স্টাফ রিপোর্টার: ধাপে ধাপে এবার চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বচন কমিশন (ইসি)। এরই অংশ হিসেবে আজ রোববার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হচ্ছে। প্রথম ধাপে একশর অধিক উপজেলায় ১৮ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে এসএসসি পরীক্ষার মধ্যেই এ নির্বাচন করতে যাচ্ছে ইসি। সারাদেশে তিন ধাপে এ নির্বাচন হবে। প্রথম ধাপে ফেব্রুয়ারি, দ্বিতীয় ধাপে মার্চ ও তৃতীয় ধাপে এপ্রিল মাসে নির্বাচন হবে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা ও নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে এবার ধাপে ধাপে নির্বাচন করার কৌশল নিয়েছে ইসি। এর আগে ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি একযোগে সব উপজেলায় নির্বাচন হয়েছিলো। বেশ কয়েকটি উপজেলায় গোলযোগের কারণে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছিলো। ইসির একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে, উপজেলা নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রের তালিকা চেয়ে আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়েছে কমিশন। উপজেলা নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, ফেব্রুয়ারিতে দেশজুড়ে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবুও ওই সময়েই কিছু উপজেলায় নির্বাচন করতে হচ্ছে।
ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, আজ রোববার সকাল ১১টায় সিইসির সভাপতিত্বে কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় নির্বাচনের তফশিল চূড়ান্ত করা হবে। এর আগে গতকাল সিইসির সভাপতিত্বে ইসি কার্যালয়ে স্থানীয় সরকার, শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক হয়। এতে সিইসি ছাড়াও চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবালয়ের সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে কমিশন থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ উপজেলাগুলোর যে তালিকা দেয়া হয় তাতে কিছুটা ত্রুটি রয়েছে বলে জানায় স্থানীয় সরকার বিভাগ। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ১১৩টি উপজেলায় নির্বাচন করার বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে জানায় ইসি। এ ব্যাপারে কমিশনের প্রস্তুতি সম্পর্কে মন্ত্রণালয়কে ধারণা দেয়া হয়েছে। তফসিল ঘোষণা করা হলে কমিশনকে পর্যাপ্ত সহায়তা করা হবে বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে। ইসির পাশাপাশি আজ সকালের মধ্যে স্থানীয় মন্ত্রণালয় থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ উপজেলা পরিষদের একটি তালিকা পাঠানোর কথা রয়েছে। ওই তালিকা সমন্বয় করে তফশিল ঘোষণা করবে কমিশন। বেশ কয়েকটি উপজেলা পরিষদের ক্ষেত্রে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারির আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এছাড়া তিন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি ও এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষার সময়সূচি ও উপজেলা নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইসিকে জানানো হয়েছে, ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়ে ১৬ মার্চ পর্যন্ত চলবে। এ সময়ের মধ্যে এসএসসির হিসাববিজ্ঞান পরীক্ষা একটু পরিবর্তন করা হলে ১৮ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা সম্ভব। যদিও ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবসের ছুটি রয়েছে। এছাড়াও মার্চ মাসে ১৮ থেকে ২৫ মার্চ দ্বিতীয় দফা উপজেলা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা যেতে পারে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়েছে, পুরো এপ্রিল জুড়ে এইচএসসি পরীক্ষা থাকবে। ওই সময়ে ভোটগ্রহণের সময় নির্ধারণ করার সুযোগ নেই। তবে আলোচনা সাপেক্ষে মে মাসে ভোটগ্রহণ হতে পারে। মার্চ মাসের প্রথম দিকে পরীক্ষা থাকার কারণে ২৫ মার্চ পর্যন্ত যে উপজেলাগুলোতে নির্বাচন বকেয়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তার নির্বাচনও ফেব্রুয়ারিতেই হবে। এ হিসাব ধরলে প্রায় আড়াইশ উপজেলায় নির্বাচন হতে পারে। কমিশন গতকাল রাত পর্যন্ত যে তালিকা করেছে তাতে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে। তবে কতো উপজেলার তফশিল ঘোষণা করা হবে সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি কমিশন।
