সাটারিং খুলতে গিয়ে বিদ্যুত স্পৃষ্ট হয়ে মিস্ত্রির মৃত্যু
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গা শহরের সোনাপট্টির অবৈধভাবে নির্মাণাধীন দোতলা বাড়ির ছাদের শাটারিঙের তক্তা খুলতে গিয়ে বিদ্যুত স্পৃষ্ট হয়ে এলাহী বক্স নামের এক শাটারিং মিস্ত্রির মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। সন্তোষ কুমার কর্মকারের নির্মাণাধীন বাড়ির দোতলার ছাদের কার্নিশ (সম্প্রসারিত অংশ) রাস্তার বিদ্যুত লাইনের তারের ওপর অবৈধভাবে সম্প্রসারিত করায় ওই মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গার গোবিন্দপুর গ্রামের দরিদ্র গোবিন্দ কর্মকারের ছেলে সন্তোষ কুমার আলমডাঙ্গা শহরের সবচে অভিজাত এলাকা সোনাপট্টিতে দোতলা বাড়ির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। রাস্তার পাশে কোনো জমি না রেখে তিনি বাড়ি নির্মাণের প্রচলিত আইন উপেক্ষা করে দোতলার ছাদ সম্প্রসারিত করছেন। এমনকি ছাদের সম্প্রসারিত অংশ রাস্তার বিদ্যুত লাইনের ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। গতকাল দুপুরে ওই ছাদের শাটারিঙের কাঠ খুলতে গেলে শাটারিং মিস্ত্রি এলাহী বক্স (৪৫) বিদ্যুত স্পৃষ্ট হয়ে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন।
ইতঃপূর্বে সন্তোষ কুমার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ বাজারে অবস্থিত এক সোনার দোকানে কর্মকার হিসেবে কাজ করতেন। সম্প্রতি তিনি আলমডাঙ্গা শহরের বনেদী এলাকা সোনাপট্টিতে প্রায় অর্ধকোটি টাকায় জমি কিনে দোতলা বাড়ি নির্মাণ কাজ শুরু করেন। হঠাত করে অন্যের দোকানের একজন কর্মকার এতো বিপুল অঙ্কের টাকা কোথায় পেলেন? এ প্রশ্ন শহরের অনেকেরই। তবে শহরে গুঞ্জন রয়েছে সন্তোষ কর্মকার সোনা চোরাচালানীর সাথে জড়িত। কয়েক মাস পূর্বে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিলো বলেও একাধিক সূত্র জানিয়েছে। মাত্র কয়েক বছর পূর্বে তিনি সোনাপট্টিতে বীথি জুয়েলার্স নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। একরকম টাকার গরমেই তিনি আইনকে অবজ্ঞা করে এভাবে বাড়ি নির্মাণ করে চলেছেন। এ দুর্ঘটনা ঘটার পর তিনি দোকান বন্ধ করে গা ঢাকা দেন। অবৈধভাবে নির্মাণ করা ঝুঁকিপূর্ণ ওই বাড়িতে কাজ করার সময় শাটারিং ব্যবসায়ীর মৃত্যুর সংবাদে গ্রামবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। পরে সন্তোষ কর্মকার নিহতের বাড়িতে মস্তান শ্রেণির লোকজন পাঠিয়ে নিহতের পরিবারকে আপস-মীমাংসা করতে বাধ্য করেন। সন্ধ্যায় কিছু হোমড়া-চোমরা ব্যক্তিকে নিয়ে সন্তোষ কর্মকার ঢোকেন থানায়। এদিকে খোদ শহরের ওপর অবৈধভাবে নির্মাণাধীন বাড়ির ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে গিয়ে দরিদ্র শাটারিং ব্যবসায়ীর মৃত্যুর মতো দুঃখজনক ঘটনা ঘটলেও থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের এ আচরণে এলাকার মানুষ অসন্তোষ প্রকাশ করে।
নিহতের পরিচয়: আলমডাঙ্গা উপজেলার কালিদাসপুর ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে এলাহী বক্স। ৭ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন মেজ। পার্শ্ববর্তী পারআলমডাঙ্গা গ্রামে বিয়ে করার পর তিনি ওই গ্রামেই বসবাস করতেন। তার ২ ছেলে। বড় ছেলে আলমগীর ঢাকায় চাকরি করেন। ছোট ছেলে আলামিন রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। গতকাল জানাজা শেষে নিহতের লাশ গ্রামের গোরস্তানে দাফন করা হয়েছে।