স্টাফ রিপোর্টার: রোববার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ে কোনো সম্মান নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, এ নির্বাচনে ভোটারদের আনন্দ নেই, দেশের শান্তি নেই। গতকাল সোমবার রাতে চ্যানেল আইয়ে সরাসরি সম্প্রচারিত গ্রামীণফোন আজকের সংবাদপত্র অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরীর উপস্থাপনায় এ অনুষ্ঠানে দশম সংসদ নির্বাচনের রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা এবং নৈতিক বৈধতা সীমিত বলে মত দেন তিনি। তবে শেখ হাসিনার নতুন সরকারের মেয়াদ স্বল্পকালীন না দীর্ঘকালীন হবে তা তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে বলে উল্লেখ করেন ড. দেবপ্রিয়। বিরোধী দল, আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় এবং ব্যবসায়ী সমপ্রদায়ের ভূমিকার কথা বলেন তিনি। বলেন, প্রধানমন্ত্রী আজ আক্রমণ করেন, না আমন্ত্রণ জানান তাই এখন দেখার বিষয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে মতিউর রহমান চৌধুরী ড. দেবপ্রিয়ের কাছে জানতে চান, কাগজের শিরোনাম এবং সর্বত্র একই আলোচনা ভোট কেমন হলো, কেমন দেখলেন? জবাবে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এ নির্বাচনকে নিয়ে খুঁটিনাটি মূল্যায়নের কিছু নেই। ভোটে একটি বিষয়ই শুধু দেখার ছিলো। মানুষ কতখানি ভোট দেয়। ভোটের পর আট ঘণ্টা চলে গেলে এখনও নির্বাচন কমিশন বলছে না কত শতাংশ ভোট পড়লো। কোনো কোনো আসনে ১১, ১২, ২০ হাজার ভোট পেয়ে কেউ জয়ী হয়েছেন। আবার কোথাও কোথাও প্রায় ২ লাখ ভোট পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। ৩৫টির মতো কেন্দ্রে একজন ভোটারও ভোট দেননি। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে খুবই দুর্লভ ঘটনা। তবে আমার কাছে কিছু ফলাফলকে লক্ষণীয় মনে হচ্ছে। আমাদের জাতীয় নেতা কাজী জাফর উল্লাহর পরাজয় খুবই লক্ষণীয়। আমাদের গুলশানে বিএনএফের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। আমরা কেউই তাকে চিনি না। নির্বাচনে সহিংসতায় ২০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন। তিনি বলেন, অনেকেই বলেছেন দশম সংসদ নির্বাচন ধারাবাহিকতা রক্ষার নির্বাচন। এ নির্বাচনের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়েও আমি কোনো প্রশ্ন তুলবো না। তবে এ নির্বাচনের রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা সীমিত। নৈতিক বৈধতাও সীমিত। এ নির্বাচনেও জালিয়াতি হয়েছে কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাবে। ৮৮ সালের নির্বাচনে ৫০ শতাংশের মতো ভোট দেখানো হয়েছিলো। আমরা জানি তাতে অনেক জাল ভোট ছিলো। ৯৬ সালের নির্বাচনেও ২৬ শতাংশ ভোট পড়েছিলো। কিন্তু সেখানে অনেক জাল ভোট পড়েছিলো। এবারের নির্বাচন নিয়েও বহুদিন পরেও গবেষণা হবে। মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, সকালে একরকম দেখলাম, দুপুরে এক রকম, রাতে আরেক রকম। এ যেন ভোজবাজির খেলা। ড. দেবপ্রিয় বলেন, আমি আগেই বলেছি এ নির্বাচনে কোনো অহঙ্কার নেই, আনন্দ নেই। প্রশ্ন হচ্ছে আগামীকাল সকাল থেকে কী হবে? বিরোধী দল আবারও হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এবারের নির্বাচন যখন হয়ে গেল তখন একটি প্রধান দলের নেতা গৃহবন্দি না কারাবন্দি। আরেকটি প্রধান দলের নেতা হাসপাতালে আটক। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার দু পথে এগোতে পারে। প্রথমত, সরকার হয়তো মনে করতে পারে তারা ৫ বছরের জন্য ম্যান্ডেট পেয়েছে। এখন তারা আরও শক্তি প্রয়োগ করতে পারে। আবার প্রধানমন্ত্রীর নতুন উপলব্ধি হতে পারে। তিনি বলতে পারেন, আলোচনায় কোনো পূর্বশর্ত নেই। তারানকো সাহেবের উদ্যোগে শুরু হওয়া আলোচনা যেখানে থেমে গেছে সেখান থেকে তা আবার শুরু হবে। ড. দেবপ্রিয় বলেন, শেখ হাসিনার নতুন সরকারের মেয়াদ স্বল্পস্থায়ী না দীর্ঘস্থায়ী হবে তা নির্ভর করছে বিরোধী দলের ভূমিকার ওপর। তারা তাদের আন্দোলনের সাথে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারেন কি-না তা দেখার বিষয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। একটিমাত্র দেশ ছাড়া আর কোনো দেশ তো বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বস্তিতে নেই। খুব দ্রুতই হয়তো তাদের প্রতিক্রিয়া আমরা দেখতে পাবো। তবে তাদের ব্যবস্থার বিষয়টি দেখতে আরও সময় লাগবে। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায় কার্যকরের বিষয়টি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটি একটি আদর্শিক সংগ্রাম। এতে বেশির ভাগ মানুষের অন্তর্ভুক্তির জন্যই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রয়োজন। স্বাধীনতার চেতনা গণতান্ত্রিক চেতনা।