ঐশীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার: পুলিশ দম্পতি মাহফুজুর রহমান ও স্বপ্না রহমানের খুনের দায় স্বীকার করা মেয়ে ঐশী রহমানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ঐশীকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক দাবি করে মানবাধিকার কমিশনের পক্ষে রিমান্ডে নেয়ার পর আপত্তি তোলা হয়। শুরু হয় ঐশীর বয়স নিয়ে বিভ্রান্তি। গত ২২ আগস্ট ঐশীর জন্মবৃত্তান্ত প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ঐশীর বয়স (২২ আগস্ট পর্যন্ত) ১৯ বছর ৪ দিন উল্লেখ করা হয়েছিলো। অবশ্য ওইদিনই ঢাকা মেডিকেলে ফরেনসিক বিভাগে ঐশীর বয়স সংক্রান্ত পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। তবে পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় ঐশীর বয়স উল্লেখ করা হয়েছিলো ১৭ বছর। ডাক্তারের পরীক্ষার রিপোর্ট, মতামত ও মামলার নথি দেখে পাঁচদিনের রিমান্ড শেষে ঐশীকে গাজীপুরের কোনাবাড়ির কিশোর (সংশোধন) উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। সমাজসেবা অধিদফতরের প্রবেশন কর্মকর্তা ছিদ্দিকুর রহমান আদালতের কাছে আবেদন করেন, ঐশী প্রাপ্তবয়স্ক। তার জন্মবৃত্তান্তের সব নথি এবং ডাক্তারি পরীক্ষার সব তথ্য রয়েছে। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আদালতের বিচারক মো. আনোয়ার ছাদাত সমস্ত নথিপত্র দেখে নিশ্চিত হয়েই ঐশীকে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করেন। গাজীপুরের সমাজসেবা অধিদফতরের উপপরিচালক লুৎফুন্নেসা বলেন, আদালতের নির্দেশনার কাগজপত্র কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে এলেই ঐশীকে কারাগারে পাঠানোর সব ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, ঐশী যে প্রাপ্তবয়স্ক সেটা তার কথাবার্তা-চালচলনে বোঝা গেছে। এমনকি উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আগে কাগজে লেখা ঐশীর বয়স ১৮ বছর কেটে ১৭ বছর লেখা হয়েছিলো।

2nd2

এদিকে দীর্ঘ ১৫ দিন ধরে বাবা-মাকে খুঁজে না পেয়ে নিহত পুলিশ দম্পতি মাহফুজুর রহমান ও স্বপ্না রহমানের একমাত্র ছেলে ঐহী রহমান মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। তাকে রাজধানীর উত্তরায় তার এক আত্মীয়ের বাসায় পুলিশি নিরাপত্তায় রাখা হয়েছে। তদন্ত সংস্থার নির্দেশে ওই বাসায় ঐহীকে রাখা হয়। তবে ওই বাসায় মাহফুজুর রহমানের নিকটাত্মীয় একজন চিকিৎসক ঐহীর দেখভাল করেছেন। ঐহীর চাচা মশিউর রহমান রুবেল এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, ঐহীকে এ মুহূর্তে ময়মনসিংহের গ্রামে নিয়ে এলে হাজারো মানুষ জড়ো হবে। এটা একটা কারণ যেমন- তেমনি তার মানসিক অবস্থা ভালো না থাকায় তাকে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, বাবা-মার শূন্যতা ঐহী বুঝতে পারছে। তাই বাবা-মা কোথায় আছে সেটা বারবার জানার চেষ্টা করছে। রুবেল বলেন, আমরা এখনই ঐহীকে গ্রামে আনছি না। তবে তাকে দেখভাল আমিই করবো।
গত ১৬ আগস্ট পুলিশ দম্পতির লাশ উদ্ধারের পর দায়ের করা মামলার বাদী হয়েছেন নিহত পুলিশ কর্মকর্তার ভাই মশিউর রহমান রুবেল। তিনি বলেন, যা হওয়ার তা তো হয়ে গেছে। এখন ছেলে-সন্তানকে মানুষ করতে হবে। বাবা-মায়ের শূন্যতা যেন ঐহী বুঝতে না পারে সে জন্য আদরে-আহ্লাদে রাখার ব্যবস্থা করবেন তিনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঐহীর চিকিৎসক জানান, পুলিশি নিরাপত্তায় ঐহী আছে। ঐহী খেলছে, তাকে হাসি-খুশি রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। তার মানসিক অবস্থা বুঝে চাচা রুবেলের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ঘাতক কন্যা ঐশী রহমান প্রাপ্তবয়স্ক মর্মে প্রতিবেদন পাওয়ায় কিশোর উন্নয়ন সংস্থা থেকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঐশী ও সুমীর প্রকৃত বয়স কতো তা জানার জন্য গত ২২ আগস্ট রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগে পাঁচটি পরীক্ষা করা হয়। দুজনের মোট ১০টি এক্সরে করানো হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- হাঁটুর হাড়, দাঁত ও মেরুদণ্ডসহ শরীরের বিভিন্ন অংশের এক্স-রে। ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে তথ্য হাতে পেয়ে সমাজসেবা অধিদফতরের প্রবেশন কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান ঐশী প্রাপ্তবয়স্ক মর্মে গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার ছাদাত এ আদেশ দেন।

প্রকৃত বয়স নিয়ে জটিলতা সৃষ্টির কারণে গত ২৪ আগস্ট ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার পর ঐশী ও গৃহপরিচারিকা সুমীকে গাজীপুরের কিশোর উন্নয়ন সংস্থায় পাঠানো হয়েছিলো। সেখানে ঐশী সেলাই কাজ শিখছিলো।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) কার্যালয় লাগোয়া রাজধানীর ২, চামেলীবাগের চামেলী ম্যানশনের ষষ্ঠতলার ৫/বি নম্বর ফ্ল্যাট থেকে গত ১৬ আগস্ট পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের লাশ উদ্ধার করা করে পুলিশ। গত ১৪ আগস্ট বাবা পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও মা স্বপ্না রহমানকে খুন করে মেয়ে ঐশী পালিয়ে যায়। ১৭ আগস্ট নিজেই পুলিশের হাতে ধরা দেয়। আদালতে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঐশীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশনা দেন আদালত। বাবা-মাকে খুনের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়া ঐশী রহমানের হাতের আঙুলের (ফিঙ্গার প্রিন্ট) ছাপ নেয় মেডিকেল কর্তৃপক্ষ।