স্টাফ রিপোর্টার : আপাতত নিজ কর্মস্থলেই থাকছেন দেশের একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান দর্শনা কেরু এ্যান্ড কোম্পানী ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জাহেদ আলী আনছারী। গত ২৩ মার্চ বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের মাবন সম্পদ বিভাগের প্রধান রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিক এক পত্রে তাকে বর্তমান কর্মস্থল দর্শনা থেকে ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে বদলি করা হয়েছিল।
বদলি আদেশ স্থগিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেরুর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহেদ আলী আনছারী। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি জানান, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল হালিম বদলি স্থগিতের বিষয়টি তাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন।
জানা গেছে, বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশে কদর বাড়ে জীবাণুনাশক হ্যান্ড স্যানিটাইজারের। বিভিন্ন কোম্পানীর উৎপাদিত হ্যান্ড স্যানিটাইজার বাজারে থাকলেও কঠিন সংকট দেখা দেয় হ্যান্ড স্যানিটাইজারে। সাধারন মানুষের সেই চাহিদা মেটাতে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ডিস্টিলারি কেরু এন্ড কোং (বাংলাদেশ) লিমিটেড দেশে প্রথমবারের মত হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেয়। কয়েকদিন নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর গত ২৩ মার্চ আনুষ্ঠানিক উৎপাদনে আসে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান কেরুর হ্যান্ড স্যানিটাইজার। যার নাম দেওয়া হয় কেরুজ হ্যান্ড স্যানিটাইজার।
কেরুর হ্যান্ড স্যানিটাইজার বাজারে আসার খবরে সারা দেশে রীতিমত হইচই পড়ে যায়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার বোতলের অর্ডার পেতে থাকেন কেরু কর্তৃপক্ষ। ঠিক এমন সময়ে ২৪ মার্চ কেরুর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহেদ আলী আনছারীর বদলির আদেশ হয়। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হলে দেশব্যাপি তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও খবরটি নিয়ে শুরু হয় সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের নিয়ে আলোচনা সমালোচনা।
জাহেদ আলী আনছারীও তার নিজ আইডিতে বদলির আদেশে মর্মাহত হয়ে পোস্ট দেন। তাতে তিনি লেখেন কি এমন পরিস্থিতি হল যে আমাকে বদলি করা হলো। আর মাত্র কয়দিনই বা ছিলাম।
চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান চাইলেই তার করপোরেশনের অধীন যে কোনো কোম্পানির এমডি বা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে বদলি করতে পারেন। কিন্তু দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে এখনই কেন কেরুর এমডিকে বদলি করতে হল, সেই প্রশ্ন অনেকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তোলেন।
তবে কেরুর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বদলির আদেশ স্থগিতের খবরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন কেরুর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্মচারীরা। তারা জানান বর্তমান এমডির চাকুরীর শেষ সময় চলছে। আগামী মাসের ১৯ এপ্রিল তিনি অবসরে যাবেন। এমন মুহুর্তে তার বদলির খবর আমাদেরকে মর্মাহত করেছিল।
কেরু এ্যান্ড কোম্পানীর মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) শেখ শাহাবুদ্দিন জানান, আমরা যখন ঝুঁকি নিয়ে দেশে প্রথমবারের মত হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদনে গিয়েছিলাম। ঠিক সেই সময়ে এমডির বদলির খবরে কর্তকর্তাদের পাশাপাশি সাধারণ শ্রমিকদের মধ্যেও স্থবিরতা চলে এসেছিল। মোটা দাগে বলতে ভাল কাজে আমাদের মন ভেঙে গিয়েছিল। তিনি এমডির বদলির আদেশ স্থগিতের খবরে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান ও শিল্প সচিবের প্রতি ধন্যবাদ জানান।
বদলির আদেশ স্থগিতের খবর নিশ্চিত করে কেরু এ্যান্ড কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদ আলী আনছারী জানান, করোনার ভয়াবহ প্রভাবে দেশে এক সংকটময় পরিস্থিতি চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে করোনা প্রতিরোধে সব ধরণের প্রচেষ্টা গ্রহন করা হলেও দেশে সংকট তৈরি হয়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের। সুযোগ বুঝে বেশ কিছু কোম্পানীও দাম হাকিয়ে বসেছে কয়েকগুন। এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের স্বার্থ ও সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আমরা হ্যান্ড স্যানিটাইজারের তৈরির উদ্যোগ গ্রহন করি। গত কয়েকদিনের আমাদের রসায়ন বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা রাতদিন পরিশ্রম ও গবেষনা করে হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদনে সক্ষম হয় আমরা। কিন্তু উৎপাদনের পরের দিনই বদলির আদেশে ভেঙ্গে পড়েছিলাম। মর্মাহত হয়েছিলাম। কিন্তু বদলির আদেশ স্থগিতের খবরে দারুণ খুঁশি আমি। এখন চাকুরীর শেষ দিনটি স্মৃতিময় কেরুতেই থাকতে পারবো।
প্রসঙ্গত. ১৯৩৮ সাল থেকে চিনির পাশাপাশি উন্নতমানের এ্যালকোহলসহ ৫টি পণ্য তৈরি করে আসছে কেরু এ্যান্ড কোম্পানী। গত ২৩ মার্চ দেশে প্রথমবারের মত হ্যান্ড স্যানিটাইজারের উৎপাদনে আসে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু একদিন পরই কোম্পানির এমডি জাহেদ আলী আনছারীর বদলির আদেশ আসে। তার জায়গায় দায়িত্ব পান সদর দপ্তরের আইন শাখার মহাব্যবস্থাপক আবু সাঈদ।
# ফাইজার (৩১-০৩-২০)