হিংসার আগুনে পোড়া ঝিনাইদহের ২২টি স্কুলে শিক্ষার পরিবেশ এক মাসেও ফেরানো যায়নি
ঝিনাইদহ অফিস: বই-খাতার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বসার জন্য বাড়ি থেকে আনতে হচ্ছে চট। যে চটের ওপর বসেই ফাঁকা মাঠে নেয়া হচ্ছে তাদের ক্লাস। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে তাদের প্রিয় স্কুলটি। যেখানে বসে তারা পড়ালেখা করতো। এ অবস্থা ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
শুধু গাড়াবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ই নয় একই অবস্থা কোটচাঁদপুর উপজেলার মামুনসিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। সেখানে ত্রিপল বিছিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা। আগুনে পুড়ে যাওয়ায় তাদের ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী বেঞ্চের অভাবে মাটিতে বসে ক্লাস করছে। আগুনের কারণে শৈলকুপা উপজেলার ললিত মোহন ভূঁইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও ক্লাস হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে।
এছাড়া ঝিনাইদহ জেলার আরও ১৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেয়া ও ভাঙচুরের কারণে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বিঘ্নিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা। ঝিনাইদহ সদর, শৈলকুপা, মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর উপজেলার মোট ২২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করে ভোট বিরোধীরা। এতে ক্ষতি হয় অর্ধশতাধিক শ্রেণিকক্ষের। আর কয়েক’শ চেয়ার, বেঞ্চ, টেবিল ও অন্যান্য আসবাবপত্র আগুনে পুড়ে ও ভাঙচুরে নষ্ট হয়। মোট ক্ষতির পরিমাণ ৩ কোটি টাকা বলে জানা গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলোর মধ্যে রয়েছে ঝিনাইদহ সদরে ২টি, শৈলকুপায় ১টি, কোটচাঁদপুরে ৫টি ও মহেশপুরে ১৪টি।
শিক্ষকরা বলেছেন, ঘটনার এক মাস পার হলেও আজো শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টির কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এমনকি জরুরি মোকাবেলায় একটি টাকাও তাদের বরাদ্দ দেয়া হয়নি। যে কারণে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান প্রধানকে নিজেদের চেষ্টায় জোড়াতালি দিয়ে ক্লাস চালাতে হচ্ছে।
সরেজমিনে মহেশপুর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় শিশুরা চট বিছিয়ে বাইরে ক্লাস করছে। শিশুশ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ২৮০টি শিশু ক্লাস এখন ক্লাস রুমের অভাবে বাইরে বসছে। শিক্ষকরা জানান, তাদের বিদ্যালয়ের ৪০ জোড়া বেঞ্চ, ১৫টি টেবিল ও ২০টি চেয়ার পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অফিস রুমেও আগুন দেয়ার কারণে স্কুলের সমস্ত খাতা-পত্র, বই, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ভবনসহ ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টাকার।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুকুমার দাস জানান, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে যোগাযোগ করে পাঠদানের জন্য কিছু উপকরণ আর বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণের দাবি করেছেন। পাশাপাশি আপাতত বসার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা হয়নি। যে কারণে তিনি নিজের পকেটের ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা দিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ ক্রয় করে আপাতত পাঠদানের ব্যবস্থা করেছেন।
কোটচাঁদপুর উপজেলার মামুনশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল মতিন জানান, তাদের স্কুলে এখন পর্যন্ত কোনো কাজ করা হয়নি। বসার ব্যবস্থা না থাকায় তারা ঠিকমতো ক্লাস নিতে পারছেন না। ত্রিপল বিছিয়ে ক্লাস চালাতে হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী ফুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মোছা. আশরাফুন্নাহার জানান, তাদের স্কুলের ৫টি রুমের মধ্যে একটিতে আগুন দেয়া হয়। সেই রুমটি বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে বিদ্যালয়ের ৩৬৭ জন শিক্ষার্থীর ঠিকমতো ক্লাস করানো কষ্ট হচ্ছে।
গাড়াবাড়িয়া বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী খাতুনে জান্নাত জানায়, তারা এখন বাড়ি থেকে চট (বস্তা) নিয়ে আসে। যার ওপর বসে তাদের ক্লাস চলে। বসতে হয় ফাঁকা মাঠে। চতুর্থ শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী শাহেদ খাঁন জানায়, এভাবে চট পেতে ক্লাস করতে ভালো লাগে না।
ঝিনাইদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দীলিপ কুমার বণিক জানান, তারা এখনও কোনো বরাদ্দ পাননি। যে কারণে সেভাবে কাজ করা সম্ভব হয়নি। তবে স্থানীয়ভাবে পড়ালেখার পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। ২/১টি প্রতিষ্ঠানে বেশি সমস্যা রয়েছে। তারা চেষ্টা করছেন সেগুলোতে দ্রুত শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টির।