মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: সারাবিশ্বের পাশাপাশি দেশেও নিজের আধিপত্য বিস্তার করেই চলেছে নোভেল করোনাভাইরাস। বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। সংক্রমণ রুখতে সারাদেশে আজ থেকে ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জরুরি কোনো কাজ ছাড়া যেন কেউ বাসা থেকে না বের হন। সরকার ‘লকডাউন’ ঘোষণা না করলেও এই সময়ে সড়ক, নৌ ও আকাশ পথে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধের ঘোষণা এসেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর কাছ থেকে। বিদেশফেরতসহ তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থাপনা ও সবার জন্য পালনীয় ‘সামাজিক দূরত্ব’ নিশ্চিত করতে প্রশাসনের সহায়তায় রয়েছে সশস্ত্রবাহিনী। অবশ্য এর আগেই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আলেম-ওলামারা মসজিদে যাতায়াতেও সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন। ফলে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের দিন থেকে পরবর্তী ১০ দিনের জন্য দেশ কার্যত চলে যাবে ‘লকডাউনে।’ গত সোমবার (২৩ মার্চ) বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সরকারের পক্ষ থেকে এ সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে সারাদেশে ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। যা ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত কার্যকর হবে। এসময় সবাইকে যার যার মতো করে ঘরে অবস্থান করতে বলা হয়, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে বলা হয়। এ আদেশ অমান্য করলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানানো হয়। এসময় আরও জানানো হয়, খাদ্য সরবরাহ, ব্যাংকিং কার্যক্রম, ফার্মেসি ও হাসপাতালসহ জরুরি সেবা এ নির্দেশনার বাইরে থাকবে।
গতকাল বুধবার সকাল থেকেই চুয়াডাঙ্গার চারটি উপজেলার সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। সকাল থেকেই এসব এলাকার ওষুধ, খাদ্যদ্রব্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ছাড়া সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো। রাস্তাঘাটও ছিলো অনেকটাই ফাঁকা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। এর আগে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসন ও দোকান মালিক সমিতি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়।
দামুড়হুদা ব্যুরো জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে সরকারি নির্দেশনা পালন করেছেন দামুড়হুদা বাজারের ব্যবসায়ীবৃন্দ। ওষুধ, মুদিদোকান, কাঁচাবাজার খেলা থাকলেও অন্যান্য সব ধরনের দোকানপাট ছিলো বন্ধ। দোকানপাট বন্ধ থাকায় চা পানকারিদের এ-দোকান ও-দোকান ঘুরেও পান করতে পারেননি। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে দামুড়হুদা বাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাজারের সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ। ব্যস্ততম বাজারে শুনশান নিরবতায় ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে খুলতে শুরু করে গুটি কয়েক দোকান। নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকানপাটের মধ্যে ওষুধ, মুদিদোকান, কাঁচাবাজারসহ বিকাশ ও ফ্লেক্সিলোডের দোকান খোলা থাকলেও বন্ধ ছিলো চায়ের দোকান, স্টুডিও, ফার্নিচারের দোকান, হোটেল, কসমেটিক্স, ইলেট্রনিক্স, মোটরসাইকেল গ্যারেজসহ অন্যান্য সব ধরনের দোকানপাট। অন্যান্য দিনের ন্যায় বিকেলে দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ডস্থ সাপ্তাহিক হাটে কাঁচামালসহ সবজি বেচাকেনা করা হয়েছে। তবে বাজার এলাকায় দিনভর লোকজনের উল্লেখ্যযোগ্য উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। অনেকেই মানছেননা হোম কোয়ারেন্টাইন। বিশেষ কাজ না থাকলেও শুধুমাত্র চা-সিগারেট খাওয়ার জন্য বাজারে ছুটে আসেন অনেকেই।
দর্শনা অফিস জানিয়েছে, দর্শনা শহরের সকল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আগামী ৪ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার ছিলো বন্ধের প্রথম দিন। দফায় দফায় নির্বাহী ম্যাজিস্টেডের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও পুলিশের টহল অব্যাহত ছিলো। সরকার ঘোষিত ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকানপাট ছাড়া সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রাখা হয়েছে বন্ধ। ফলে খানেকটা হঠাৎ করেই দর্শনা শান্ত শহরে পরিণত হয়। দর্শনা-মুজিবনগর সড়কে যেমন যান-বাহন চলাচল ছিলো খুবই কম, তেমনি দর্শনা বাসস্ট্যান্ড এলাকা ছিলো অনেকটা জনমানব শূন্য। রেল বাজারসহ বেশ কয়েকটি স্থানে মাস্ক বিক্রির হিড়িক ছিলো। তবে মাস্ক বিহীন চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে বহু পথচারীকে। এ ক্ষেত্রে পুলিশি পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছে সচেতন মহল।
কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাব প্রতিরোধে দামুড়হুদা উপজেলার ঐতিহ্য কার্পাসডাঙ্গার বাজার লকডাউন ঘোষনার পর বাজারের সকল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিকরা তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। গতকাল বাজার দোকান মালিক সমিতির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষনা অনুযায়ী কিছু দোকান খোলা থাকলেও অধিকাংশ দোকানি এ নির্দেশ পালন করে। তবে এ নির্দেশের মধ্য জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ ফার্মেসি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিক্রেতা ও মুদি দোকান খুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাজার দোকান মালিক সমিতি। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার পরে কার্পাসডাঙ্গা বাজার অনেকটাই ফাঁকা হয়ে পড়ে। বাজার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এমদাদুল হক ইমন ও সম্পাদক মিঠু বিশ্বাসকে বাজারের সকল স্থানে দিনব্যাপী ঘুরতে দেখা গেছে।
কালীগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে জনসমাগম ঠেকাতে অভিযানে নেমেছে প্রশাসন। গতকাল বুধবার সকাল থেকেই এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এদিকে করোন ভাইরাস প্রতিরোধে শহরের প্রায় সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ দেখা গেছে। এসময় কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবর্ণা রাণী সাহা উপজেলার মেইন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে কাজ না থাকা ব্যক্তিদের বাড়িতে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এসময় তিনি অনেক দোকান ও অফিস বন্ধ করতে সকলকে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হবেন। করোনা প্রতিরোধে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।
এদিকে সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর অনেকেই তড়িঘড়ি করে ঢাকা ছেড়েছেন। বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালে ছিলো উপচেপড়া ভিড়। এ সাধারণ ছুটি যে অন্য সময়ের সাধারণ ছুটির মতো নয়, সে বিষয়টিই মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। সরকারে নির্দেশনা অনুযায়ী সবাইকে বাসায় থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পরিষ্কার বলতে চাই, এই ছুটি উৎসব করার জন্য নয়, করোনা প্রতিরোধের জন্য। এটি কোনো উৎসবের জন্য দেয়া হয়নি। করোনাভাইরাস প্রতিরোধের মূলমন্ত্র যার যার ঘরে থাকুন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করুন। তার জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি। এর মানে হচ্ছে এই ছুটির মধ্যে সবাই বাসায় থাকবেন। এদিকে মসজিদে মুসল্লিদের উপস্থিতি সীমিত করার পক্ষে মত দিয়েছেন আলেম-ওলামারা। মঙ্গলবার ইসলামিক ফাউন্ডেশনে এক বৈঠকে আলেম-ওলামরা এমন মত দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী জনসংযোগ কর্মকর্তা সায়লা শারমিন।
করোনার বিস্তার রোধে পুলিশ কাজ করছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি পাঠায় পুলিশ সদর দফতর। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে বাংলাদেশ পুলিশের সব ইউনিট সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। সময়ে সময়ে সরকার যে নির্দেশনা দিচ্ছে, তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করছেন বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা। এরই মধ্যে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বিদেশফেরত প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থগিত থাকলেও খাদ্যপণ্যের সরবরাহ যেন স্বাভাবিক থাকে, সেদিকেও মনোযোগ রয়েছে সরকারের। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র তথ্য অফিসার ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আব্দুল লতিফ বকসীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনাভাইরাসের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সুষ্ঠু সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখাসহ বাজার মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে টিসিবি এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।