বৈঠক শেষে কাজী রকিবউদ্দীন বলেন, ফেব্রুয়ারির প্রথম দফায় মেয়াদোত্তীর্ণ উপজেলা নির্বাচন করা হবে। কখন কীভাবে নির্বাচন করা যায় সে ব্যাপারে কমিশন মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলেছে। কারণ, সামনে ছাত্র-ছাত্রীদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা রয়েছে। তাদের অসুবিধা না করে নির্বাচন করতে চায় কমিশন। তবে আইনি বাধ্যবাধকতা থাকায় নির্বাচন করতে হচ্ছে। ইসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংবিধান অনুসারে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন করার দায়িত্ব ইসির নয়। আইন অনুযায়ী স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে এ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করে কমিশন। সরকার চাইলে গেজেট প্রজ্ঞাপন দিয়ে নির্দিষ্ট সময়সীমার পরেও এ নির্বাচন করতে পারে। এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখিয়ে নির্বাচন পেছাতে পারবে।
১৯৮২ সালে উপজেলা পদ্ধতির প্রবর্তন হয়। ১৯৮৫ সালে প্রথমবারের মতো এবং ১৯৯০ সালে দ্বিতীয়বার উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর উপজেলা পদ্ধতি বাতিল করে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে আবার উপজেলা পদ্ধতি চালু করে। কিন্তু ওই সময়ে নির্বাচন হয়নি। ১৯ বছর পর ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি উপজেলা পরিষদের তৃতীয় নির্বাচন হয়। নির্বাচনের পর উপজেলা পরিষদগুলোর প্রথম বৈঠক হয় ওই বছরের ২৩ ফেব্রয়ারি থেকে ২৭ মের মধ্যে। আইন অনুসারে প্রথম বৈঠকের দিন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর হচ্ছে উপজেলা পরিষদের মেয়াদ। এ মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে। দেশে বর্তমানে ৪৮৭টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে। এরমধ্যে নলডাঙ্গার গেজেট বিজ্ঞপ্তি পায়নি ইসি। তারাকান্দায় ভোট হয় ২০১২ সালের ৩ অক্টোবর। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পটুয়াখালী, বগুড়া ও রাজবাড়িতে নবগঠিত চারটি উপজেলা রয়েছে। এ ছয়টি বাদ দিয়ে ৪৮১টি উপজেলার মধ্যে ১১৩টি উপজেলার নির্বাচনের মেয়াদ ১০ মার্চের মধ্যে শেষ হচ্ছে। কমিশনের মতে, ফেব্রুয়ারিতে ৪৮ জেলার ১১৩টি, মার্চে ৫৯ জেলার ২২১টি, এপ্রিলে ২৬ জেলার ৩৬টি এবং মে মাসে ৩৫টি জেলার ৮৬টি উপজেলাসহ জুন-জুলাই মাসেও বেশকিছু উপজেলার মেয়াদ শেষ হচ্ছে।
যেসব উপজেলার মেয়াদ ফেব্রুয়ারিতে শেষ হচ্ছে : ফেব্রুয়ারিতে মেয়াদ শেষ হওয়ায় যে ১১৩ উপজেলায় নির্বাচন হতে যাচ্ছে সেগুলো হলো- পঞ্চগড় সদর, বোদা, আটোয়ারী দেবীগঞ্জ, দিনাজপুরের কাহারোল, খানসামা, নীলফামারীর ডিমলা, সৈয়দপুর ও জলঢাকা, রংপুর সদর, গঙ্গাচড়া, তারাগঞ্জ, মিঠাপুকুর, পীরগাছা, পীরগঞ্জ ও কাউনিয়া, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী, ফুলবাড়ী ও উলিপুর, গাইবান্ধার সাঘাটা ও গোবিন্দগঞ্জ, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি, বগুড়ার দুপচাঁচিয়া, সারিয়াকান্দি, ধুনট, নন্দীগ্রাম, শেরপুর ও সোনাতলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, নওগাঁর রানীনগর, মান্দা ও মহাদেবপুর, রাজশাহীর মোহনপুর, নাটোরের সিংড়া, সিরাজগঞ্জ সদর, কাজীপুর, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, পাবনার সাঁথিয়া, সুজানগর ও আটঘরিয়া, মেহেরপুর সদর, কুষ্টিয়া সদর, ভেড়ামারা, ঝিনাইদহ সদর, কালিগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও শৈলকুপা, যশোরের অভয়নগর, মাগুরা সদর ও শ্রীপুর, নড়াইলের কালিয়া, খুলনার দিঘলিয়া ও কয়রা, সাতক্ষীরার আশাশুনি, পটুয়াখালী সদর, ভোলার বোরহানউদ্দিন ও লালমোহন, বরিশালের গৌরনদী ও বাকেরগঞ্জ, টাঙ্গাইল সদর, জামালপুর সদর ও সরিষাবাড়ী, শেরপুরের নকলা, নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও কেন্দুয়া, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ, বাজিতপুর ও নিকলী, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর, সিংগাইর, সাটুরিয়া ও শিবালয়, ঢাকার ধামরাই, দোহার ও নবাবগঞ্জ, গাজীপুরের কাপাসিয়া, নরসিংদীর পলাশ ও বেলাবো, রাজবাড়ী সদর, বালিয়াকান্দি ও পাংশা, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী ও মুকসুদপুর, মাদারীপুরের কালকিনি, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ, জাজিরা, ডামুড্যা গোসাইরহাট, সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দোয়রাবাজার ও ছাতক, সিলেটের বিশ্বনাথ, জকিগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, গোয়াইনহাট, জৈন্তাপুর ও বিয়ানীবাজার, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, হবিগঞ্জের বাহুবল ও মাধবপুর, বি-বাড়িয়ার আখাউড়া, কুমিল্লার মেঘনা, চাঁদপুরের শাহরাস্তি, ফেনীর সোনাগাজী, চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও মিরসরাই, খাগড়াছড়ি সদর, মাটিরাঙ্গা, মহালছড়ি, পানছড়ি ও মানিকছড়ি উপজেলা।