিশুকে পরের সন্তান ভাববেন? নিজের সন্তানের মতো করেই হয়তো রাখবেন। এ বিশ্বাসের বরখেলাপ হবে ভাবলে শুধু আসমাউল হুসনার পিতা-মাতাই নন, কোনো পিতা-মাতাই তো অন্যের কাছে দিতেন না। বিশ্বাস আর প্রতিশ্রুতির মর্যাদা নাই বা দিলেন, একজন চিকিৎসক হয়ে কীভাবে এক শিশুকে গরম খুন্তি দিয়ে ঝলসাতে পারলেন? ভাবতেই গা শিউরে ওঠে। ছি!

‌সমাজে কিছু মানুষের নৈতিকতার স্খলন ফুঁটে উঠছে। বিবেকবান বলে দাবিদার, বিবেক জাগিয়ে তোলার জন্য উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া মানুষগুলোর অনেকেই স্বার্থের মোহে অন্ধত্বও বরণ করছেন। বাড়ছে দুর্নীতি। মানবতাও যে এভাবে উবে যাবে, মানুষ রূপে কেউ যে এভাবে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে তা ভাবলে শরীরের রক্তও শীতল হয়ে যায়। অবশ্যই শিশু আসমাউল হুসনার ওপর নির্যাতনকারীদের উপযুক্ত শাস্তি হতে হবে। খাবারের জন্যই হোক, আর কিছু মালামাল তছরুপের জন্যই হোক, যে কারণেই হোক, শিশুকে ওভাবে নির্যাতন মানে সভ্যতাকে অপদস্ত করা। এ অপদস্ততা রুখতে অবশ্যই শাস্তির মাধ্যমেই শিক্ষা দিতে হবে। এমন শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে যাতে আর কেউ কোনো আসমাউল হুসনাকে ওভাবে নির্যাতন করতে না পারে। আসমাউল হুসনাকেও যাতে অন্যের হাওলায় ওভাবে দিতে না হয়, কেউ নিতে না পারে তাও নিশ্চিত করার দায়িত্ব সমাজের। এতোদিনে তা নিশ্চিত করতে না পারার দায় সমাজ এড়াতে পারে কি?

বিশ্বসভালোবাসা দিবসে সকলের মাঝে জেগে উঠুক বিবেক, ভরে উঠুক ভালোবাসায়। আর আসমাউল হুসনা তুমি ক্ষমা করো সভ্যবলে দাবিদার এই সমাজকে।