স্টাফ রিপোর্টার: ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে ও সাতক্ষীরার দেবহাটায় জামায়াত ও শিবিরের তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি যৌথবাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে এরা নিহত হন। নিহতদের পরিবারের সদস্যদের দাবি, গ্রেফতারের পর পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। কোটচাঁদপুরে মহেশপুর উপজেলা জামায়াতের অর্থসম্পাদক স্কুলশিক্ষক এনামুল হক নিহত হওয়ার প্রতিবাদে আজ সোমবার অর্ধদিবস হরতাল ডেকেছে স্থানীয় ১৯ দলীয় জোট। সাতক্ষীরায় নিহতরা হলেন- দেবহাটা উপজেলা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি আবুল কালাম (২২) ও শিবিরের সদস্য মারুফ হাসান ওরফে ছোট (২৫)। পুলিশ বলেছে, বন্দুকযুদ্ধের সময় দু স্থানে আহত হয়েছেন পুলিশের ৬ সদস্য। উদ্ধার করা হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র।
কোটাচাঁদপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে যৌথবাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে উপজেলা জামায়াতের অর্থসম্পাদক স্কুলশিক্ষক এনামুল হক (৪৫) নিহত হয়েছেন। গতকাল রোববার ভোরে কোটচাঁদপুর উপজেলার নওদাপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। পুলিশ এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, ঘটনাস্থল থেকে একটি সাটারগান ও দুটি তাজা বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। প্রায় আধাঘণ্টাব্যাপি বন্দুকযুদ্ধে ৩০ রাউন্ড গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তবে জেলা জামায়াতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এনামুলক হককে গত শনিবার বিকেলে আটক করার পর হত্যা করা হয়েছে।
কোটচাঁদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহজাহান আলী খান বলেছেন, নওদাপাড়া গ্রামে গভীর রাতে সন্ত্রাসীদের গোপন বৈঠকের খবর পেয়ে অভিযান শুরু করে যৌথবাহিনী। রাত দেড়টার দিকে গ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে পৌঁছুলে যৌথবাহিনীকে লক্ষ্য করে ৩টি বোমা ফাটিয়ে ১০ রাউন্ড গুলি করে সন্ত্রাসীরা। এতে পুলিশের এসআই মুক্তার হোসেন, মিজানুর রহমান ও কনস্টেবল জয়দেব বিশ্বাস আহত হন। যৌথবাহিনীর সদস্যরাও পাল্টা ৩০ রাউণ্ড গুলি চালায়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি শাটারগান ও দুটি তাজা বোমা উদ্ধার করে। উভয়পক্ষের বন্দুকযুদ্ধের এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলে এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ। পরে গ্রামবাসীরা তাকে জামায়াত নেতা এনামুল হক বলে শনাক্ত করে। মারাত্মক আহত অবস্থায় ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নেয়া হলে রাত ৪টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক আরিফ হোসেন তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। নিহত এনামুল হকের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালমর্গে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, নিহত জামায়াত নেতা এনামূল হক কোটচাঁদপুর উপজেলার বলরামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক চাঁদপাড়া গ্রামের আব্দুল মালেক বিশ্বাসের ছেলে। নিহতের ছোট ভাই আমিরুল ইসলাম বলেন, আমার ভাই এনামুল জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। গত শনিবার উপজেলা পরিষদ থেকে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে আমরা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করলে তারা অস্বীকার করে। রাতেই আমরা খবর পাই আমার ভাইকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। কোটচাঁদপুর উপজেলা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম জানান, নিহত এনামুল কোটচাঁদপুর উপজেলা জামায়াতের অর্থসম্পাদক ও একজন স্কুলশিক্ষক। উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক মুয়াবিয়া হোসেনের পক্ষে গত শনিবার বিকেলে মনোনয়ন জমা দিতে কোটচাঁদপুরের ইউএনও কার্যালয়ে যান। বিকেল ৪টার দিকে উপজেলা নির্বাচন অফিসের সামনে থেকে পুলিশের শাদা পোশাকধারী একটি দল তাকে আটক করে। নিহতের ভাই দাবি করেন, আটকের পর তাকে রাতের কোনো এক সময়ে হত্যা করা হয়েছে।
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলায় আজ সোমবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অর্ধদিবস হরতাল আহ্বান করেছে স্থানীয় ১৯ দলীয় জোট। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার নওদাপাড়া গ্রামে শনিবার মধ্যরাতে যৌথবাহিনীর অভিযানের সময় কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ কোটচাঁদপুর উপজেলা জামায়াতের অর্থসম্পাদক এনামুল হক বিশ্বাস মারা যান। এরই প্রতিবাদে এ হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ঝিনাইদহ ১৯ দলীয় জোটের আহ্বায়ক মশিউর রহমান এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও হরতালের সমর্থন জানিয়েছেন। অবিলম্বে তিনি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সাতক্ষীরায় নিহত আবুল কালাম দেবহাটার কুলিয়া গ্রামের আকবর আলীর ছেলে। তিনি সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সম্মান প্রথমবর্ষের ছাত্র। মারুফ হাসান একই গ্রামের জামায়াত নেতা আশরাফুল ইসলামের ছেলে। পুলিশের দাবি, দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু রায়হান হত্যামামলার আসামি মারুফ হাসানকে গত শুক্রবার রাতে গ্রেফতার করে যৌথবাহিনী। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কুলিয়া এলাকা থেকে গত শনিবার সকালে আরেক আসামি আবুল কালামকেও গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, তাদের কাছে অস্ত্র আছে। পুলিশ জানায়, গত শনিবার রাতে তাদেরকে নিয়ে যৌথবাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র উদ্ধারের জন্য নারিকেলি এলাকায় গেলে জামায়াত ও শিবির সদস্যরা তাদের ওপর গুলিবর্ষণ ও বোমা ছুঁড়তে থাকে। এ সময় যৌথবাহিনীও পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। এক পর্যায়ে আবুল কালাম ও মারুফ গুলিবিদ্ধ হন। তাদেরকে প্রথমে দেবহাটার সখিপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাদেরকে সাতক্ষীরা হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় আহত হয়েছে তিন পুলিশ সদস্য। ঘটনাস্থল থেকে দুটি পাইপগান ও পাঁচটি বোমাসহ পাঁচ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, দেবহাটা থানায় আবুল কালামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের নাশকতা, পুলিশের ওপর হামলা ও খুনসহ ১০টি এবং মারুফ হাসানের বিরুদ্ধে ৯টি মামলা রয়েছে। নিহতদের স্বজনরা জানান, তাদেরকে ধরে দেবহাটা থানায় রাখা হয়। পরে তাদেরকে দেবহাটা উপজেলার নারিকেলি এলাকায় নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।