মেহেরপুর ১৪ নম্বর খিত্তায় : ২ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাত
স্টাফ রিপোর্টার: আজ শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে তিনদিনব্যাপি বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। গত বুধবার থেকে ৩২ জেলার মুসল্লিরা ইজতেমাস্থলে হাজির হতে শুরু করেছেন। দ্বিতীয় পর্বে ৩২ জেলার মুসল্লিদের জন্য ৩৮টি খিত্তা নির্ধারণ করা আছে। ইজতেমা ময়দানে জেলাওয়ারি খিত্তায় মুসল্লিরা অবস্থান নিতে শুরু করেছেন। ২ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে ৪৯তম বিশ্ব ইজতেমা।
এদিকে আজ শুক্রবার বাদ ফজর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমবয়ানের মাধ্যমে ইজতেমার মূল কার্যক্রম শুরু হবে। আমবয়ানে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বুজুর্গ আলেমরা ঈমান, আমল, আখলাক ও কালেমা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান শুরু করবেন। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিন শুক্রবার হওয়ায় কয়েক লাখ মুসল্লি নিয়ে বৃহৎ জুমার নামাজ আদায় করা হবে। এতে গাজীপুর ও আশপাশ এলাকার বিপুলসংখ্যক মুসল্লি অংশ নেবেন। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় অংশ নিতে সৌদি আরব, পাকিস্তান, ভারত থেকে শুরু করে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকার প্রায় কয়েক হাজার বিদেশি মেহমানসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা হাজির হয়েছেন। এ পর্বে আগত মানুষের ঢল অব্যাহত থাকবে রোববার আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত। খিত্তাগুলোর মধ্যে ১ ও ২ নারায়ণগঞ্জ, ৩ ও ৪ ঢাকা, ৫ কক্সবাজার, ৬ মানিকগঞ্জ, ৭ পিরোজপুর, ৮ পটুয়াখালী, ৯ টাঙ্গাইল, ১০ জামালপুর, ১১ বরিশাল, ১২ নেত্রকোনা, ১৩ কুমিল্লা, ১৪ মেহেরপুর, ১৫ ঝিনাইদহ, ১৬, ১৭ ও ১৮ ময়মনসিংহ, ১৯ লক্ষ্মীপুর, ২০ ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ২১ কুড়িগ্রাম, ২২ বগুড়া, ২৩ পঞ্চগড়, ২৪ চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ২৫ নীলফামারী, ২৬ নোয়াখালী, ২৭ ঠাকুরগাঁও, ২৮ পাবনা, ২৯ নওগাঁ, ৩০ ও ৩১ মুন্সীগঞ্জ, ৩২ মাদারীপুর, ৩৩ গোপালগঞ্জ, ৩৪ সাতক্ষীরা, ৩৫ মাগুরা, ৩৬ খুলনা, ৩৭ সুনামগঞ্জ এবং ৩৮ নম্বর খিত্তা মৌলভীবাজার জেলার জন্য নির্ধারণ করা রয়েছে।
এবারের দু পর্বের ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের জরুরি স্বাস্থ্যসেবা প্রদান নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক প্রথম দফার নেয়া বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহ আলম শরীফ দু পর্বের ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান সম্পর্কে গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে জানান, টঙ্গী ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক কার্যক্রম মনিটর ও যোগাযোগের জন্য একটি কন্ট্রোল রুম সার্বক্ষণিক খোলা থাকছে। ইজতেমা মাঠে প্রবেশের বিভিন্ন গেট, বিশেষ করে হোন্ডাগেট, বাটাগেট, মুন্নুগেটসহ টঙ্গী হাসপাতালে অস্থায়ী মেডিকেল সেন্টার স্থাপন করা হবে। এছাড়া সিভিল সার্জন ঢাকা বিভাগ কর্তৃক বিশ্ব ইজতেমা মাঠের পশ্চিম দিকে দুইটি মেডিকেল সেন্টার স্থাপন করা হবে। আগত মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে তিন শিফট চালু রাখার জন্য প্রতি শিফটে প্রতি সেন্টারে ২ জন ডাক্তার, ২ জন ফার্মাসিস্ট এবং ১ জন সহায়ক কর্মচারী দায়িত্ব পালন করবেন। মেডিকেল সেন্টারগুলোর প্রত্যেকটির সাথে একটি করে এ্যাম্বুলেন্স থাকবে। এসব সেন্টারে সহজে দৃষ্টিগোচরের জন্য ব্যানারের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। টঙ্গী হাসপাতালে ১২টি এ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ডবাই রাখার ব্যবস্থা করা হবে, যাতে পরবর্তী প্রয়োজনে উচ্চতর হাসপাতালে রোগী রেফার্ডে ব্যবহৃত হবে। টঙ্গী হাসপাতালে একটি হৃদরোগ ইউনিট দৈনিক তিন শিফটে এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আগত বার্ন ইউনিট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া অ্যাজমা রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে ঢাকাস্থ জাতীয় বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল থেকে আগত একটি ইউনিট টঙ্গী হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসাপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান থেকে আগত একটি মেডিকেল টিমও দায়িত্ব পালন করবে। ৫০ শয্যা হাসপাতাল টঙ্গীতে সার্জারি ইউনিট জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করবে। মেডিকেল ইউনিটের মাধ্যমে নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইজতেমা চলাকালীন টঙ্গী হাসপাতালে ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে ওআরটি কর্নার চালু রাখা হবে।
দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমার নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে প্রায় ১১ হাজার পুলিশ ও ৱ্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। এ দফায়ও পাঁচ স্তরের নিরাপত্তায় ইজতেমা মাঠ ঢেকে রাখা হবে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন ঘটতে না পারে সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে। গাজীপুরের পুলিশ সুপার আবদুল বাতেন বলেন, পুলিশের প্রায় ৮ হাজার সদস্য ইজতেমার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে। বৃহস্পতিবার থেকেই আবার পূর্ণদ্যোমে ৱ্যাব ও পুলিশের সদস্যরা স্ব স্ব দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। পুলিশ ও ৱ্যাবের কন্ট্রোল রুম থেকে পর্যবেক্ষণের জন্য ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাও ব্যবহার করা হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্বে নিরাপদ যাতায়াত ও সুষ্ঠুভাবে যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রোববার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকছে ঢাকা মহানগর পুলিশ, ঢাকা ও গাজীপুর জেলা পুলিশ।
ইজতেমা উপলক্ষে এ বছরও বাংলাদেশ রেলওয়ে ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিসি) বিশেষ ট্রেন ও বাস চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। দ্বিতীয় পর্বে ৩১ জানুয়ারি, ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি মুসল্লিদের জন্য বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করবে।