চায়ের দোকানের কর্মচারী রাজিব এখন স্কুলছাত্র

দামুড়হুদা অফিস: পিতার মৃত্যুর ১০ মাসের মধ্যে শিশু রাজিবকে (৮) রেখে মা দ্বিতীয় বিয়ে করেছে প্রতিবেশী এক যুুবকের সাথে। ক্ষুধার তাড়নায় শিশু রাজিবকে জনৈক ব্যক্তি দিয়ে গেছে দামুড়হুদার একটি চায়ের দোকানে কর্মচারীর কাজে। যাতে তার ক্ষুধার কষ্ট লাঘব হয়।
দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের বাঘাডাঙ্গা গ্রামের শুকুর আলি দম্পতির ঘরে ৮ বছর আগে জন্ম নেই শিশু রাজিব। শিশু রাজিবকে স্কুলে ভর্তিও করে দেন পিতা। স্কুল থেকে রাজিব বাড়ি ফিরে দেখে তার পিতা মারা গেছে। সেই থেকে তার আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। পিতার মৃত্যুর ১০ মাস পর শিশু রাজিবকে রেখে গর্ভধারিনী মা করেছে প্রতিবেশী এক যুবকের সাথে দ্বিতীয় বিয়ে। শিশু রাজিব তখন অসহায় হয়ে পড়ে। ৮ বছর বয়সী রাজিবকে দেখাশোনার আর কেউ নেই। অবুঝ শিশু রাজিব রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে থাকে কেউ কিছু দিলে খায় না দিলে না খেয়ে থাকে। বেশ কিছু দিন পর জনৈক ব্যবসায়ী ব্যবসার কাজে বাঘাডাঙ্গা গ্রামে গেলে তার দেখা হয় অবুঝ শিশু রাজিবের সাথে। সে রাজিবের জীবন কাহিনী শুনে তাকে সাথে করে নিয়ে আসে দামুড়হুদা উপজেলা সদরের নাসিরের চায়ের দোকানে। শিশু রাজিব চায়ের দোকানের কোনো কাজই জানে না। দোকানে বসে থাকা দোকানির হুকুম শোনা। সে দামুড়হুদা আসার পর অনেক কথা শিখেছে। নাসিরের চায়ের দোকানের চা পিয়াসুরা তাকে অনেক ভালোবাসে ও আদর করে ডাকে। রাজিবের বিষয়টি দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানতে পেরে চা দোকানি নাসিরের সাথে তাকে নিয়ে কথা বলেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিদ্ধান্ত নেন তাকে স্কুলে ভর্তি করার। নির্বাহী অফিসার দশমী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন রাজিবকে। সেই সাথে তার ব্যাগ, বই, খাতা, কলম, স্কুল ড্রেস ও জুতার ব্যবস্থাও করে দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। এসব জিনিসপত্র পেয়ে রাজিব আল্লাদে আটখানা হয়ে পড়ে। রাজিব এখন বড্ড খুশি মনে দামুড়হুদা দশমী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ম শ্রেণিতে পড়ছে। রাজিব এখন নিয়মিত স্কুলে যায়। স্কুল থেকে ফিরে দুপুরের পর দোকানে এসে সামান্য হুকুম হাকাম শুনে। রাতে আবার স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ে রাজিব। প্রবাদ আছে কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে। ঠিক তেমনই রাজিব একদিন তার দু হাতকে কর্মের হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তুলবে। একসময় সে আর কোনো দোকানির বকুনি শুনবে না। একদিন সে প্রতিষ্ঠিত হয়ে নিজে দোকান দিবে এমনটিই প্রত্যাশা সবার!!!
এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম মুনিম লিংকন বলেন, রাজিবের মতো বিভিন্ন দোকানে কর্মরত চারটি শিশুকে উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছি। সেই সাথে তাদের পোশাক, জুতা, বই, খাতা ও কলমসহ যাবতীয় জিনিসের ব্যবস্থা করেছি। নিয়মিত তাদের দেখা শোনা করছি। পরবর্তীতে যদি কোনো কিছুর প্রয়োজন হয় সেটারও ব্যবস্থা করা হবে। এরকম সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের যদি আমরা সমাজের সচেতন স্বাবলম্বী মানুষগুলো দায়িত্ব নিই তাহলে আর একটা শিশুও ঝড়ে পড়বে না। তারাই আর পাঁচটা শিশুদের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করবে। তারা একদিন প্রতিষ্ঠিত হবে দেশ ও সমাজের কল্যাণে কাজ করবে।