স্টাফ রিপোর্টার: পাকিস্তানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কসহ সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবিতে করার দাবিতে দেশটির দূতাবাসের দিকে গণজাগরণ মঞ্চের মিছিলে লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। এ সময় কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। সরকারকে বেধে দেয়া ২০ ঘণ্টা সময় পার হওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মঞ্চেরকর্মীরা পাকিস্তান দূতাবাসের দিকে অগ্রসর হলে গুলশান-২ নম্বর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারকে পিটিয়ে অজ্ঞান করেছে পুলিশ। তাকে গুলশান ল্যাবএইড হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে তাকে সেখান থেকে সরিয়ে প্রাইভেট কারে করে অন্যত্র নেয়া হয়েছে। আবুল কালাম আজাদ (বীর বিক্রম) নামে আরেকজনকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে। একসময় গণজাগরণের কর্মী শাম্মি আক্তার, শেখ সালমা, প্রয়াত হুমায়ুন আজাদের ছেলে অনন্য আজাদ, রওশন আরা মিতা ও জাহাঙ্গীরকে আটক করে পুলিশ ভ্যানে করে নিয়ে যেতে দেখা যায়। এছাড়া মঞ্চের ১৫ কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় ইমরান এইচ সরকার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ, আমাদের ১৫ জন কর্মীকে আটক করা হয়েছে। নারীকর্মীদের পুরুষ পুলিশ আটক করেছে এটা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। একটি গণতান্ত্রিক দেশের জনগণের আন্দোলনে পুলিশ বাধা দিতে পারে না। এরপরও আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ গণজাগরণের অনেক কর্মীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে। অনেককে বন্দুকের বাট দিয়ে পিটিয়েছে।
গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও শহীদের স্বজনরা জানান, এরপর ইমরান এএইচ সরকার সাংবাদিকদের ব্রিফিং করার চেষ্টা করলে আবার চড়াও হয় পুলিশ। এ সময় ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে পুলিশ এলোপাতাড়ি লাঠিচার্জ শুরু করে। এতে ইমরান ও আবুল কালাম আজাদ (বীর বিক্রম) গুরুতর আহত হন। ইমরান অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে ল্যাবএইড হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। আরো অনেক কর্মী লাঠিচার্জে রক্তাক্ত হয়েছেন। হাইকমিশন ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নেয়া সংস্কৃতি কর্মী ও সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য তারানা হালিম সাংবাদিকদের বলেন, আমার ধারণা করছি সরকার এটা করেনি। কোন পুলিশ অফিসার এটা করেছে, কার নির্দেশে এটা করা হয়েছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে। তবে এ ব্যাপারে এডিশনাল ডিআইজি শাহাবুদ্দিন বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে সিস্টেমেটিক্যালি তাদের সরিয়ে দিয়েছি। পাকিস্তানের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্নের ২০ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শেষে বিকেল ৩টা থেকে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা মিছিল নিয়ে গুলশান ২ নম্বরে সমবেত হতে থাকে। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গণজাগরণের কর্মীরা পাকিস্তান হাইকমিশনের সামনে যেতে চাইলে তাতে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় তারা বাধা অপেক্ষা করে সামনে এগুতে থাকলে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা শুরু করে।
গণজাগরণের কর্মসূচিতে পুলিশ চড়াও হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেল ৩টায় দেশব্যাপি বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম উদ্যোক্তা মারুফ রসুল বলেন, পুলিশ আমাদের জাতীয় পতাকাকে পদদলিত করেছে। এটা জাতি ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অবমাননাকর। তিনি বলেন, আজকের আন্দোলন ছিলো আমাদের অহিংস আন্দোলন। যখন থেকে গণজাগরণ সৃষ্টি তখন থেকেই আমাদের আন্দোলন অহিংস, আমরা কখনোই সহিংস হইনি। কাদের মোল্লার ফাঁসির পর পাকিস্তান রাষ্ট্র যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে তার বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ জানিয়ে অহিংসতার ভিত্তিতেই পাকিস্তান অ্যাম্বাসি অভিমুখে পদযাত্র কর্মসূচি দিয়েছিলাম। এটাই ছিলো আমাদের প্রতিবাদের ভাষা। মারুফ বলেন, বুধবারও পুলিশ আমাদের ওপর নির্যাতন করেছে। অবশ্য সে জন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ক্ষমাও চেয়েছিলো। কিন্তু আজকে যখন আমরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলাম ঠিক তখনই হঠাত করে পুলিশ আমাদের ওপর চড়াও হয়। এ জন্য আমার এর তীব্র নিন্দা জানাই। তিনি বলেন, রাষ্ট্র যদি আমাদের সাথে লাঠিপেটা আচরণে কথা বলে তাহলে গণজাগরণ মঞ্চও বসে থাকবে না। গণজাগরণ মঞ্চও বিপ্লবের ভাষায় কথা বলবে।