অনলাইন সংস্করণ: করোনাভাইরাসের নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আশাবাদী চিকিৎসকরা। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের চিকিৎসায় নতুন ব্লাড-প্লাজমা থেরাপিসহায়ক হতে পারে বলে জানিয়েছেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ইয়ান লিপকিন। বৃহস্পতিবার ফক্সনিউজের ‘লো ববস টুনাইট’ শোতে এসে তিনি এই আশাবাদের কথা তুলে ধরেন। নিউরোলজি অ্যান্ড প্যাথলজি বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, ভাইরাসটির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি নতুন উপায় খুঁজে বের করতে গত জানুয়ারিতে তিনি চীন সফর করেন। সম্প্রতি একটি গবেষণাপত্র পেয়েছেন তিনি। যাতে দেখা গেছে, রোগীরা সফলভাবেই প্লাজমা-থেরাপি চিকিৎসা নিয়েছেন। অর্থাৎ যারা এই থেরাপি নিয়েছেন তারা সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
ডা. ইয়ান লিপকিন বলেন, জানুয়ারির শেষ দিকে একটি বিশেষ কারণে আমি চীনে গেছি। সেটি হচ্ছে– করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় তারা কী করছেন, সেটি খুঁজে বের করতে। এক সপ্তাহের কাছাকাছি সময় আগে আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে একটি পেপার পেলাম। তাতে প্লাজমা থেরাপিতে ১০ রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, এ পদ্ধতিতে করোনাভাইরাস রোগে সেরে ওঠা ব্যক্তির কাছ থেকে অ্যান্টিবডি নেয়া হয়। ১০ জনের দেহে তা প্লাজমা থেরাপির মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়। তারা সবাই এখন সুস্থ আছেন।
‘এটা একেবারে অবশ্য নতুন পদ্ধতি নয়। অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের আগে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হতো। এটি এ ক্ষেত্রেও কাজ করেছে।’ করোনাভাইরাস থেকে সেরে ওঠা স্বেচ্ছাসেবীদের প্লাজমাদাতা হিসেবে সহায়তার জন্য এগিয়ে আসতে বলা হবে বলেও তিনি জানান। এই চিকিৎসক বলেন, এমন অনেক লোক আছেন, যারা এ নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন। ‘এতে আমরা অন্যান্য নাগরিক, সংক্রমিত অন্যান্য ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য এটি ব্যবহার করতে পারি। এটি এমন একটি বিষয়, যা অসুস্থতা ও মৃত্যুর ক্ষেত্রে বিশাল পার্থক্য তৈরি করে। কারণ এটি এখন পর্যন্ত উপলব্ধ উপায়।’ এই সংক্রামক বিশেষজ্ঞ বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, এক ব্যক্তির কাছ থেকে গৃহীত প্লাজমা দিয়ে তিনজন রোগীকে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। এটি রক্তদান করার মতো প্রক্রিয়া নয়। এটি সহজ ও ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত কার্যকর সমাধান হতে চলেছে। এদিকে মহামারী করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে টালমাটাল বিশ্ব। দিন যত গড়াচ্ছে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। পৃথিবীর সব দিকে শুধু লাশ আর লাশ। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৯০ জনে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা জরিপকারী সংস্থা ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য অনুযায়ী, নভেল করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন বিশ্বের ৫ লাখ ৩২ হাজার ২৭৯ জন। এদের মধ্যে বর্তমানে ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৮১১ জন চিকিৎসাধীন এবং ১৯ হাজার ৩৫৭ জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন। এ হিসাবে প্রায় ৯৫ শতাংশ রোগী মধ্যবর্তী অবস্থায় রয়েছেন এবং ৫ শতাংশ রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ছাড়া করোনাভাইরাস আক্রান্ত ১ লাখ ২৪ হাজার ৩৪৯ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ হিসাবে করোনায় আক্রান্ত প্রায় ৮৪ শতাংশ রোগী সুস্থ হয়েছেন এবং মারা গেছেন ১৬ শতাংশ মানুষ। ওয়ার্ল্ডওমিটার বলছে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৯৯ দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস।আর নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বার্তা সংস্থা বিএনও নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ১৯৯ জনে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ লাখ ৩৮ হাজার ১৮৫ জন। এ ছাড়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এক লাখ ২৪ হাজার ৮৮ জন। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হালনাগাদ তথ্য সামনে এনে আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার মানুষ। কেবল বৃহস্পতিবারই ৬০ হাজারের বেশি মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এ ভাইরাসে মৃ্ত্যুর সংখ্যা ইতিমধ্যে ২৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মহামারী করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্র এখন সবার ওপরে। বিশ্বের যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি করোনা রোগী এখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশে।