স্টাফ রিপোর্টার: মেহেরপুর জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি তারিক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (৩৫) যৌথবাহিনীর সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। গত রোববার রাত দেড়টার দিকে মেহেরপুর শহরের উপকণ্ঠে বন্দর শ্মশানঘাট এলাকায় ওই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন মেহেরপুর পুলিশ সুপার একেএম নাহিদুল ইসলাম। ঘটনাস্থল থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র, ৫টি ককটেল ও দু রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। গত রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে মেহেরপুর শহরের ইসলামী ব্যাংক এলাকা থেকে ডিবি পুলিশের একটি দল তাকে গ্রেফতার করে। তিনি মেহেরপুর জেলা জামায়াতের আমির হাজি ছমির উদ্দীনের বড় ছেলে। তবে পরিবারের দাবি বন্দুকযুদ্ধের নামে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
মেহেরপুর পুলিশ সুপার আরো জানিয়েছেন, ‘তারিক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতারের পর যৌথবাহিনী জিজ্ঞাসাবাদ করে। এক পর্যায়ে সে অস্ত্র ও বোমার সন্ধান দেয়। স্বীকারোক্তি মোতাবেক বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়। বন্দর এলাকায় পৌঁছুলে তারিকের সহযোগীরা যৌথবাহিনীর সদস্যদের ওপর বোমা নিক্ষেপ করে। একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে যৌথবাহিনীর সদস্যরা পাল্টা গুলি চালান। কিছু সময় গুলি চলে। থেমে যাওয়ার পর গুলিবিদ্ধ তারিককে উদ্ধার করে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হরতাল-অবরোধের সময় সড়কের পাশে সরকারি গাছ কাটা, ককটেল বিস্ফোরণ ও পুলিশের ওপর হামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলার আসামি ছিলেন তারিক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। ঘটনাস্থল থেকে দেশে তৈরি একটি এলজি শাটারগান, ৫টি ককটেল ও ২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে পুলিশ।’ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় মামলা করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
তবে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। নিহতের ভাই তৌফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, ‘জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি করার জন্যই তাকে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করা হয়েছে। তিনি কোনো খারাপ কাজের সাথে জড়িত ছিলেন না। সব সময় মানুষের উপকার করতেন। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য মানুষের কাছে বিচার চাই না। আল্লাহ বিচার করবেন। এলাকার কেউ তারিকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ তুলতে পারবেন না। সব সময় হাসি-খুশি ও পরের উপকার নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন তিনি। তাকে কেন হত্যা করা হলো?’ এদিকে তারিকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ভোর থেকেই মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের লাশঘরের সামনে ভিড় করে অসংখ্য মানুষ। নিহতের স্বজন, দলীয় নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনেকেই লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। নিহতের মা-বাবাসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী। ছেলের সাথে শেষ দেখা হয়নি পিতা-মাতার।
গতকাল দুপুরে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের হাতে তারিকের লাশ হস্তান্তর করে পুলিশ। বাড়িতে আনা হয় লাশ। কফিনে লাশ রাখা হয় শহীদ ড. সামসুজ্জোহা পার্কে। হাজারো মানুষ একনজর দেখার জন্য সেখানে ভিড় করে। এ সময় অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। সশরীরে এসে দেখতে না পারলেও স্কাইপে পার্কের ওই দৃশ্য দেখেন হাজি ছমির উদ্দীন। ছেলের ওই মৃত্যু শহীদি মৃত্যু উল্লেখ করে সকলের কাছে ক্ষমা ও দোয়া প্রার্থনা করেন তিনি। পার্কেই আছরের নামাজের পর জানাজা হয়। জানাজার আগে ছোট ভাই তৌফিকুল ইসলাম তার বড় ভাই তারিকের ব্যক্তিগত জীবনের বর্ণনা দিয়ে বলেন, তার তিন বছর বয়সী শিশুকন্যার কী অপরাধ? এ বয়সেই সে কেন পিতার আদর থেকে বঞ্চিত হলো? তাকে শহীদ আখ্যায়িত করে আত্মার মাগফেরাত কামনায় সকলের কাছে দোয়া কামনা করেন তিনি। আরো বক্তব্য রাখেন- মেহেরপুর পৌর মেয়র আলহাজ মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু। তিনি বক্তব্যে বলেন, যা বলার ছিলো তা তৌফিক বলে দিয়েছে। তারিকের পিতার পক্ষ থেকে তিনি সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তারিকের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি মাসুদ অরুনসহ বিএনপি নেতৃবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। জানাজার সময় কানায় কানায় পূর্ণ হয় পার্ক। স্থান সংকুলান না হওয়ায় পার্কের সামনের সড়কে লাশ রেখে কয়েকটি কাতার বাড়ানো হয়। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। পরে পৌর কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।
ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে আসেন তারিক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তিনি মেহেরপুর জেলা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। গতকাল বিকেলে জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ করা হয়েছে, তারিককে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডটিকে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হিসেবে প্রচার করা হয়। জেলা শিবিরের পক্ষ থেকে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে দোষী পুলিশদের গ্রেফতারের আহ্বান জানানো হয়েছে।