আলমডাঙ্গার নাগদহের নিহত শহিদের পরিবারে এখনো চলছে শোকের মাতম

 

আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না

নাগদাহ থেকে ফিরে সদরুল নিপুল/অনিক সাইফুল: আলমডাঙ্গার নাগদাহ গ্রামের কৃষক শহিদ হত্যার ৭ দিন পার হলেও কোনো আসামি ধরা পড়েনি। এ কারণে পুলিশের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাদী পক্ষের লোকজন। এদিকে মামলার অধিকাংশ আসামিই ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে পুলিশের কাছ থেকে বিশেষ সুযোগ নিচ্ছে বলে বাদীপক্ষের অভিযোগ। এ কারণে আসামদের ধরতে পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছে গ্রামের সাধারণ মানুষ। তবে আসামিরা গোপনে গোপনে বাদী পক্ষের সাথে সমঝোতা ও আপসের পথ খুঁজছে। তাদের লোকজন দফায় দফায় আপসরফার প্রস্তাব দিলেও বাদী পক্ষ তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছে আমরা খুনিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

গতকাল সোমবার সকালে সরেজমিনে নাগদাহ গ্রামের নিহত শহিদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এখনও চলছে শোকের মাতম। কিছুতেই যেন কাটছে শোক। নিহত শহীদের স্ত্রীসহ তিন সন্তান অপেক্ষা করছে কবে আসামিরা ধরা পড়বে, কবে তাদের বিচার হবে। সংসারের একমাত্র আয়ের উপার্জনক্ষম শহিদ খুন হওয়ার পর তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। গতকাল সোমবার নাগদাহ গ্রামে গেলে শহিদের স্ত্রী রোসিলা খাতুন, বড় মেয়ে প্রতিবন্ধী রোকেয়া, মেজ মেয়ে বিবাহিতা সুফিয়া ও ছোট মেয়ে তাসলি (১৮) সাংবাদিকদেরকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। শহিদের স্ত্রী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমাদেরকে টাকা দিয়ে মামলা আপস করতে চাচ্ছে। আমাদের দরিদ্রতার সুযোগ নিয়ে প্রভাবশালী আসামি পক্ষের লোকজন বিভিন্ন প্রলোভন দেখাচ্ছে। আমি স্বামী হত্যার আসামিদের গ্রেফতার ও শাস্তি চাই। বড় মেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী রোকেয়া সাংবাদিকদের দেখে দুই হাতে লাঠি ভর করে উঠতে গিয়ে পড়ে যান। তিনি আর্তনাদ করে জানান, আমাদের সামনে যারা আমারা পিতাকে হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি চাই।

নাগদাহ গ্রামের কৃতীসন্তান নাগদাহ গোলাম বানু হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল সামসুল আলম জোয়ার্দ্দার ননী ক্ষোভের সাথে জানান, নৃশংসভাবে দরিদ্র কৃষক শহিদকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার সময় আমি ঢাকায় ছিলাম। তিনি বলেন শহিদ হত্যা মামলার আসামিরা যদি কোনো কারণে পার পেয়ে যায় তাহলে আগামীতে ওরা আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে। এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে দেশের অপরাধ জগতের মানুষদের অবগত করতে হবে এদেশে এখনও প্রচলিত আইনের সঠিক বিচার হয়। তিনি ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।।

নিহত শহীদের বড় মেয়ে জন্মের পর থেকেই বিকলাঙ্গ । মেজ  মেয়ে সুফিয়া বিবাহিতা । ছোট মেয়ে তাসলি অর্থের অভাবে লেখাপড়া বাদ দিয়ে বাড়িতে থাকে। অপর দিকে ঘটনার  ৭ দিন পেরিয়ে গেলেও কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে না পারায় এলাকার সচেতন মহলের কাছে বিরূপ সমালোচনার মধ্যে পড়েছে পুলিশ।

একাধিক সূত্র জানায়, শহিদ হত্যা মামলার ১১ আসামির মধ্যে ৪/৫ জন এলাকার বাইরে থাকলেও বাকি আসামিরা নিকটবর্তী এলাকায় গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপন করে আছে। আর যারা বাইরে আছে তারা হাইকোর্ট থেকে জামিন নেয়ার জন্য দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সময় নাগদাহ ইউনিয়নের সবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ শহীদের গায়ে প্রথমে ধাক্কা দেন। পরপরই তার ওপর হামলা শুরু হয়ে যায়। কিন্তু আবুল কালাম আজাদ প্রভাবশালী হওয়ায় বাদী পক্ষ তার নাম উল্লেখ করেনি এজাহারে। এখন এলাকাবাসীও মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ গ্রামের উত্তরপাড়ার জমি রেজিস্ট্রি করা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয় বিক্রেতা আপিল মণ্ডলের দু ছেলে সাদ আলী ও হোসেন আলীর সাথে জমির ক্রেতা ছোটর। বিক্রেতার দু ছেলে আরও টাকা দাবি করলে বিরোধ সৃষ্টি হয়। বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গত ৪ ফ্রেব্রুয়ারি রাতে গ্রামে সালিস সভার আয়োজন করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, এ সালিসে ছোটর ভাড়াটে মোজাম্মেল, মহাবুল, টেংরা, আতিয়ার, রসুল, কটা, ধনা, দুদু, নজরাসহ কয়েকজন দু ভাই সাদ ও হোসেন আলীকে না পেয়ে তাদের চাচাতো ভাই শহিদকে তার বাড়ির উঠোনে স্ত্রী সন্তানদের সামনে মারধর করে দলে চটকে গলা টিপে নৃশংসভাবে হত্যা করে।