স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীর জেনারেলদের উদ্দেশে বলেছেন, বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানকে রক্ষা ও গণতান্ত্রিক ধারাকে সুসংহত করার জন্য যে কোনো হুমকি মোকাবিলায় সজাগ ও প্রস্তুত থাকতে হবে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে গত ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নির্বাচন সুষ্ঠু ও সফল করতে ভূমিকা পালন করেছে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল রোববার সকালে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে সেনাসদরের অফিসার্স মেসে (নতুন) জেনারেলদের এক সম্মেলনে এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের সময় অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সরব উপস্থিতি জনমনে স্বস্তি এনে দিয়েছিলো। তিনি সেনাবাহিনীর সকল সদস্যের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, জনগণ নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়েছে। সামরিক বাহিনীতে চেইন অব কমান্ড বজায় রাখার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, জুনিয়র অফিসারদের সামনে সিনিয়র অফিসাররা তাদের নৈতিকতা, সততা ও কর্তব্যনিষ্ঠার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে নিজেদেরকে উপস্থাপন করতে হবে। আপনাকে অধস্তনদের কাছ থেকে সম্মান ও আনুগত্য আদায় করতে এবং তাদের সকল প্রয়োজন, প্রত্যাশা এবং আকাঙ্ক্ষা ও চিন্তার মূল্য দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সিনিয়র অফিসারদের প্রতি পারস্পরিক বিশ্বাস, সহানুভূতি, ভ্রাতৃত্ববোধ ও শৃঙ্খলা বজায় রেখে তাদের কর্তব্য পালনের পাশাপাশি নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখারও নির্দেশ দেন। সিনিয়র অফিসার হিসেবে এ বাহিনীর প্রতিটি স্তরে বিশ্বাস-আস্থা ও শ্রদ্ধা বজায় রাখতে আপনাকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকার একটি দক্ষ, আধুনিক ও শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সরকার গঠনের পর থেকেই সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা গর্বের সাথে বলতে পারি আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার জনগণের সেবক হিসেবে দেশ পরিচালনায় বদ্ধপরিকর এবং এক্ষেত্রে আপামর জনসাধারণের সেবায় বর্তমান সরকার সার্বক্ষণিক সেনাবাহিনীর সহযোগিতা পেয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনাকালে যখনই আহ্বান জানানো হবে তখনই সেনাবাহিনী জনগণের পাশে এসে দাঁড়াবে বলে তিনি তার দৃঢ় বিশ্বাসের কথা ব্যক্ত করেন।
২০০৯ সালের পিলখানায় বিডিআর হত্যাযজ্ঞের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সে সময় সরকারের অঙ্গীকার ছিলো সম্ভাব্য স্বল্প সময়ের মধ্যে এ বিচারকাজ সম্পন্ন করা। আমি আমার অঙ্গীকার রক্ষায় ছিলাম দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। স্বল্প সময়ের মধ্যে এতো বড় বিচারকাজ সম্পন্ন করে আমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। তিনি বলেন, গৌরবোজ্জ্বল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পেশাগত সুনাম ও নির্ভরযোগ্যতার কারণে বহু কাঙ্ক্ষিত এবং প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু নির্মাণের তদারকি কাজসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বভার তাদের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। এ জাতীয় দায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্ঠা ও গুরুত্বের সাথে পালন এবং ভবিষ্যতেও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততা জাতি আরও ব্যাপকভাবে প্রত্যক্ষ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। সরকারের গত দু মেয়াদে সেনাবাহিনীর যুগান্তকারী অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদেই রামুতে একটি পদাতিক ডিভিশন এবং রাজবাড়ীর সন্নিকটে চরভবানীপুরে আরও একটি পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠার বিষয় তার সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। সেনাবাহিনীর উন্নয়নে নেয়া বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ফোর্সেস গোল ২০৩০-এর বাস্তবায়ন এরই মধ্যে অনেক দূর এগিয়েছে। এর আলোকে ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন সাংগঠনিক কাঠামোতে আধুনিক অস্ত্র, গোলাবারুদ ও যোগাযোগ সরঞ্জামাদি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা সামগ্রিকভাবে এ বাহিনীর সমর শক্তি ও চলাচল ক্ষমতা আরও অনেক বৃদ্ধি করবে। তিনি বলেন, ফোর্সেস গোলের ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। ইতোমধ্যে জালালাবাদ সেনানিবাসে ১৭ পদাতিক ডিভিশন এবং একই ডিভিশনের অধীনে একটি পদাতিক ব্রিগেড ও দুটি নতুন পদাতিক ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে। মিরপুর সেনানিবাসে একটি এয়ার ডিফেন্স রেজিমেন্ট, চট্টগ্রাম সেনানিবাসে একটি মেলিটারি ফার্ম, খোলাহাটি সেনানিবাসে একটি এসএসডি এবং সাভার ও বগুড়া সেনানিবাসে দুটি অ্যাডহক মেকানাইজড ব্রিগেড গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও অ্যাডহক ভিত্তিতে সিলেটে একটি এরিয়া সদর দপ্তর, একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়ন, একটি এমপি ইউনিট ও একটি ফিল্ড ইন্টেলিজেন্স ইউনিট গঠন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।